ডায়াবুলিমিয়া।
অফিশিয়াল কোন মেডিকেল টার্মে একে ভূষিত করা হয় না তবে এটি এমন একটি ডিজঅর্ডার বা মানসিক ব্যাধি, যার ফলে ভুক্তভোগীরা খাদ্য নিয়ে নানা ধরণের সমস্যায় পড়েন। আসলে এটি দ্বারা কি বোঝানো হয়ে থাকে এবং কেমন ধরণের মারাত্মক আকার এটি আমাদের শরীরের জন্য ধারণ করতে পারে, তাই নিয়েই আজ আলোচনা করা হবে প্রিয়লেখার পাতায়ঃ
ডায়াবুলিমিয়ার রোগী তাদেরকেই বলা হয়ে থাকে, যাদের টাইপ ওয়ান ডায়াবেটিস রয়েছে এবং ইচ্ছাকৃতভাবেই তারা ইনসুলিন গ্রহণ করা বন্ধ করে দেন। এর ফলে তাদের ওজন মারাত্মকভাবে হ্রাস পেয়ে থাকে।
যাদের ডায়াবেটিস রয়েছে, তারা নানাভাবে ইনসুলিন ব্যবহার করে গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে আনতে পারে। টাইপ-ওয়ান ডায়াবেটিক রোগী যদি তাদের ইনসুলিন গ্রহণ না করে, নানা ধরণের সমস্যায় তাকে ভুগতে হতে পারে। যেমনঃ শরীর অস্বাভাবিক ক্ষয়ে যাওয়া, ঝাপসা দৃষ্টি, প্রচন্ড তেষ্টা পাওয়া এবং ঘন ঘন বাথরুমে যাওয়া। যদি অবহেলার পরিমাণ আরো বেশি করা হয়, তাহলে “পুরস্কার”এর মাত্রাও বেড়ে যায়। দৃষ্টিশক্তি একেবারেই ক্ষীণ হয়ে যাওয়া, মাসল প্রবলেম, চুল ঝরে যাওয়া ইত্যাদি নানা ধরণের সমস্যা বাড়তে থাকে।
২০১৩ সালের জানুয়ারী মাসে বিবিসির একটি আর্টিকেল প্রকাশিত হয় যেখানে টেইলর হ্যাকেট নামক একজন ডায়বেটিক রোগী ভয়াবহ এক বিবৃতি দেন। তার দেয়া বিবৃতিতে তিনি বলেন যে ওজন হ্রাস করবার জন্য তিনি অনেকদিন ধরেই ইনসুলিন ব্যবহার করা কমিয়ে দিয়েছেন। এতটাই যে এটা এখন তার অবসেশন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
“আসলে আমি জানতাম ইনসুলিন ব্যবহার না করলে ধীরে ধীরে অন্ধ হয়ে যেতে পারি। কোন পাত্তা দিই নি কারণ আমি চেয়েছিলাম নিজের একটিন মেদহীন স্বাস্থ্য তৈরি করতে।” বিবিসি যখন তার এই রিপোর্টটি তৈরি করে তখন তার স্বাস্থ্য খুব একটা ভালো ছিল না এবং টেইলর চেয়েছিলেন এটি যেন মানুষ জানতে পেরে সচেতন হতে পারে।
ডায়াবুলিমিয়ায় আক্রান্ত রোগীরা বিপদের সময়ে সচেতন হতে পারবে, এমন কোন কথা নেই। লিসা ডে এর কথাই ধরুন না! গেল বছর তাকে নিয়ে দ্য টেলিগ্রাফ একটি আর্টিকেল তৈরি করেছিল। লিসা ডে এবং তার বোন, কেটি এডওয়ার্ডস দুইজনই শরীরের মেদ কমানোর জন্য মারাত্মকভাবে চিন্তিত। দুইবোনেরই ডায়বেটিস রয়েছে এবং উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া। তবে লিসার মাত্রাটা বোধহয় একটু বেশিই ছিল। তার বোন টেলিগ্রাফকে সাক্ষাৎকারে জানায়, লিসা শরীরের মেদ ঝরানোর জন্য ইনসুলিন গ্রহণ করে না। এর ফলে শরীরের অবস্থা দিন দিন শোচনীয় হয়ে যাচ্ছিল তার।
“সে প্রায় কিছু খেতই না। বয়স যখন আস্তে আস্তে বাড়া শুরু করল, সে একদিন বুঝে গেল যে ইনসুলিন গ্রহণ না করলে ওজন কমানো যায়। ব্যস! আস্তে আস্তে ইনসুলিন গ্রহণ করা বন্ধ করে দিল সে। কয়েকদিনের ব্যবধানেই দেখা যাচ্ছে নতুন নতুন সাইজের জামা তার জন্য অর্ডার করতে হচ্ছে।”
এবার মোদ্দা কথায় আসা যাক। আপনার আশেপাশে যদি এমন কোন রোগী পাওয়া যায়, যারা নিজেদের শরীর নিয়ে মাত্রাতিরিক্ত সচেতন এবং ডায়াবেটিক, তাদেরকে ভালো করে নজরে রাখুন। কারণ, এখন পর্যন্ত ডায়াবুলিমিয়াতে আক্রান্ত রোগীদের যথাযোগ্য চিকিৎসা কিভাবে করা যেতে পারে বা কৌশল কি, তা ডাক্তাররা জানেন না। ডাক্তাররা এটিকে এক ধরণের ফোবিয়া বলেও মাঝে মাঝে চিহ্নিত করছে। মনোরোগ বিশেষজ্ঞেরও শরণাপন্ন হোন, যেহেতু মানসিক রোগের নানা উপসর্গের সাথে এর উপসর্গও মিলে যায়। একটু নিয়ন্ত্রিত ও নিয়মমাফিক জীবনযাপন করলেই আমরা সুস্থ সুন্দরভাবে বেঁচে থাকতে পারি। শুধু শুধু কেন তাহলে নিজেদের প্রতি এই অবহেলা?
আজ আর নয়। প্রিয়লেখার সাথেই থাকুন।