নেটফ্লিক্সের নারকোস সিজন থ্রি ‘তে যারা এজেন্ট হাভিয়ের পেনিয়া ও কালি কার্টেলের হৃদকম্পন বাড়িয়ে দেয়া দ্বৈরথ দেখেছেন, তারা নিশ্চয়ই একবাক্যে স্বীকার করে নিয়েছেন, ড্রাগস ও মাফিয়াদের বিরুদ্ধে এই লড়াই যেন আরো বহুদূর রুপালী পর্দায় আমরা দেখতে পাই। শেষ এপিসোডে সূর্যের অস্ত যাবার সাথে সাথে মেক্সিকান বোটের দিকে অপলক চেয়ে থাকা হাভিয়েরের দৃষ্টি যেন আমাদের সেরকম কিছুর একটা বার্তা দেয়। তবে এখানে বেশ কিছু প্রশ্ন রয়ে গিয়েছে। যেমন, হাভিয়ের পেনিয়াকে আবার সিজন ফোরে দেখা যাবে কি না, আগামী যুদ্ধটা কার বিরুদ্ধে হতে যাচ্ছে ইত্যাদি ইত্যাদি। যে প্রশ্নটি সকল কিছুকে ছাপিয়ে যাচ্ছে, তা হল, নারকোস সিজন ফোর আসবার সম্ভাবনা আসলে কতটুকু! অবাক হবার কিছু নেই। কথাটি সত্য।
কার্লোস মুনোজ পোর্তাল। নামটি আপনাদের কাছে পরিচিত না হলেও নারকোস সিরিজ নির্মাতাদের কাছে পরম আরাধ্য একটি নাম ছিল। ছিল বলছি কারণ, গত মাসের শেষের দিকে মেক্সিকোর সান বারতোলো অ্যাকটোপান স্টেটের কাছে কার্লোসের গুলিবিদ্ধ লাশ পাওয়া যায়। প্রশ্ন হচ্ছে, কার্লোস আসলে কে?
নারকোস সিজন থ্রি পর্যন্ত যারা দেখেছেন, তারা একটা বিষয় লক্ষ্য করলে দেখবেন যে কাহিনীগুলোর বিন্যাস সাজানো হয়েছে ঘটনাগুলো যে জায়গায় ঘটেছে, সে জায়গাকে কেন্দ্র করে। অর্থাৎ, দর্শক যেন কার্টেল ও তাদের কার্যক্রম যেসকল জায়গায় ঘিরে হয়েছিল, তার একটু আসল ফ্লেভার পায়, রিলেট করতে পারে। কার্লোস মূলত একজন ‘লোকেশন স্কাউট’ ছিলেন, যার কাজ হচ্ছে নির্মাতাদের প্রকৃত ঘটনা সংঘটনের স্থানগুলো খুঁজে বের করা। ধারণা করা হচ্ছে, নারকোস সিজন ফোরের কাহিনীর বিস্তার ঘটবে কুখ্যাত মেক্সিকান ড্রাগলর্ড আমাদো কারিলহো ফুয়েন্তেসকে ঘিরে। খুয়ারেজ কার্টেলের এই ড্রাগলর্ডকে বলা হত ‘লর্ড অব দ্য স্কাই’। কোকেন, হেরোইন ইত্যাদি ড্রাগের চালান হত আকাশপথের মাধ্যমে। সে কারণেই হয়ত তাকে এই উপাধি দেয়া হয়েছিল। ১৯৯৭ সালের জুলাই মাসে মেক্সিকোর সান্তা মনিকা হাসপাতালে ফুয়েন্তেস মারা যান। মানি লন্ডারিংএর সাথেও জড়িত ছিলেন কুখ্যাত এই ড্রাগলর্ড।
কার্লোসের মৃত্যুর কারণে এবার নেটফ্লিক্স কর্তৃপক্ষ চিন্তায় পড়েছেন এই সিরিজের কলাকুশলীদের নিরাপত্তাজনিত ব্যবস্থা নিয়ে। মেক্সিকোতে ড্রাগ ওয়্যার অহরহ সংঘটিত হচ্ছে তা পত্র পত্রিকার পাতা খুললেই জানা যায়। অনেকে ধারণা করছেন, মেক্সিকোর এই কালো জগতের চিত্র যাতে রুপালী পর্দায় দর্শকের সামনে চলে না আসে, সে কারণের কার্লোস খুন হয়েছেন। চিন্তিত হয়ে উঠেছেন প্রযোজকেরা।
কার্লোসের মৃত্যুতে নেটফ্লিক্স জানায় যে তিনি খুবই দক্ষ একজন লোকেশন স্কাউট ছিলেন। আনাচে কানাচে সকল কিছু ছিল তার নখদর্পণে। মৃত্যুর কারণ এখনো ধোঁয়াশা রয়েছে তবে নির্দেশটা মেক্সিকান কার্টেলের দিকেই ওঠে। গত জুলাই মাসের একটি রিপোর্টে বলা হয়, মেক্সিকোতে জনবসতি পূর্ণ স্থানগুলোতে প্রতি হাজারে অন্তত বারোজন খুন হয়ে থাকেন। পুলিশের রিপোর্ট অনুযায়ী বলা হয়েছে, এই খুনে কোন ধরণের প্রত্যক্ষদর্শী নেই এবং কেউ সাক্ষী হতেও রাজি হচ্ছে না।
গেম অব থ্রোনস, নারকোস এই ধরণের বড় বাজেটের সিরিয়ালগুলোকে ঘিরে প্রচুর চাকরির সমাবেশ ঘটে ও শত শত মানুষের নিশ্চিত কর্মসংস্থান হয়ে থাকে। এখন প্রযোজকেরা চিন্তায় পড়ে যাচ্ছেন, সিজন ফোর তারা ফুয়েন্তেসকে নিয়েই করবেন নাকি কাহিনী আবার সেই কলাম্বিয়াতেই ফিরে যাবে, যেখানে শুরু হয়েছিল। এছাড়াও কলাকুশলীদের জীবনের নিরাপত্তা তো আছেই।
সবদিক বিবেচনা করেই ঠিক করবেন তারা কি করা যায়। অক্টোবরের, অর্থাৎ এই মাসের শুরুর দিকে নেটফ্লিক্স কর্তৃপক্ষ আশ্বস্ত করেছেন যে নতুন লোকেশন স্কাউট বাছাই প্রক্রিয়া চলছে এবং তাদের দৃঢ় বিশ্বাস সিজন ফোরের শ্যুটিং তারা মেক্সিকোতেই করতে পারবেন। আর যদি তা না হয়, তাহলে কলাম্বিয়াতে ফিরে যাবার অপশন তো রয়েছেই। তবে দর্শকদের জন্য কিছু খারাপ খবরও শুনিয়েছেন তারা। নতুন সিজনে হয়ত এজেন্ট হাভিয়ের পেনিয়াকে আর দেখা যাবে না।
ডিইএ থেকে অবসর নেয়া হাভিয়েরের মত জনপ্রিয় এই চরিত্র থেকে অবসর নিতে চাচ্ছেন পেড্রো পাস্কেল। তার জায়গায় আমরা আরো নতুন কিছু ডিইএ এজেন্ট দেখতে পাবো। সাথে থাকছে এফবিআই এর সংযুক্তি। তবে কোন কিছুই নিশ্চিত নয়। রেজিগনেশন লেটার হাতে পাবার পর যেমন হাভিয়েরকে প্রশ্ন করা হয়, “What else is a guy like you going to do?”
ঠিক তেমনি আবার সিরিজের শেষ দৃশ্যে পেনিয়া তার বাবাকে বলেন, “I’ve done enough. I am through.”
তবে একটা কথা কিন্তু সত্যি। হাভিয়ের থাকুক বা না থাকুক, রুপালী পর্দায় কুখ্যাত সব ড্রাগ মাফিয়াদের পতনের আরো কাহিনী হয়ত আমরা আশা করতেই পারি। তা নেপথ্যে যেই থাকুক না কেন।
আজ আর নয়। প্রিয়লেখার সাথেই থাকুন।