বলিউডের ইতিহাসের অন্যতম সফল নায়ক তিনি। দীর্ঘ ক্যারিয়ারে উপহার দিয়েছেন অসংখ্য ব্লকবাস্টার মুভি। নায়ক শাহরুখের খুঁটিনাটি তাঁর ভক্তদের একেবারে ঠোঁটের আগায় থাকে, প্রিয় তারকার কোন ক্ষুদ্র জিনিসও নজর এড়ায় না ভক্তদের। শাহরুখও অনেকবার খোলামেলা কথা বলেছেন তাঁর ক্যারিয়ার নিয়ে। তবে এবার সাক্ষাৎকারদাতার আসনে বসে শাহরুখের ভূমিকাটা একটু পাল্টে গেল। নায়ক শাহরুখ নন, সাক্ষাৎকারদাতার আসনে এবার পিতা শাহরুখ! তিন সন্তানের সাথে নিজের সম্পর্ক নিয়ে এবার খোলামেলা কথা বলেছে কিং খান। প্রিয়লেখার পাঠকদের জন্য পিতা শাহরুখের এই বিশেষ সাক্ষাৎকারটি অনুবাদ করা হল।
নিজেকে কি একটু অতি-রক্ষণশীল বাবা বলবেন আপনি?
শাহরুখ: মোটেও না! আমি একদমই রক্ষণশীল নই। হয়তো ওভাবে কথা বলি বা আচরণ করি দেখে এমনটা মনে হতে পারে, কিন্তু আমি রক্ষণশীল নই। সন্তানদের কেবল সুরক্ষা দিতে পারি আমি, কিন্তু তাদের জীবন তো আর আমি পরিচালনা করতে পারি না, তাই না?
সন্তানেরা তাদের সমস্যার কথা কার কাছে শেয়ার করে? তাদের বাবার কাছে না মায়ের কাছে?
শাহরুখ: মানুষের জীবন নিয়ে আমি খুব একটা অনুসন্ধিৎসু নই, এমনকি আমার বাচ্চাদের জীবন নিয়েও না। তাদের যদি আমাকে কিছু বলার থাকে, স্রেফ একটা কল করে দেয় আমাকে। মাঝে মাঝে ব্যক্তিগত জীবন সম্পর্কে আমার সাথে কথা বলে তারা, কিন্তু আমি জানি সেটাও একটা নির্দিষ্ট লিমিট পর্যন্তই বলে। চক্ষুলজ্জা বলেও তো একটা ব্যাপার আছে নাকি! আমিও বেশি গভীরে ঘাঁটাই না। তাদের মা অবশ্য মাঝে মাঝে সোজাসাপ্টা কিছু প্রশ্ন করে বসে। আমি তখন গৌরীকে জিজ্ঞেস করি তুমি ওদের এটা কিভাবে জিজ্ঞেস করলে! আমার সন্তানই হোক বা অন্য কেউ, আরেকজনের ব্যক্তিগত জীবন সম্পর্কে খুব একটা মাথা ঘামাই না আমি। একজন মানুষ আরেকজনকে নিজের সম্পর্কে অনেক কিছুই বলতে পারে, কিন্তু তার একান্ত ব্যক্তিগত ব্যাপারগুলো শুধুই তার নিজের। অন্যের সাথে কথা বলার সময়ও এটা মাথায় রাখি আমি। বাচ্চাদের সাথে কথা বলার সময় তো আরও বেশি করে মনে রাখি এটা। ওরা অবশ্য মাঝে মাঝে আমাকে জীবন সম্পর্কিত বেশ কিছু প্রশ্ন করে! নাহলে ‘ডিয়ার জিন্দেগি’তে যেমন পরামর্শ দিয়েছি, অমনই পরামর্শ দেই বাচ্চাদের। সুহানা তো মাঝে মাঝে বলেই বসে, আমি নাকি বেশি কথা বলি!
সম্পর্ক নিয়ে কোন পরামর্শ দেন বাচ্চাদের?
শাহরুখ: শুধু বাচ্চাদের কেন, সম্পর্ক নিয়ে আমি কাউকেই পরামর্শ দেইনা। আমার মনে হয়না এরকম উপদেশ একজনের আরেকজনকে দেয়া উচিত। কারণ প্রত্যেকটা সম্পর্কই আলাদা। হ্যাঁ মাঝে মধ্যে মজা করে আরেকজনের সম্পর্ক নিয়ে আলাপ করা যেতে পারে, সেটা অবশ্যই ভিন্ন ব্যাপার। একজনের সম্পর্ককে কখনোই আপনি মূল্যায়ন করতে পারেন না।
‘কফি উইথ করণ’ এ গিয়ে একবার আপনি বলেছিলেন, সুহানাকে কোন ছেলে চুমু খেলে তার ঠোঁট তুলে নেবেন আপনি। আরিয়ান যদি কোন মেয়েকে চুমু খায় সেক্ষেত্রে কিভাবে রিঅ্যাক্ট করবেন আপনি?
শাহরুখ: আরিয়ানের ঠোঁটও তুলে নেব! কোন মেয়ের ঠোঁট তো আর গিয়ে তুলে নিয়ে আসতে পারিনা, ভদ্রলোকের কাজ হবে না সেটা (হাসতে হাসতে)। সেজন্য আরিয়ানের ঠোঁটই তুলবো, ওই মেয়ের বাবার হয়ে আমিই করে দেব কাজটা (হাসতে হাসতে)। কোন মেয়েকে স্পর্শ করার বা তার ক্ষতি করার অধিকার কারোর নেই।
আরিয়ানের তো ২০ বছর হয়েই গেল প্রায়। আপনার সাথে ওর সম্পর্ক কেমন? মেয়েদের নিয়ে কথা বলেন ছেলের সাথে?
শাহরুখ: বাবা হিসেবে আমি অনেক কুল! মাঝে মাঝে কি হয় শুনুন, যখন আমরা দুজন একা থাকি, খালি গায়ে শর্টস পরে শুয়ে বেশ কিছু অশ্লীল জোকসও শেয়ার করে ফেলি। নতুন গালি শিখলে সেগুলো আমাকে শুনিয়ে নাকি সে দারুণ উত্তেজিত বোধ করে! দিল্লী থেকে এসেছি তো, আমার গালির ভাণ্ডারও বেশ সমৃদ্ধ (হাসতে হাসতে)। ও যখন আমাকে একটা গালি শেখায়, আমি তখন ওকে ওই গালিরই আরেকটা ভার্শন বলি। ফিল্ম মেকিং নিয়েও আমরা কথা বলি। একসাথে বসে যখন সিনেমা দেখি, তখন এই বিষয়ে কথা হয়। ওর লক্ষ্য নিয়ে কথা বলে আমার সাথে, বড় হয়ে কি করতে চায় সেসব বলে। ও আমার চেয়েও বড় হতে চায়, যেটা খুবই ভালো। আমরা একসাথে শপিংয়েও যাই, টি-শার্ট কিনি।
আর সুহানা? অভিনয়ে আগ্রহ আছে?
শাহরুখ: সুহানা অভিনেত্রী হতে চায়। ওর মধ্যে সেই আগ্রহটা আছে। স্টেজে কিন্তু ও দারুণ ভালো। ওর পারফরম্যান্স আমি দেখেছি। সিনেমার পোকা ও, ইন্ডাস্ট্রিতে আসার ইচ্ছেও আছে। কিন্তু আমার সোজাসাপ্টা কথা, যেটাই কর, আগে পড়াশোনা শেষ করতে হবে। বাচ্চাদের এই কথাটা বলে দিয়েছি আমি। পড়াশোনা শেষ করার পর তারা যদি ইন্ডাস্ট্রিতে আসতে চায়, তাহলে ঠিক আছে। তারা যাই করতে চায়, আমাকে ওদের পাশে পাবে।
আব্রামের সাথে যখন থাকেন, মনে হয় যেন অন্য কোন শাহরুখকে দেখছে সবাই। আব্রামের সাথে যেন বাচ্চা এক শাহরুখকে খুঁজে পাওয়া যায়!
শাহরুখ: তখন জিজ্ঞেস করছিলেন না আমি রক্ষণশীল বাবা কিনা? আমি না, বরং আব্রামই আমার ব্যাপারে রক্ষণশীল। পর্দায় যখন কেউ আমাকে মারে, ও ভাবে কেউ আমাকে সত্যি সত্যি মারল। তো পরের বার যখন ওদের সাথে আব্রামের দেখা হয়, ও এমনভাবে তাকায় না ওদের দিকে! দিলওয়ালে দেখে কাজলের সাথে এমনটা করেছিল ও। রাইস দেখার পর নওয়াজ ভাইয়ের সাথেও ও একই কাজ করেছিল! এটা বাদ দিলে আব্রাম খুবই ফুর্তিবাজ ছেলে। ও আমার আশেপাশে থাকতে পছন্দ করে। আরিয়ান ও সুহানার চেয়ে আব্রামের মানুষের সাথে মেশার ক্ষমতা বেশি। আমার ভক্তদের দেখলে ও অনেক খুশি হয়। আমার জন্মদিনের দিন তো ঘণ্টায় ঘণ্টায় ব্যালকনিতে ছুটে যায়। ভক্তরা আমার নাম ধরে যখন ডাকে, ও ভেতরে এসে আমাকে বলে, ‘পাপা সবাই এসে গেছে, চল এবার দেখা করি!’ আমাকে একপ্রকার টেনে বের করে ঘর থেকে। আমি যখন ভক্তদের উদ্দেশ্যে হাত নাড়ি, ওর নাকি দেখতে খুব ভাল্লাগে! ও খুবই বুদ্ধিমান একটা বাচ্চা, স্মার্টও। ওর সাথে থাকতে থাকতে আমিও বাচ্চা হয়ে যাই।
আপনার বাকি দুই সন্তান এত তাড়াতাড়ি বড় হয়ে গেছে, এটা নাকি আপনি একদমই পছন্দ করেন না?
শাহরুখ: আমি এটা বলতে ঘৃণা করি, কিন্তু হ্যাঁ, আমি আসলেই চাইনি আরিয়ান আর সুহানা এত তাড়াতাড়ি বড় হয়ে যাক। ওরা যখন ছোট ছিল, চুপ করে ওদের রুমে চলে যেতাম আমি, গিয়ে আমার পরবর্তী সিনেমার গল্প শুনাতাম। যখন আপসেট থাকতাম বা রেগে থাকতাম, ওদের সামনে গিয়ে যা মন চায় তাই বলে ফেলতাম, কারণ জানতাম ওরা এসবের কিছুই বুঝবে না। ওদের মুখের ভাবভঙ্গি দেখেই আমার মুড ঠিক হয়ে যেত।
আপনার ছেলেমেয়েরা কখনো কি বলেছে যে আমাদের বাবার মধ্যে এই পরিবর্তনটা আমরা চাই? সেভাবে কখনো পরিবর্তন করেছেন নিজেকে?
শাহরুখ: বলেনি আবার! অনেকবার বলেছে। আর এত মিষ্টি করে বলে! আমাকে বলেছে মেজাজ হারিয়ে না ফেলতে। শারীরিকভাবে কাউকে আঘাত না করতে। আমিও এসবে উন্নতি আনার চেষ্টা করছি, কিছুটা বোধহয় উন্নতি করেছিও। যখন ভীষণ রেগে গিয়ে বাজেভাবে রিঅ্যাক্ট করে ফেলি, আবার নিজেই পরে কষ্ট পাই, তখন ওরা এসে আমাকে বলে, ‘তোমার মেজাজ খুবই ভয়ানক। আর এভাবে রেগে গিয়ে তুমি নিজেকেই কষ্ট দিচ্ছ’। তারা আমাকে একটা প্রেসক্রিপশন বানিয়ে দিয়েছে, যার নাম ‘যা হচ্ছে হতে দাও’। আমিও তাই সেটাই অনুসরণ করি!
ডিএনএ ইন্ডিয়া অবলম্বনে