নাসিরুদ্দিন হোজ্জার মজার কৌতুক কে না শুনেছেন! বুদ্ধিদীপ্ত কৌতুকের জন্য তিনি আজও জনপ্রিয় হয়ে আছেন। আজ আপনাদের জন্য থাকছে হোজ্জা সাহেবের মজার কিছু কৌতুক।
আমি বাড়ি নেই
একদিন বাজারে চায়ের দোকানে বসে বেশ রসিয়ে কথা বলছেন হোজ্জা। একপর্যায়ে তিনি গর্ব করে বললেন, ‘জানেন, আমি অনেক অতিথিপরায়ণ।’
কথাটা শুনে দোকানে বসা এক চতুর লোক বললো, ‘তা হোজ্জা সাহেব, আজ দুপুরে তো তাহলে আপনার বাড়িতে আমরা খেতেই পারি।’
হোজ্জা রাজি হয়ে তখনই তাদের খাওয়াতে নিজের বাড়ির পথ ধরলেন। বাড়ির সামনে এসে বললেন, ‘আমি আগে বাসায় গিয়ে আমার স্ত্রীকে খাবার রেডি করতে বলি। তারপর আপনারা একে একে আসুন।’
হোজ্জার স্ত্রী কথাটা শোনার পর তেলে-বেগুনে জ্বলে উঠে বললেন, ‘এসব পাগলামি ছাড়া তোমার মাথায় আর কিছু কাজ করে না? ঘরে নিজেদের খাবার নেই, তিনি আবার রাজ্যের মেহমান ডেকে এনেছেন! যাও, ওদের ফিরে যেতে বলো।’
‘তা আমি পারবো না । আমি যে অতিথিপরায়ণ, তার তো একটা সুনাম আছে।’ মিনমিন করে বললেন হোজ্জা। তার স্ত্রী বললেন, ‘বেশ, তুমি তাহলে উপরের ঘরে গিয়ে বসো, আমি বরং তাদের বলি যে, তুমি বাড়ি নেই।’
এদিকে অনেক সময় কেটে গেলো। অতিথিরা কোনো সাড়া না পেয়ে বাড়ি এসে ঘরের দরজা ধাক্কা দিতে লাগলো। আর বলতে লাগলো, ‘আমাদের ঘরে ঢুকতে দাও হোজ্জা।’ হোজ্জার স্ত্রী তখন দরজা খুলে বেরিয়ে এলেন এবং অতিথিদের বললেন, ‘হোজ্জা বাড়ি নেই।’
তারা বললো, ‘সেকি! সে তো আমাদের দাঁড় করিয়ে রেখে বাড়িতে ঢুকেছে। আর আমরা তো বাড়ির সামনে থেকে দরজার দিকে তাকিয়ে ছিলাম। তাকে তো বের হতেও দেখিনি।’
তার স্ত্রী এবার চুপ হয়ে গেলেন। স্ত্রীকে জব্দ হতে দেখে চুপ থাকতে পারলেন না হোজ্জা নিজে। তিনি উপর থেকে মাথাটা একটু ঝুঁকিয়ে বললেন, ‘সামনের দরজা বন্ধ থাকলে কী? আমি কি পেছনের দরজা দিয়ে বের হতে পারি না?’
অভিযোগ নেই
বিবির পীড়াপীড়িতে নাসিরুদ্দিন একটা গরু কিনলেন। কিন্তু গরু ও গাধার জন্য গোয়াল ঘরে পর্যাপ্ত জায়গা না থাকায়, একটা ঘুমালে আরেকটাকে দাড়িয়ে থাকতে হতো।
প্রিয় গাধার এই দুরবস্থা দেখে হোজ্জা একদিন আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করলেন, “হে আল্লাহ, দয়া করে গরুটাকে মেরে ফেল যাতে আমার গাধাটা একটু আরাম করে ঘুমোতে পারে” ।
পরদিন সকালে সে গোয়াল ঘরে গিয়ে দেখে যে গাধাটা মরে পরে আছে।
প্রিয় গাধার মৃত্যুতে হতাশ হয়ে হোজ্জা বিরস বদনে আকাশের দিকে তাকিয়ে বললেন, “কোন অভিযোগ করবনা, খোদা, কিন্তু তুমি এতদিন ধরে সারা দুনিয়ার মালিক হয়েও, কোনটা গরু কোনটা গাধা এইটা চিনলেনা!”
কেমন জব্দ!
একদিন হোজ্জা তার প্রিয় গাধার পিঠে লবণ বোঝাই করে বাজারের দিকে রওনা দিলেন। পথে একটা নদী পড়ল। গাধাটা ইচ্ছে করে লবণের বস্তা পানিতে ফেলে দিল। এদিকে লবণ গলে একাকার, আবার গাধার পিঠের বোঝাও কমল। হোজ্জা মনে মনে ভাবলেন, দাঁড়াও তোমায় দেখাচ্ছি মজা।
এর পরেরবারও হোজ্জা ওই পথ দিয়ে গেলেন, তবে এবার তুলা বোঝাই করে। নদী পার হওয়ার সময় এবারো গাধা বস্ত ফেলে দিল, তবে এবার তুলা ভিজে ওজন বেড়ে গেল। গাধা ওজনদার মাল নিয়ে টলমল পায়ে এগিয়ে যেতে লাগল। গাধার খুবই কষ্ট হতে লাগল। হোজ্জা তখন চেঁচিয়ে বললেন, ‘কেমন জব্দ! ভেবেছিলি প্রতিবার পানি দিয়ে গেলে পিঠের ওপরের মালের ওজন কমে যাবে, তাই না!’
দ্বিতীয় প্রশ্ন বলুন
বাজারে একটা ঘর ভাড়া নিয়ে হোজ্জা তার গায়ে একটা নোটিশ টাঙিয়ে দিলেন। তাতে লেখা, ‘যে কোনো বিষয়ে দুটি প্রশ্নের জবাব দেব, বিনিময় মূল্য মাত্র পাঁচ টাকা।’
একজন হাটুরে সবার আগে দৌড়ে হোজ্জার ঘরে ঢুকে হাঁপাতে হাঁপাতে তার হাতে পাঁচ টাকা দিয়ে বললেন, ‘দুটো প্রশ্নের জন্য পাঁচ টাকা, একটু বেশি নয় কী?’
‘হ্যাঁ, তা ঠিকই বলেছেন। এবার আপনার দ্বিতীয় প্রশ্নটি বলুন?’
আপনি কি ঘুমাচ্ছেন?
একদিন নাসিরউদ্দিন চোখ বন্ধ করে শুয়ে ছিলেন।
তার শালা এসে জিজ্ঞেস করল, ‘আপনি কি ঘুমাচ্ছেন?’
নাসিরুদ্দিন জিজ্ঞেস করলেন, ‘কেন’?
‘না মানে আমি ভাবছিলাম আপনি যদি আমাকে কিছু টাকা ধার দিতেন’।
‘ওহ, তাহলে তোমার প্রথম প্রশ্নের উত্তর, আমি ঘুমাচ্ছি’, নাসিরউদ্দিন বলে। ‘ এখন আমাকে একা থাকতে দাও’!
হোজ্জার দৌড়:
“আমি যখন মরুভূমিতে ছিলাম,” এক স্মৃতিচারণায় বললেন হোজ্জা, “তখন রক্তলোলুপ, নৃশংস একদল বেদুইনকে দৌঁড়িয়েছিলাম।”
“খালি হাতে!” বিস্ময়ে প্রশ্ন করে দর্শক।
“হ্যাঁ, কেবল ছোট একটা লাঠি ছিল আমার হাতে।”
“কিন্তু এ কীভাবে সম্ভব, হোজ্জা!”
“খুবই সহজ। আমি ঝড়ের বেগে দৌঁড়াচ্ছিলাম, আর তারাও আমার পেছন পেছন দৌঁড়াচ্ছিল!”
এবার গাধাকে খাওয়াও!
একবার নাসিরুদ্দিন হোজ্জা অসুস্থ।নিজের গাধাটাকে খাওয়ানোর জন্য বিবিকে বললেন।হোজ্জার বিবি একটু ত্যাদড় টাইপের।সে গাধা কে খাবার দিতে অস্বীকার করল।দুজনের মধ্যে এই নিয়ে তুমুল ঝগড়া।তারপর একটা সমঝোতা হল, যে আগে কথা বলবে সে গাধাকে খাওয়াবে।হোজ্জা বাজিতে জেতার ব্যপারে দৃঢ়প্রতিজ্ঞা ছিলেন।
সেইদিনই, হোজ্জার বিবি বাইরে গেছে, খালি বাসা দেখে একটা চোর ঘরে ঢুকল।হোজ্জা বাসায় ছিল, কিন্তু বাজিতে হেরে যাওয়ার ভয়ে চোরকে কিছু বলল না।চোর নির্বিঘ্নে ঘরের সব কিছু নিয়ে চলে গেল।হোজ্জার স্ত্রী বাসায় ফিরে এসে যখন দেখল সব কিছু খালি, চিৎকার দিয়ে বলল, হায় আল্লাহ! কি হয়েছে?
হোজ্জা খুশিতে লাফিয়ে উঠল, আমি জিতেছি বাজিতে, এখন তোমাকেই গাধাকে খাওয়ানো লাগবে!