এই প্রশ্নে দ্বিধাবিভক্ত যেন বাংলাদেশের সব ক্রিকেট ফ্যান! সাকিব আল হাসানের টেস্ট ক্রিকেট থেকে ৬ মাসের স্বেচ্ছাবিরতিতে যাওয়ার প্রশ্নে দেশের মানুষ ভাগ হয়ে পরেছে দুই ভাগে। এক ভাগের বক্তব্য, এতদিন টানা ক্রিকেট খেলার পর সাকিবের এই বিরতিটা প্রাপ্য। আরেক ভাগের বক্তব্য, বিদেশের মাটিতে গুরুত্বপূর্ণ এমন একটি সিরিজের আগে সাকিবের এই সিদ্ধান্ত কোনোভাবে মেনে নেয়া যায়না।
তবে এবার আবেগ নয়, তথ্য ও পরিসংখ্যান দিয়ে বিখ্যাত ক্রিকেট ওয়েবসাইট ইএসপিএন ক্রিকইনফো বোঝানোর চেষ্টা করেছে, কেন সাকিব আল হাসানের এই বিরতিটা আসলেই দরকার ছিল। প্রিয়লেখার পাঠকদের জন্য তা তুলে ধরা হল। আমাদের আশা, আপনারা সবাইও সাকিবের পাশে থাকবেন, তাঁর সিদ্ধান্তক সম্মান জানাবেন।
আগস্ট ২০০৬ থেকে বাংলাদেশের জার্সি গায়ে নিয়মিত খেলছেন সাকিব। তাঁর অভিষেকের পর থেকে বাংলাদেশ যে ৫৮ টি টেস্ট খেলেছে, তার মাত্র ৭ টি মিস গেছে সাকিবের। অন্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশ কম টেস্ট খেলার সুযোগ পায়, অনেক ফ্যানের তাই প্রশ্নও সেখানে, কম টেস্ট খেলার পরেও কি সাকিবের টেস্ট থেকে বিরতি নেয়ার সিদ্ধান্তের যৌক্তিকতা আছে কোন? তবে ওভারঅল সাকিবের ওয়ার্কলোড বিবেচনায় নিলে মানতে হবে, একটা বিরতি সাকিবের পাওনাই ছিল।
বাকি শীর্ষ অলরাউন্ডারদের ওয়ার্কলোডের সাথে সাকিবের ওয়ার্কলোডের তুলনা:
টেস্ট অভিষেকের পর থেকে সব ধরণের ফরম্যাট মিলিয়ে মোট ৭৫০ দিনের শীর্ষ লেভেলের ক্রিকেট খেলেছেন সাকিব। বর্তমানে ৩ ফরম্যাটের ক্রিকেটেই খেলছেন এমন অলরাউন্ডারদের মাঝে কেবল অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউস ও মঈন আলীই সাকিবের চেয়ে বেশিদিন শীর্ষ লেভেলের ক্রিকেট খেলেছেন। আর শর্তটা যদি কেবল আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নামিয়ে আনা হয়, তাহলে সেখানে সাকিবের সামনে থাকছেন কেবলই ম্যাথিউস। এম.এস. ধোনি, এবিডি ভিলিয়ার্স, কুমার সাঙ্গাকার, জেমস অ্যান্ডারসনের মত টপ ক্লাস ক্রিকেটারেরাও কিন্তু কোন না কোন ফরম্যাটের ক্রিকেট থেকে বিশ্রাম নিয়েছেন ওয়ার্কলোড সামলাতে না পেরে।
সাকিব কি বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি ক্রিকেট খেলা খেলোয়াড়?
উত্তরটা হল, হ্যাঁ। সাকিবের টেস্ট অভিষেকের পর থেকে শীর্ষ পর্যায়ের ক্রিকেট সবচেয়ে বেশি খেলা খেলোয়াড়টির নাম সাকিব আল হাসান। বাংলাদেশ দলে তাঁর কাছাকাছি আছেন মুশফিকুর রহিম। এই সময়ে সাকিব মোট ৭৬৪ দিন শীর্ষ পর্যায়ের ক্রিকেট খেলেছেন, মুশফিক খেলেছেন ৭২৭ দিন, আর তামিম ইকবাল ৬৬৫ দিন। এ তো গেল দেশের ক্রিকেটের কথা, বাইরের দেশে সাকিব যে পরিমাণ ক্রিকেট খেলেন, তা বাংলাদেশের আর কোন খেলোয়াড়ই খেলেন না।
সাকিবের সাম্প্রতিক ওয়ার্কলোড কেমন:
২০১৫ সাল থেকে সাকিব পাঁচটি ভিন্ন প্রতিযোগিতায় ৭ টি ফ্র্যাঞ্চাইজি দলের হয়ে টি-২০ লীগে অংশ নিয়েছেন, খেলেছেন ৭৩ টি ম্যাচ। বর্তমানে সেরা ৫ অলরাউন্ডারের মধ্যে আর কারোরই ফ্র্যাঞ্চাইজি ওয়ার্কলোড সাকিবের চেয়ে বেশি না। আরেকটি তথ্য দিয়ে সাকিবের ওয়ার্কলোড বুঝানো যায়। ২০০৬ সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক এবং এখনো খেলছেন এমন ক্রিকেটারদের মধ্যে কেবল সাকিব এবং মুশফিকই এখনো তিন ফরম্যাটের ক্রিকেটে সমানভাবে খেলে যাচ্ছেন। অ্যালিস্টার কুক ২০১৪ থেকে ওয়ানডে খেলেননি, স্টুয়ার্ট ব্রড ফেব্রুয়ারি ২০১৬ থেকে ওয়ানডে খেলেননি, রস টেলর মার্চ ২০১৬ থেকে ওয়ানডে খেলেননি, চামারা কাপুগেদারা ২০০৯ থেকে টেস্ট খেলেননি, উপুল থারাঙ্গা সম্প্রতি টেস্ট থেকে ৬ মাসের বিশ্রামের ঘোষণা দিয়েছেন।
ক্রিকেটে সফলতার দিক থেকে আমরা বড় দেশগুলোর কাতারে যাচ্ছি। এবার নাহয় সমর্থক হিসেবেও আমরা বড় মনের পরিচয় দেই! আমাদের ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় তারার পাশে থেকে, তাঁকে সমর্থন জুগিয়ে। সাকিব আল হাসান যে একজনই হন!
ক্রিকইনফো অবলম্বনে