আবহাওয়ার ক্রম পরিবর্তন কিংবা পরিবেশগত কারণে আজকাল আমরা সকলে খুব সহজেই অসুস্থ হয়ে পড়ি। ঝলমল রোদ দেখে ঘর থেকে বের হয়ে হঠাৎ বৃষ্টিতে কাকভেজা হয়ে ঘরে ফেরা এবং তার পরিনতি যখন হয় জ্বর কিংবা সুস্থ সবল মানুষ কাজ শেষে ঘুমাতে গেলেন সকালে ঘুম ভেঙ্গে দেখেন জ্বরে পুড়ে যাচ্ছে শরীর। তখন কিন্তু এই অনাকাঙ্ক্ষিত জ্বর নিয়ে ভাবতেই হয়। জ্বরকে যদিও নিদির্ষ্ট কোন রোগ ধরা হয় না তবে জ্বরকে কিন্তু অনেক রোগেরই পূর্ব লক্ষণ হিসেবে ধরা হয়। আসুন তবে আজকের প্রিয়লেখার আয়োজনে জেনে নেই জ্বর কি? হঠাৎ জ্বরের কারন, লক্ষন আর প্রতিকারই বা কি?
জ্বর কি?
আমাদের শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রন করে মস্তিষ্কের হাইপোথ্যালামাস নামক অংশটি। কোন কারনে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে গেলে আমরা বলে থাকি জ্বর এসেছে। জ্বর মানেই যে অন্য কোন রোগের উপসর্গ বা লক্ষণ তা কিন্তু নয়। অতিরিক্ত ঠান্ডা কিংবা গরম আবহাওয়ার কারণে অনেক সময় হাইপোথ্যালামাস সেল্টারটি ভারসাম্য হারিয়ে ফেলতে পারে আবার আবহাওয়ার সাথে অভিযোজন হয়ে গেলে তাপমাত্রার ভারসাম্য এসে গেলে শরীরের তাপমাত্রা স্বাভাবিক হয়ে যায়। তবে হ্যাঁ, অনেক সময় জ্বর সুপ্ত জটিল রোগের লক্ষণও কিন্তু হতে পারে। আতঙ্কিত না হয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলুন।
হঠাৎ জ্বরের কারণ-
নানা কারণেই আমরা জ্বরাক্রান্ত হয়ে থাকি তবে বর্তমান সময়ে পরিবেশগত বিভিন্ন কারনে জ্বর হয়ে থাকে তা জেনে নেই-
- পরিবেশের তাপমাত্রার হঠাৎ বৃদ্ধি- হ্রাসের কারণে পরিবেশের সাথে শরীরের অভিযোজন হয় না ফলে শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায় যাকে আমরা জ্বর বলে থাকি।
- ভেজাল খাদ্যদ্রব্য গ্রহন করতে করতে আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায় ফলে যে কোন ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া কিংবা অন্য যে কোন প্যাথোজেন খুব সহজে আক্রমন করতে পারে।
- পরিবেশের তাপমাত্রা বেশি থাকলে ভাইরাস বেশি সক্রিয় হয়ে যায়। ফলে খুব সহজে খাবার , পানীয় কিংবা পরিবেশ থেকে খুব সহজে শরীরে প্রবেশ করে টাইফয়েড, জন্ডিসেরমত পানিবাহিত ভাইরাল ফিভার ছড়ায়।
- মনুষ্য সৃষ্ট পরিবেশ দূষণের কারণে মশাবাহিত বিভিন্ন ভাইরাল/ ব্যাকটেরিয়াল ফিভার যেমনঃ ডেঙ্গু, ম্যালেরিয়া ছড়ায়। যেসব রোগের প্রথম ও প্রধান লক্ষণ জ্বর।
- ফুড পয়জনিং বা খাদ্যে বিষক্রিয়ার প্রধান লক্ষ্ণও কিন্তু জ্বর । সাথে বমি ও ডায়রিয়া হয়ে থাকে।
লক্ষণ-
- প্রথম লক্ষণ অবশ্যই শরীরের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের থেকে বেশি থাকা। তবে বিভিন্ন জ্বরের ক্ষেত্রে তাপমাত্রা বৃদ্ধির পরিমান কম বেশি হয়ে থাকে। স্বাভাবিক জ্বরের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত তাপমাত্রা ২-৩দিন থাকে। কিন্তু ডেঙ্গু, ম্যালেরিয়া কিংবা টাইফয়েড, জন্ডিসের ক্ষেত্রে এক সপ্তাহ কিংবা তারো বেশি সময় থাকতে পারে। অবস্থায় অবশ্যই চিকিৎসকের শরনাপন্ন হয়ে রোগ নির্ণয় করে উপযুক্ত প্রতিষেধক নিতে হবে।
- জ্বরের সাথে শরীর, হাত-পা ব্যাথা সহ মাথাব্যথা হতেই পারে।
- অনেক সময় খাদ্যে অরুচির কারণে দূর্বলতা অনুভব হয়।
- ফুড পয়জনিং এর কারনে জ্বর হলে ডায়রিয়া, বমি হয়। এর ফলে পানিশূন্যতা দেখা যায়।
- জ্বরের স্থায়ীত্ব দীর্ঘদিন এবং তাপমাত্রা বেশি থাকলে দেরি না করে অবশ্যই চিকিৎসকের কাছে যান কেননা ভুলবেন না জ্বর কিন্তু অন্য অনেক রোগেরই উপসর্গ হতে পারে।
প্রতিষেধক নয়, প্রতিকার করুন-
রোগ হওয়ার পরে প্রতিষেধক নেওয়ার চেয়ে আগে থেকে প্রতিরোধ করা ভালো আমরা সকলেই জানি। সচেতন থেকে আমরা অনেক রোগ থেকে মুক্তি পেতে পারি। সচেতনতাই বড় প্রতিষেধক।
- জ্বর বেশি থাকলে স্পঞ্জ বা নরম কাপড় ভিজিয়ে শরীর মুছে তাপমাত্রা কমাতে হবে।
- হালকা কাপড় পরিধান করা, বাতাসের মধ্যে থাকা নিয়মিত গোসল করা উচিত।
- প্রচুর পানি বা তরল খাবার গ্রহন করতে হবে। মুখের স্বাদ বৃদ্ধি করার জন্য লেবু, আমলকী কিংবা ভিটামিন সি জাতীয় ফল খেতে পারেন।
- বাইরের খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। পানি পান করার সচেতন থাকবেন। দূষিত পানি অনেক রোগজীবানু বহন করে থাকে।
- চিকিৎসকের পরামর্শ ব্যাতীত ঔষধ গ্রহন থেকে বিরত থাকুন। বিশেষ করে অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়ার আগে অবশ্যই পরামর্শ এবং উপযুক্ত টেস্ট করা ছাড়া ঔষধ গ্রহন করবেন না।
আপনার চারপাশ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখুন, ময়লা- আবর্জনা নিদির্ষ্ট স্থানে ফেলুন। পরিবেশ যদি দূষণ্মুক্ত থাকে তাহলে অবশ্যই আমরা সুস্থ থাকব।
সচেতন হউন, সুস্থ থাকুন আর হ্যাঁ পড়তে ভুলবেন না প্রিয়লেখায় স্বাস্থ্যবার্তা।