প্রতি বছরই বিশ্বের সবচেয়ে ধনী দেশগুলোর একটি তালিকা করা হয়। এবং এই তালিকাটি করা হয় জিডিপি পার ক্যাপিটা এর ভিত্তিতে। কোন একটি অর্থবছরে একটি দেশের অভ্যন্তরে যে পণ্য উৎপন্ন হয় তার আর্থিক মূল্যমানকে বলা হয় ওই দেশের জিডিপি। উদাহরণস্বরূপ, ২০১৬ সালে বাংলাদেশের জিডিপি ২২১.৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার মানে ওই বছর বাংলাদেশের অভ্যন্তরে মোট ২২১.৪ বিলিয়ন ডলারের পণ্য উৎপাদিত হয়েছে। এই মোট জিডিপিকে দেশের মোট জনসংখ্যা দিয়ে ভাগ করলে পাওয়া যায় মাথাপিছু জিডিপি, বা জিডিপি পার ক্যাপিটা। এর ভিত্তিতেই সেরা ধনী দেশের তালিকা করা হয়।
১০) সৌদি আরব:
সৌদি আরবের অর্থনীতির সিংহভাগ জুড়ে আছে তেল ও পেট্রোলিয়াম। ১৯৩৮ সালে দেশটিতে পেট্রোলিয়ামের অস্তিত্ব আবিষ্কৃত হওয়ার পর থেকে বিশ্বের সবচেয়ে বড় পেট্রোলিয়াম উৎপাদক ও রপ্তানিকারক দেশে পরিণত হয়েছে সৌদি আরব। বিশ্বের বড় অর্থনীতির দেশগুলোর জোট G-20 তে থাকা একমাত্র আরব দেশ সৌদি। ‘মসজিদের দেশ’ বলে খ্যাত সৌদি আরব বিশ্বের সেরা দশটি ধনী দেশের একটি, তাদের মাথাপিছু জিডিপি ৫৬ হাজার মার্কিন ডলার।
৯) সুইজারল্যান্ড:
ছবির মত সুন্দর এই দেশটি সারা বিশ্বের মানুষের কাছেই এর অপরুপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য বিখ্যাত। প্রতি বছরই সারা বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে মানুষ তাদের অবসর কাটাতে আসেন মনোরম প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অধিকারী এই দেশে। আর এই পর্যটন খাত থেকেই তাদের অর্থনীতির সবচেয়ে বড় যোগানটা পায় সুইজারল্যান্ড। পর্যটন খাত থেকে পাওয়া আয়, সাথে বিপুল বৈদেশিক বিনিয়োগ মিলিয়ে সুইজারল্যান্ডের মাথাপিছু জিডিপির অঙ্কটা সৌদি আরবের সমান ৫৬ হাজার মার্কিন ডলার।
৮) যুক্তরাষ্ট্র:
উন্নত দেশের কথা বললেই সবার আগে আমাদের মাথায় আসে যে দেশটির নাম, সেটি যুক্তরাষ্ট্র। বৈদেশিক বিনিয়োগের জন্য দুনিয়ার অন্যতম বড় স্টক এক্সচেঞ্জ মার্কেট নিউইয়র্ক স্টক এক্সচেঞ্জ মার্কেট। বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী দেশটির অর্থনীতিও যে বিশাল হবে তাতে আর আশ্চর্যের কি! মাথাপিছু ৫৭ হাজার ডলার আয় নিয়ে সবচেয়ে ধনী দেশের তালিকায় যুক্তরাষ্ট্র আছে আট নম্বরে।
৭) সংযুক্ত আরব আমিরাত:
আরব বিশ্বে দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি সংযুক্ত আরব আমিরাতের। দেশটির মোট রাজস্বের বেশিরভাগেরই উৎস তেলের খনি। এছাড়া সারা দেশে, বিশেষ করে দুবাইতে বিপুল সংখ্যক পর্যটক ঘুরতে আসায় পর্যটন খাত থেকেও বড় অঙ্কের অর্থ আসে। পরিসংখ্যান বলছে, ১৯৭১ থেকে ২০১৩ এই কয়েক বছরে দেশটির অর্থনীতি ২৩১ গুণ বেড়ে ১.৪৫ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারে গিয়ে ঠেকেছে! তেল রপ্তানির ক্ষেত্রে আমিরাত দ্বিতীয়, যার প্রতিফলন পরেছে তাদের মাথাপিছু জিডিপিতেও। ৬৮ হাজার মার্কিন ডলার মাথাপিছু জিডিপি নিয়ে আরব আমিরাত আছে সপ্তম স্থানে।
৬) নরওয়ে:
প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর আরেকটি মনোরম দেশ নর্ডিক দেশ নরওয়ে। উন্নত জীবনযাত্রার মানের অধিকারী দেশটির ২০১৬ সালের হিসাব অনুযায়ী মাথাপিছু জিডিপি ৬৮ হাজার মার্কিন ডলার।
৫) কুয়েত:
বিশ্বের অন্যতম ধনী আরব দেশ কুয়েতের অর্থের প্রধান উৎসও তেলের অফুরান ভাণ্ডার। পেট্রোলিয়াম রপ্তানিকারক দেশগুলোর সংগঠন ওপেকের সদস্যদের মধ্যে চতুর্থ বৃহত্তম অর্থনীতি কুয়েতের। রপ্তানি খাত থেকে আগত রাজস্বের ৯৫%ই আসে এই তেল রপ্তানি করে। মোট জিডিপির প্রায় অর্ধেকই আসে তেল বেচে। কুয়েতি ডলারের মান সারা বিশ্বের সব মুদ্রার মানের মধ্যেই সবচেয়ে বেশি। ৭২ হাজার মার্কিন ডলার মাথাপিছু জিডিপি নিয়ে কুয়েতের অবস্থান ৫ম।
৪) ব্রুনেই:
অপরিশোধিত তেল ও গ্যাস রপ্তানি করে প্রতি বছর বিপুল অঙ্কের অর্থ উপার্জন করে ব্রুনেই। ৮০ হাজার মার্কিন ডলার মাথাপিছু জিডিপি নিয়ে ব্রুনেই আছে তালিকার চার নম্বরে।
৩) সিঙ্গাপুর:
এশিয়ার অন্যতম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ সিঙ্গাপুর, সবচেয়ে উন্মুক্ত অর্থনীতির দেশও সিঙ্গাপুরই। বিনিয়োগের জন্য আকর্ষণীয় পরিবেশ ও স্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিস্থিতি মিলিয়ে সিঙ্গাপুর বিদেশি বিনিয়োগকারীদের প্রধান আকর্ষণের জায়গায় পরিণত হয়েছে। সে কারণে দেশটির মাথাপিছু জিডিপির অঙ্কও ৮৫ হাজার মার্কিন ডলার।
২) লুক্সেমবার্গ:
দেশটির অর্থনীতি অনেকাংশেই নির্ভরশীল ব্যাঙ্কিং, স্টীল ও শিল্পখাতের উপর। ইউরোপের ‘গ্রীন হার্ট’ নামে খ্যাত লুক্সেমবার্গ ইউরোপের অন্যতম ধনী দেশ। ২০১৬ সালের হিসাব অনুযায়ী দেশটির মাথাপিছু জিডিপি ৯৪ হাজার মার্কিন ডলার।
১) কাতার:
দেশটির ৭০ শতাংশ রাজস্ব আসে পেট্রোলিয়াম ও তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস বিক্রির অর্থ থেকে। মোট জিডিপির প্রায় ৬০ শতাংশ আসে এই পেট্রোলিয়াম ও তরল গ্যাস থেকে, রপ্তানি আয়ের ৮৫ ভাগও আসে এই খাত থেকেই। মাথাপিছু জিডিপির দিক থেকে কাতারের অবস্থান সবচাইতে উপরে, প্রায় ১ লাখ ৪৬ হাজার মার্কিন ডলার।
তথ্যসূত্র- ওয়ার্ল্ডসটপমোস্ট.কম