বাংলার সংস্কৃতিতে কীভাবে এলো ভাইফোঁটা উৎসব? – Creative IT Blog
Notice: Trying to access array offset on value of type bool in /home1/cjsmpham/_addon/priyolekha.com/wp-content/plugins/taqyeem/taqyeem.php on line 611

Notice: Trying to access array offset on value of type bool in /home1/cjsmpham/_addon/priyolekha.com/wp-content/plugins/taqyeem/taqyeem.php on line 611

Notice: Trying to access array offset on value of type bool in /home1/cjsmpham/_addon/priyolekha.com/wp-content/plugins/taqyeem/taqyeem.php on line 611

Notice: Trying to access array offset on value of type bool in /home1/cjsmpham/_addon/priyolekha.com/wp-content/plugins/taqyeem/taqyeem.php on line 611

Notice: Trying to access array offset on value of type bool in /home1/cjsmpham/_addon/priyolekha.com/wp-content/plugins/taqyeem/taqyeem.php on line 611

Notice: Trying to access array offset on value of type bool in /home1/cjsmpham/_addon/priyolekha.com/wp-content/plugins/taqyeem/taqyeem.php on line 611
Home / অন্যান্য / বাংলার সংস্কৃতিতে কীভাবে এলো ভাইফোঁটা উৎসব?

বাংলার সংস্কৃতিতে কীভাবে এলো ভাইফোঁটা উৎসব?

জগতের সবচেয়ে পবিত্র সম্পর্ক হলো ভাই বোনের সম্পর্ক। এই সম্পর্ক চির শাশ্বত ও অমলিন। জন্মের পর থেকেই ভাইবোনের মধ্যে এই অমূল্য সম্পর্ক সৃষ্টি হয়। এই সম্পর্কে বেঁচে থাকে ঝগড়া, খুনসুটি; আবার এই সম্পর্কেই জড়িয়ে থাকে ভালোবাসা। একজন মানুষের সব ভালো লাগা বা মন্দ লাগার খবর ভাই বোনের চেয়ে ভালো আর কেউ জানে না। কারণ এই সম্পর্ক হচ্ছে শর্তহীন। এই শর্তহীন সম্পর্কে ক্রমাগত চলতে থাকে মান অভিমানের পালা। যেকোনো বিপদে আপদে ভাইবোনই তো সবার আগে এগিয়ে আসে। তাই ভাইবোনের এই অফুরন্ত ভালোবাসার সম্পর্ককে বাঁচিয়ে রাখতে পালন করা হয় ভাইফোঁটা উৎসব।

ভাইফোঁটা উৎসবের কেতাবি নাম ভ্রাতৃদ্বিতীয়া অনুষ্ঠান। বাংলা পঞ্জিকা অনুসারে কালীপূজার দুই দিন পর অর্থাৎ কার্তিক মাসের শুক্লদ্বিতীয়া তিথিতে ভাইফোঁটা উৎসবটি অনুষ্ঠিত হয়। বোনেরাই যে কেবল ভাইকে ফোঁটা দেয় তা কিন্তু নয়। অনেকসময় নাতনী দাদুকে কিংবা দিদা বা ঠাকুরমা তাদের নাতিদের কপালে ফোঁটা দিয়ে থাকে। ভাইফোঁটা উৎসব কেবল আমাদের দেশেই নয়, সারা ভারতবর্ষে ভাইফোঁটা উৎসব ব্যাপক জনপ্রিয়। পশ্চিম ভারতে উৎসবটি “ভাইদুজ” নামে পরিচিত। আবার মহারাষ্ট্র, কর্ণাটক অঞ্চলে উৎসবটি “ভাইবিজ” নামে জনপ্রিয়। নেপাল ও দার্জিলিং অঞ্চলে এই উৎসবকে “ভাইটিকা” বলা হয়।নেপালে বিজয়া দশমীর পর এটিই সবচেয়ে বড় উৎসব। পশ্চিম ভারতে পাঁচদিনের দীপাবলি উৎসব শেষ হয় “ভাইদুজ” পালনের মধ্য দিয়ে।

ভাইফোঁটা সৃষ্টির নেপথ্যেও কিছু কাহিনী প্রচলিত আছে। পুরাণমতে এসকল কাহিনী থেকেই সৃষ্টি হয়েছে।

যম ও যমুনার কাহিনী:

অনেককাল আগের কথা, সূর্যদেব বিশ্বকর্মা কন্যা সঙ্গাকে বিবাহ করেছিলেন। কিছুকাল পর সঙ্গার কোল জুড়ে আসে যমজ সন্তান। তাদের নাম দেয়া হলো যম ও যমুনা। যমের বোন বলে যমুনাকে অনেকে যমীও বলতো। তাঁরা একসাথেই বড় হতে লাগল। যমুনা ছিল চঞ্চলা আর যম ছিল নিষ্ঠাবান। তাদের মধ্যেও ছিল ভীষণ মিল। এভাবেই দিন অতিক্রান্ত হতে লাগল। কিছুবছর কেটে যাওয়ার পর সঙ্গা তার স্বামী সূর্যদেবের শৌর্যের ভার বহন করতে ব্যর্থ হলেন। তখন তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন যে তিনি তার পিতৃগৃহে ফিরে যাবেন। কিন্তু সঙ্গা চিন্তা করলেন তিনি যদি ফিরে যান, তবে তো আর তার স্বামী সন্তানের দেখভাল করার মত কেউ থাকবে না। তাই তিনি তার অনুরূপ মূর্তি “ছায়া”কে রেখে গেলেন যাতে সূর্যদেব কিছু সন্দেহ করতে না পারে এবং সন্তানদের যাতে খেয়াল রাখতে পারে। ছায়া সঙ্গার অনুরূপ হলেও ছায়া পরিণত হলেন নিষ্ঠুর সৎমাতে। যম ও যমুনার সাথে নির্দয় আচরণ শুরু করলেন। ছায়া তার নিজের সন্তান জন্ম দিলেন এবং সূর্যদেবকে বুঝাতে লাগলেন যাতে যম ও যমুনাকে স্বর্গ থেকে বের করে দেয়া হয়। ছায়ার কথায় প্ররোচিত হয়ে সূর্যদেব যমুনাকে নিক্ষেপ করলেন পৃথিবীতে আর যমকে পাপ পূণ্যের হিসাব রাখার জন্য পাঠানো হলো মৃত্যুপুরীতে। পরবর্তীসময়ে সেটি যমলোক হিসেবে পরিচিত হয় এবং যম পরিচিত হলো মৃত্যুর দেবতা হিসেবে।

এভাবে বছরের পর বছর কেটে যেতে লাগলো। যমুনা পৃথিবীতে একজন সুদর্শন রাজপূত্রকে বিয়ে করে সংসার করতে লাগলো। কিন্তু প্রতি মুহূর্তেই তার ভাই যমের কথা মনে পড়তো। এদিকে যমও অনেকদিন বোনকে না দেখায় প্রতি সময়ই বোন যমুনাকে অনুভব করতো। একদিন যম ঠিক করলো যে বোন যমুনাকে দেখতে যাবে। এদিকে যমের আগমনের কথা শুনে যমুনা বিশাল ভোজের আয়োজন করলো। আর দিনটি যেহেতু ছিল দীপাবলির দুই দিন পর, যমুনার গৃহও আলোয় আলোকিত ছিল।

যম আসার পর যমুনা তাকে বন্ধনস্বরূপ কপালে ফোঁটা দিল এবং অনেক আদর আপ্যায়ন করলো। দীর্ঘকালের বিরতির পর তারা একসাথে অনেকসময় কাটালো।


শ্রীকৃষ্ণ এবং সুভদ্রার কাহিনী
:

যম যখন যমপুরীতে ফিরে যাওয়ার প্রস্তুতি নিলেন তখন বোন যমুনাকে জিজ্ঞাসা করলেন যে যমুনা তার জন্য এত আয়োজন করলো কিন্তু তিনি তো যমুনার জন্য কোনো উপহার আনলেন না। তাই তিনি যমুনাকে তার নিকট কোনো উপহার চাইতে বললেন। যমুনা তখন বললেন যে দীপাবলির দুই দিন পর অর্থ্যাৎ দ্বিতীয়া পক্ষে প্রত্যেক ভাই যাতে তাদের বোনকে মনে করে এবং সম্ভব হলে যাতে বোনের সাথে দেখাও করে। প্রত্যেক বোন এইদিনে তাদের ভাইয়ের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করবে। ভাইয়ের কল্যাণের জন্য ভাইয়ের দীর্ঘজীবন প্রার্থনা করবে। কথিত আছে এভাবেই ভাইফোঁটা বা ভাইদুজ উৎসবের প্রচলন ঘটে।

পৌরাণিক কাহিনী অনুসারে দীপাবলির দুইদিন পর শ্রীকৃষ্ণ নরকাসুর দানবকে বধ করেন। অসুর বধ শেষে শ্রীকৃষ্ণ তাঁর অতিপ্রিয় ভগিনী সুভদ্রার সাথে দেখা করতে যান। সুভদ্রা তখন তাঁকে ফুল আলো দিয়ে বরণ করেন। কৃষ্ণের কপালে বন্ধনস্বরূপ মঙ্গল তিলক এঁকে দেন এবং ভ্রাতা কৃষ্ণকে মিষ্টি খাওয়ান। অনেকে মনে করেন এভাবেই ভাইফোঁটা উৎসবের উৎপত্তি হয়েছে।

লক্ষ্মী ও বলির কাহিনী:

পুরাণ অনুসারে একদা মহাপরাক্রমশালী অসুর বলি বিষ্ণুদেবকে বন্দি করেন। কোনো দেবতাই নারায়ণকে বলির কবল থেকে নারায়ণকে উদ্ধার করতে পারছিলেন না। বার বার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হচ্ছিলেন তাঁরা। অবশেষে পাতাললোকে নেমে এলেন স্বয়ং শ্রীলক্ষ্মী। তিনি বলিকে ভাই হিসেবে স্বীকার করে বলির কপালে তিলক এঁকে দেন। ফলে তারা ভ্রাতা ও ভগিনীর অপরূপ বন্ধনে আবদ্ধ হন। ভ্রাতৃত্বের  বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে বলি লক্ষ্মীকে উপহার দিতে চান। লক্ষ্মী তখন উপহার হিসেবে চেয়ে নেন নারায়ণকে। ভগিনীর ইচ্ছা পূরণ করতে বলি মুক্ত করে দেন নারায়ণকে। অনেকে মনে করেন সেই থেকেই ভাইফোঁটা উৎসবের প্রচলন ঘটে।

ভাইফোঁটা পালনের কিছু রীতিনীতি আছে। বোন চন্দনকাঠ জল দিয়ে ঘষে, অনেকে আবার তাতে দই মিশ্রিত করে। পাশে প্রদীপ জ্বালানো থাকে। বোন তার কনিষ্ঠ আঙ্গুল দিয়ে ভাইয়ের কপালে তিনবার চন্দনের ফোঁটা দেয় আর সাথে সাথে উচ্চারণ করে-

ভাইয়ের কপালে দিলাম ফোঁটা

যমদুয়ারে পড়লো কাঁটা

যমুনা দেয় যমকে ফোঁটা

আমি দিই আমার ভাইকে ফোঁটা

যমুনার হাতে ফোঁটা খেয়ে যম হলো অমর

আমার হাতের ফোঁটা খেয়ে

আমার ভাই হোক অমর।

এরপর বোন ভাইয়ের মাথায় ধান দূর্বা দিয়ে আশির্বাদ করে। এসময় শঙখ বাজানো হয় এবং উলুধ্বনি দেয়া হয়। এরপর বোন ভাইকে আশির্বাদ করে, ভাইয়ের দীর্ঘজীবন কামনা করে। বোন যদি ছোট হয় তবে সে দাদার পা ছুঁয়ে প্রণাম করে এবং আশির্বাদ নেয় এবং মনে মনে প্রার্থনা করে ভাইকে যেন যম স্পর্শও করতে না পারে। আশির্বাদের পালা শেষ করে ভাইকে মিষ্টি খেতে দেয়া হয় যাতে সম্পর্কের মিষ্টতা আজীবন বজায় থাকে। এরপর শুরু হয় উপহার বিনিময়। দিদি ভাইকে উপহার দেয় আবার বড় দাদা ছোটবোনকে উপহার দেয়।

পশ্চিম ভারতেও এভাবেই বোনেরা ভাইদের আশির্বাদ করে “ভাইদুজ” পালন করে। যাতে ভাইয়েরা সকল দুর্ভাগ্য ও সমস্যা থেকে দূরে থাকতে পারে। সেখানে বোনেরা ভাইদের জন্য আলপনা আঁকে। ভাইয়ের হাতে ফুল, পান, সুপারি, মুদ্রা তুলে দেয়। তারা মন্ত্রপাঠ করে ভাইয়ের কপালে তিলক এঁকে দেয়। বোনেরা ভাইয়ের জন্য দক্ষিনমুখী প্রদীপ জ্বালায়। তারা “ভাইদুজ” এর দিনে আকাশে ঘুড়ি দেখা অত্যন্ত শুভ বলে মনে করে। তারা বিশ্বাস করে আকাশে ঘুড়ি দেখলে সৃষ্টিকর্তা তাদের মনের ইচ্ছা পূরণ করবে এবং ভাইয়েরা সবসময় ভালো থাকবে।

মহারাষ্ট্র ও হরিয়ানা অঞ্চলে যাদের ভাই নেই তারা চাঁদকেই ভাই মনে করে তাদের “ভাইবিজ” পালন করে। সেখানে বোনেরা তাদের রীতি ও ঐতিহ্য অনুসারে হাতে মেহেদি দেয়।

আর যাদের ভাই দূরে থাকে কিংবা বোনের সাথে দেখা করা যদি সম্ভব না হয়, সেখানেও বোনেরা চাঁদকেই ভাই মনে করে। এজন্য অনেকে মনে করে জন্মের পর শিশুকে একারণেই চাঁদকে “চাঁদ মামা” ডাকা শিখানো হয়। আমাদের দেশে অনেক বোন ভাই কাছে না থাকলে তাদের উদ্দেশ্যে দেয়ালে ফোঁটা দেয়।

এভাবেই কালের গতিতে ভাই-বোনের সম্পর্ক যুগে যুগে বেঁচে আছে। সব সম্পর্ক শেষ হয়ে গেলেও এ সম্পর্ক যেন শেষ হওয়ার নয়। চিরকাল বেঁচে থাকুক ভাইবোনের এই অমর সম্পর্ক।

About farzana tasnim

Check Also

২৪ বছর পর হারিয়ে যাওয়া মেয়েকে খুঁজে পেলেন বাবা-মা!

কি বলবেন একে, অবিশ্বাস্য? রূপকথার গল্প? লেখাটা পড়ার পর তা আপনি বলতেই পারেন। এ যে …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *