গত কয়েক মাস ধরেই গুঞ্জন চলে আসছিল গ্যাজেটপ্রেমীদের পরম আকাঙ্ক্ষিত আইফোন এক্স বা নতুন আইফোন নিয়ে। মাসের পর মাস মানুষ ভেবে আসছেন নতুন আইফোনের ফিচার কি কি হতে পারে তা নিয়ে। মোক্ষম সব ডিটেইল ফাংশন নিয়ে প্রকাশিত হয়েছে একের পর এক খবর। তবে মজার ব্যাপার হচ্ছে, নতুন আইফোন সকলের সামনে নিয়ে আসার এই বিশাল আসরেও কর্তৃপক্ষ চমকে দিয়েছেন সবাইকে, যদিও আমরা সকলেই জানতাম কি কি ফিচার নিয়ে হাজির হতে যাচ্ছে আইফোন এক্স।
অ্যাপলের নতুন প্রাঙ্গণে গত মঙ্গলবার স্টিভ জবস থিয়েটারে আয়োজিত হয়েছে আইফোনের উন্মোচন অনুষ্ঠান। চলুন এক নজরে দেখে নেয়া যাক, আইফোন এক্সের দশটি অন্যরকম নতুন ফিচারঃ
১) সুপার রেটিনা ডিসপ্লেঃ
অবশেষে অ্যাপল প্রথম একটি আইফোন নিয়ে এল, যাতে কিনা OLED (Organic light-emitting diode) ডিসপ্লে রয়েছে এবং এর সুপার রেটিনা ডিসপ্লে বেশ দৃষ্টিনন্দন করেছে দর্শকদের। ডিসপ্লে ৫.৮ ইঞ্চি ডিসপ্লে রয়েছে এবং পিক্সেল ঘনত্ব ৪৫৮ পিপিআই(ppi). কালার রেশিও ০০০:১। এর সাথে যুক্ত রয়েছে ট্রু টোন স্ক্রিন, যাতে করে আপনি যখন যে স্থানেই থাকুন না কেন, এটি তার কালার টেম্পারেচার এডজাস্ট করে নিতে পারবে।
২) এবার কোন হোম বাটন নয়ঃ
আইফোনের নতুন এই ইন্সটলমেন্টে কোন ধরণের হোম বাটন নেই, অর্থাৎ, নতুন এই ফোনের পুরোটা জুড়েই রয়েছে স্ক্রিন। স্ক্রিনের নিচ থেকে যদি আপনি সোয়াইপ করেন, তাহলে হোম স্ক্রিনটি আপনার কাছে উন্মোচিত হবে। সেখান থেকে আপনি বের করে নিতে পারবেন আপনার পছন্দসই মেন্যুটি। দর্শকরা নতুন এই ইতিবাচক পরিবর্তনটি স্বাগত জানিয়েছেন ভালোভাবেই।
৩) গঠনঃ
আইফোনের শরীর তৈরি করা হয়েছে ইস্পাত ন্যায় কঠিন কাঁচ ও স্টেইনলেস স্টিলের সাহায্যে। সাদা ও কালো, দুটি রঙয়ে পাওয়া যাবে এই আইফোন। রঙয়ের সাথে মিলিয়ে রেখে চকচকে ও মসৃণ করে তোলা হয়েছে এর স্টিলের শরীর।
৪) ফেইস আইডিঃ
আপনি নতুন আইফোন চালাচ্ছেন কিন্তু আপনার ফোন আপনাকে চিনবে না, তা কি হয়? নতুন আইফোন এক্সের রয়েছে ট্রু ডেপথ ক্যামেরা সিস্টেম, যাতে আট ধরণের ভিন্ন ভিন্ন সেন্সরযুক্ত ক্যামেরা রয়েছে। এই ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করে তুলেছে A11 বায়োনিক চিপ ফিচার। গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হচ্ছে, আপনি যদি চুলের রঙ পরিবর্তন করেন কিংবা দাড়ি রাখেন, চশমা পরিধান করেন, তবুও এর শক্তিশালী ক্যামেরা সেন্সর আপনাকে চিনতে পারবে।
৫) অ্যানিমোজিঃ
আইফোন এক্সে রয়েছে মজাদার একটি ফিচার, যার নাম হচ্ছে অ্যানিমোজি। প্রাথমিকভাবে শুরু করবার জন্য ডজনেরও অধিক অ্যানিমোজি রয়েছে এবং যখন এটি ব্যবহার করা শুরু করবেন, আপনার নিজের মুখভঙ্গি ও নড়াচড়া নকল করে এটি অ্যানিমোজি তৈরি করতে সক্ষম হবে।
৬) ক্যামেরাঃ
আইফোন এক্সের একটি শক্তিশালী অংশ হচ্ছে এর ডুয়াল লেন্স ক্যামেরা। ডুয়াল অপটিক্যাল ইমেজ স্ট্যাবিলাইজেশনের যোগ ফোনটিকে দিয়েছে নতুন একটি মাত্রা। এখনো ক্যামেরাটির পিক্সেল ১২-ই রাখা আছে কিন্তু এর সাথে যোগ হয়েছে কালার রিপ্রোডাকশন এবং নয়েজ কমানোর জন্য নতুন নতুন ফিচার।
৭) যোগ হল নতুন পোর্ট্রেট মোডঃ
আইফোনের পোর্ট্রেট মোডকেও আরো উন্নত করা হয়েছে এবং এর লাইটিং ফিচারে যুক্ত করা হয়েছে অনন্য একটি মাত্রা। এখন আপনি পোর্ট্রেট মোডে নিজের ছবি তুলতে গেলেও ঝলসে উঠবে আলো যাতে করে ছবিটি আরো ঝকঝকে ও প্রাণবন্ত হয়ে উঠবে। শুধুমাত্র পেছনের ক্যামেরাতেই নয়, এবার সামনের ক্যামেরাতেও আপনি সেলফি তুলতে পারবেন পোর্ট্রেট মোডে।
৮) A11 বায়োনিক চিপসেটঃ
৬৪বিট…৬ কোর… নতুন এই অ্যাপলের ডিজাইনে রয়েছে অসাধারণ জিপিইউ…নতুন আইএসপি…বলতে গেলে বলা যায়, প্রযুক্তির জগতে একটি দানব নিয়ে এসেছে এবার অ্যাপল কর্তৃপক্ষ।
৯) ব্যাটারি লাইফঃ
নতুন এই ফিচারে ব্যাটারির সময় বৃদ্ধি করে করা হয়েছে আরো ২ ঘন্টা বেশি। তবে এই ব্যাটারীর স্থায়িত্বকালের সাথে আইফোন ৭-এর মিল খুঁজে পাওয়া যায়।
১০) তারবিহীন চার্জঃ
আইফোন এক্স এবার যুক্ত করছে কিউআই ওয়্যারলেস (তারবিহীন) চার্জ করার ক্ষমতা। কারণ, অ্যাপল কর্তৃপক্ষ সংযোজন করেছে নতুন ধরণের একটি চার্জিং ম্যাট, যার ফলে কোন ধরণের তার ছাড়াই এবার চার্জ দেয়া যাবে নিশ্চিন্তে। অ্যাপল ওয়াচ, এয়ারপড ও অ্যাপলের নতুন আইফোন এক্স, আপনি যদি এই তিনটি গ্যাজেটেরই মালিক হয়ে থাকেন, তবে আপনার জন্য সুখবর। এই ম্যাটের সাহায্যে একই সময়ে আপনি তিনটি গ্যাজেট একসাথে চার্জ করতে পারবেন।
প্রযুক্তি যত এগিয়ে যাবে, ততই অবাক করবে আমাদের। একথাটিই চিরসত্য, চির ধ্রুব। অ্যাপল কর্তৃপক্ষ নিশ্চিতভাবেই এখনো ভক্তকূলের মাঝে উন্মাদনা সৃষ্টি করে চলেছেন, তা মঙ্গলবারের এই বিশালযজ্ঞ দেখলেই বোঝা যায়। প্রযুক্তি এগিয়ে যাক আরো, এই হোক আমাদের কামনা।
প্রিয়লেখার সাথেই থাকুন