তাঁর টেস্ট অভিষেক হয়েছিল ১৯৯৯ সালে। কিন্তু তখন শ্রীলঙ্কান ক্রিকেট তথা বিশ্বক্রিকেটেই জ্বলজ্বল করে জ্বলছেন মুত্তিয়া মুরালিধরণ নামের এক জাদুকর। মুরালির ছায়ায় ঢাকা পড়ে যাওয়া রঙ্গনা হেরাথের ক্যারিয়ারের এপিটাফই বোধহয় লিখে ফেলেছিলেন অনেকে। মুরালিধরণ যতদিন ছিলেন, যথেষ্ট সুযোগ তিনি ততদিন পাননি। কিন্তু মুরালির অবসরের পরে সেই হেরাথের ঘাড়ে চড়েই এতগুলো বছর কাটিয়েছে শ্রীলঙ্কা। টেস্টে কোন বাঁহাতি স্পিনারের সেরা বোলিং ফিগার তাঁর দখলে। সব টেস্ট খেলুড়ে দেশের বিপক্ষে ইনিংসে ৫ উইকেট পাওয়া তৃতীয় বোলার তিনি। গতকাল শেষ হওয়া রোমাঞ্চকর আবুধাবি টেস্টেও জয়ের নায়ক সেই বর্ষীয়ান রঙ্গনা হেরাথই। ইতিহাসের প্রথম বাঁহাতি স্পিনার হিসেবে টেস্ট ক্রিকেটে ৪০০ উইকেটের মাইলফলক ছুঁয়েছেন হেরাথ। প্রায় চল্লিশ ছুঁই ছুঁই হেরাথের অবিশ্বাস্য কিছু অর্জনের পরিসংখ্যান নিয়েই আজকের আয়োজন।
- ৪০০ টেস্ট উইকেট পেতে ৮৪ টি টেস্ট খেলতে হয়েছে রঙ্গনা হেরাথকে। হেরাথের চেয়ে কম টেস্ট খেলে ৪০০ উইকেট পেয়েছেন কেবল তিনজন বোলার, মুত্তিয়া মুরালিধরণ (৭২ টেস্ট), স্যার রিচার্ড হ্যাডলি (৮০ টেস্ট) ও ডেল স্টেইন (৮০ টেস্ট)।
- সবচেয়ে বেশি বয়সে ৪০০ উইকেটের মাইলফলক স্পর্শ করা বোলার রঙ্গনা হেরাথ। মাইলফলক ছোঁওয়ার দিন হেরাথের বয়স ছিল ৩৯ বছর ১৯৭ দিন। এতদিন এই রেকর্ড ছিল স্যার রিচার্ড হ্যাডলির। ১৯৯০ সালে ভারতের বিপক্ষে ক্রাইস্টচার্চ টেস্টে ৪০০ উইকেট পাওয়ার দিন হ্যাডলির বয়স ছিল ৩৮ বছর ২১৪ দিন।
- ৩০০ উইকেট থেকে ৪০০ উইকেটে পৌঁছাতে মাত্র ১৫ টেস্ট লেগেছে হেরাথের। গত বছর ইংল্যান্ডের বিপক্ষে খেলা ৬৯ তম টেস্টে ৩০০ তম উইকেট পেয়েছিলেন হেরাথ। ১০০ উইকেট পেতে এবারই সবচেয়ে কম টেস্ট খেলতে হয়েছে হেরাথকে। প্রথম ১০০ উইকেট পেতে তাঁর লেগেছিল ২৯ ম্যাচ, ১০০ থেকে ২০০ উইকেটে পৌঁছাতে লেগেছিল ১৮ টেস্ট, আর ২০০ থেকে ৩০০ উইকেটে পৌঁছাতে লেগেছিল ২২ টেস্ট। বয়সের সাথে সাথে যে তিনি আরও ধারালো হচ্ছেন, এর চেয়ে বড় প্রমাণ আর কি হতে পারে!
- এই নিয়ে নবমবারের মত এক টেস্টে ১০ উইকেট পেলেন হেরাথ, টেস্ট ইতিহাসে যা যৌথভাবে তৃতীয় সর্বোচ্চ। হেরাথের মত ৯ বার দশ উইকেট পেয়েছেন স্যার রিচার্ড হ্যাডলিও। হেরাথের উপরে আছেন কেবল দুইজন, মুত্তিয়া মুরালিধরণ (২২ বার) ও শেন ওয়ার্ন (১০ বার)।
- পাকিস্তানের বিপক্ষে ১০০ টেস্ট উইকেট পাওয়া একমাত্র বোলার হেরাথ। এখন পর্যন্ত পাকিস্তানের বিপক্ষে ২০ টেস্ট খেলে ১০১ উইকেট পেয়েছেন তিনি, যার মধ্যে আছে ৮বার ৫ উইকেট ও ২ বার ১০ উইকেট পাওয়ার নজির। এর আগে কপিল দেবের পাকিস্তানের বিপক্ষে ৯৯ উইকেট ছিল।
- এই নিয়ে ১১ বার চতুর্থ ইনিংসে ৫ উইকেট পেলেন হেরাথ, অন্য যে কোন বোলারের চেয়ে যা ৪ বার বেশি। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৭ বার করে আছে শেন ওয়ার্ন ও মুত্তিয়া মুরালিধরণের। ম্যাচের চতুর্থ ইনিংসে ১৮.৩৮ গড়ে ১০০ উইকেট নিয়েছেন হেরাথ। চতুর্থ ইনিংসে বল করেছেন এমন সর্বশেষ ৮ ইনিংসের ৫ টিতেই ৫ উইকেট পেয়েছেন তিনি!
- এই নিয়ে অষ্টম বারের মত একই টেস্টের দুই ইনিংসেই অন্তত ৫ উইকেট করে পেলেন হেরাথ। কেবল মুরালিধরণই ১১ বার এমন কীর্তি দেখাতে পেরেছেন। মজার ব্যাপার হচ্ছে, হেরাথের এমন ৮ বারের কীর্তির প্রতিটিই এসেছে ২০১২ এর পরে।
ক্রিকইনফো অবলম্বনে