নবজাতক শিশুদের জন্য জিকা ভাইরাস খুবই ভয়াবহ একটি হুমকি হতে পারে তবে গবেষণায় বের হয়ে এসেছে একটি চমকপ্রদ তথ্য। গবেষকরা বলছেন, জিকা ভাইরাস ব্রেইন ক্যান্সারের মত মরণব্যাধী রোগের চিকিৎসায় উপকার করতে পারে।
নতুন এই গবেষণায় বের হয়ে এসেছে মজার একটি তথ্য। যেসব শিশু এখনো জন্ম নেয় নি, তাদের জন্য জিকা ভাইরাস গর্ভাবস্থায় যেমন ক্ষতিকর হতে পারে, ঠিক তেমনি জিকা ভাইরাসের মধ্যকার উপাদানগুলো বয়স্কদের ব্রেইন ক্যান্সার নিরাময়ে সাহায্য করতে পারে। ল্যাব টেস্টে এখনো এগুলো পরীক্ষাধীন রয়েছে এবং কিছু প্রাণীর ওপর এই পরীক্ষাগুলো চালানো হয়েছে।
তবে মানুষের ওপর প্রয়োগ করবার জন্য এখনো বেশ কিছু পরীক্ষা বাকি রয়েছে।
ধারণা করা হয় যে, জিকা ভাইরাস সাধারণত আমাদের মস্তিষ্কের স্টেমসেলগুলোকে নষ্ট করে ফেলে। এর ফলে দেখা যায়, যেসব মায়েরা সন্তানের জন্ম দেবেন, তাদের গর্ভাবস্থায় সন্তান থাকাকালীন সময়েই নানা ধরণের নিউরোলজিক্যাল সমস্যায় ভুগে থাকে। তবে বয়স্কদের সব স্টেমসেল নষ্ট হয়ে যায় না, যার ফলে জিকা ভাইরাসের প্রভাব তেমন একটা থাকে না।
কিছু কিছু ব্রেইন ক্যান্সারের উপসর্গ এমনভাবে বাড়তে থাকে (যেমন লিওব্লাস্টোমা), যাতে তারা আরো নতুন নতুন টিউমার সেলের জন্ম দিতে বাড়ে, তাদের বিকশিত হতে সাহায্য করতে পারে। কেমোথেরাপি ও রেডিয়েশনের মত থেরাপিগুলোর ক্ষেত্রে দেখা যায় যে লিওব্লাস্টোমা স্টেম সেলগুলো একটু প্রতিরোধকের ভূমিকায় কাজ করে থাকে। অনেক সময় দেখা যায় যে চিকিৎসার পরও এরা ক্যান্সারের কিছু বীজ বপন করতে থাকে মস্তিষ্কে। গবেষকরা ধারণা করছেন যে, জিকা ভাইরাস এই লিওব্লাস্টোমা সেলগুলোকে আক্রমণ করে বিনষ্ট করে দিতে সক্ষম।
“প্রকৃতি আসলে এমন একটি অস্ত্র আমাদের হাতে দিয়ে দিয়েছে যার মাধ্যমে এবার আমরা বোধ করি ক্যান্সারকেও প্রতিরোধ করতে পারব।” ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটি স্কুল অব মেডিসিনের অধ্যাপক মিলান শেডা তার এক বক্তব্যে এই কথা বলেন।
গবেষণায় দেখা যায় যে মানুষের লিওব্লাস্টোমা স্টেমসেলগুলোকে ল্যাব ডিশে জিকা ভাইরাস ধ্বংস করছে। এরপর তারা কিছু সংখ্যক ইঁদুরের ওপর এ পরীক্ষা চালান এবং সেখানে দেখতে পান যে, ইঞ্জেক্ট করবার পর দেখতে পান যে ইঁদুরের ওপরও ঠিক একই ধরণের প্রতিক্রিয়া করছে জিকা ভাইরাস।
এই থেরাপি মানুষের জন্য সুবিধের হবে কি না তা নির্ণয় করার জন্য এখনো অনেক গবেষণা বাকি রয়েছে। বিজ্ঞানীরা এখন দুর্বল ধরণের জিকা ভাইরাস নিয়ে গবেষণা করবেন যাতে তারা মানুষের শরীরে খুব বড় ধরণের সমস্যা সৃষ্টি করতে না পারে।
ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটির আরেকজন গবেষক মাইকেল ডায়মন্ড বলেন,
“আমাদের এই গবেষণা ক্যান্সার রোধ করবার জন্য মাত্র প্রথম পদক্ষেপ। নিউরো-অনকোলজি এবং লিওব্লাস্টোমার চিকিৎসা করবার জন্য এই জিকা ভাইরাস খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান হয়ে উঠছে।”
তবে একটি ব্যাপারে বিজ্ঞানীরা এখনো একমত একটি ব্যাপারে। তা হচ্ছে, মানুষের ওপর গবেষণা চালাবার জন্য এখনো অনেক সময় বাকি রয়েছে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, তারা এমন একটি দ্বারপ্রান্তে ধীরে ধীরে পৌঁছাতে চেষ্টা করছেন, যেখান শুধু ক্যান্সারই নয়, আরো নানা ধরণের কঠিন রোগের নিরাময়ের জন্য ব্যবহার করা হবে জিকা ভাইরাসকে।
এ যেন ঠিক বিষে বিষক্ষয়ের মত, তাই না?
আজ আর নয়, থাকুন প্রিয়লেখার সাথেই।
(তথ্যসূত্রঃ লাইভ সাইন্স)