৩১ আগস্ট পার হয়ে গিয়েছে। অর্থাৎ ইংল্যান্ডে গ্রীষ্মকালীন দলবদলের সময়সীমা আনুষ্ঠানিকভাবে শেষ হয়েছে। শেষ মুহূর্তের রটনা মিথ্যা করে অ্যালেক্সিস সানচেজ ম্যানচেস্টার সিটিতে না গিয়ে আর্সেনালেই থেকে গিয়েছেন, বার্সেলোনার চারবারের প্রস্তাব উপেক্ষা করে ফিলিপে কুটিনহোকে ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছে লিভারপুল, এবং একেবারে শেষ মুহূর্তে চেলসির প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়ে এভারটনেই থেকে গিয়েছেন রস বার্কলি।
কিন্তু তারপরেও পুরো দলবদলের সময়সীমা জুড়েই দারুণ কিছু দলবদল দেখেছে ফুটবল বিশ্ব। পাগলাটে এক ট্রান্সফার উইন্ডো শেষে সেসবের মধ্য থেকেই সেরা দশ দলবদল বেছে নিয়েছে ফুটবল ওয়েবসাইট গোল ডট কম।
সীড কোলাসিনাচ- শালকে থেকে আর্সেনাল; ফ্রী ট্রান্সফার
এবারের ট্রান্সফার উইন্ডোতে আর্সেনাল ফ্যানেরা খেলোয়াড়দের ক্লাব ছাড়ার সংবাদই শুনেছেন বেশি। অ্যালেক্স অক্সলেইড-চেম্বারলেইন, কিরান গিবস, ওজশিয়েক শেজনি, গ্যাব্রিয়েল পলিস্তারা ক্লাব ছেড়ে গেছেন। শেষ মুহূর্তে ঝামেলা না বাঁধলে অ্যালেক্সিস সানচেজের ম্যানচেস্টার সিটি যাত্রাও প্রায় হয়েই গিয়েছিল। তবে এর মধ্যেও আর্সেনালের জন্য ভালো একটা সাইনিং হয়েছে, জার্মান ক্লাব শালকে থেকে ফ্রীতে লন্ডনে এসেছেন লেফট ব্যাক সীড কোলাসিনাচ।
দারুণ শারীরিক সক্ষমতা সম্পন্ন কোলাসিনাচ গত মৌসুমে বুন্দেসলিগার টিম অফ দি সিজন এ জায়গা করে নিয়েছিলেন। আর্সেনাল যে ফ্রিতে একটা রত্ন পেয়েছে, তা কমিউনিটি শিল্ড ফাইনালে চেলসির বিপক্ষেই ভালোভাবে বুঝিয়ে দিয়েছেন কোলাসিনাচ।
রুবেন নেভেস- এফসি পোর্তো থেকে উলভস; ১৫ মিলিয়ন পাউন্ড
ভবিষ্যৎ আন্দ্রেয়া পিরলো, সার্জিও বুস্কেটস বলা হচ্ছিল যাকে; লিভারপুল, ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড, চেলসির মত ক্লাবগুলো যাকে পেতে আগ্রহী ছিল, সেই রুবেন নেভেস কিনা শেষ পর্যন্ত যোগ দিয়েছেন চ্যাম্পিয়নশিপের ক্লাব উলভসে! প্রায় ১৫ মিলিয়ন পাউণ্ডের বিনিময়ে প্রতিভাবান এই পর্তুগীজ মিডফিল্ডারের দলবদল করিয়েছেন তাঁর এজেন্ট হোর্হে মেন্ডেস।
এফসি পোর্তোর হয়ে প্রায় ১০০ ম্যাচ খেলে ফেলা ২০ বছর বয়সী নেভেস পর্তুগালের হয়েও দুটি ম্যাচ খেলে ফেলেছেন এখন পর্যন্ত। ইংল্যান্ডে যাওয়া সফল হবে কিনা তা সময়ই বলবে, কিন্তু ঠিকমত পরিচর্যা করতে পারলে এই মিডফিল্ডার হয়ে উঠতে পারেন তাঁর জেনারেশনের অন্যতম সেরা মিডফিল্ডার।
রেনাতো সানচেজ- বায়ার্ন মিউনিখ থেকে সোয়ানসি সিটি; ধার
ট্রান্সফার উইন্ডোর শেষ দিকে এসে বায়ার্ন থেকে ধারে প্রিমিয়ার লিগের ক্লাব সোয়ানসি সিটিতে যোগ দিয়েছেন সম্ভাবনাময় তরুণ মিডফিল্ডার রেনাতো সানচেজ। সাবেক বায়ার্ন সহকারী পল ক্লিমেন্ট বায়ার্নে তার যোগাযোগ ব্যবহার করিয়ে সোয়ানসির সাথে এই চুক্তিটি করিয়েছেন।
ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের মত ক্লাবকে পেছনে ফেলে গত মৌসুমে বেনফিকা থেকে ৩৫ মিলিয়ন ইউরোতে রেনাতোকে দলে টেনেছিল বায়ার্ন। গত মৌসুমে বায়ার্নে খুব একটা প্লেয়িং টাইম না পাওয়ায় এই মৌসুমে তাঁকে ধারে পাঠিয়েছেন কার্লো আনচেলত্তি।
পর্তুগালের হয়ে ২০১৬ ইউরো মাতানো মিডফিল্ডারকে ধারে পেতে ৬ মিলিয়ন ইউরো খরচ করতে হচ্ছে সোয়ানসিকে।
ব্লেইস মাতুইদি- পিএসজি থেকে জুভেন্টাস; ১৮.২ মিলিয়ন পাউন্ড
জুভেন্টাসের এই মৌসুমে সেরা সাইনিং বলা যেতে পারে মাতুইদির সাইনিংকে। টাকার ছড়াছড়ি যে বাজারে সে বাজারে মাতুইদির মত বিশ্বমানের মিডফিল্ডারকে মাত্র ১৮.২ মিলিয়ন পাউন্ডে কিনে ভালো সাইনিংই করিয়েছে জুভেন্টাস। ৩০ বছর বয়স হলেও ইউরোপে বল পজিশনিং এর দিক থেকে মাতুইদি অন্যতম সেরা।
বেঞ্জামিন মেন্ডি- মোনাকো থেকে ম্যানচেস্টার সিটি; ৫২ মিলিয়ন পাউন্ড
ডিফেন্ডার কেনার পেছনে এবার দেদারসে খরচ করেছেন পেপ গার্দিওলা। তবে সকলের মধ্যেও আলাদা করে নজর কেরেছেন মেন্ডি। তিনি যে এখন সবচেয়ে দামী ডিফেন্ডার! গতি ও অ্যাথলেটিসিজম মিলিয়ে সিটির জন্য ভালো একজন সাইনিং হতে পারেন মেন্ডি। পেপের মত একজন কোচের অধীনে থেকে নিজেকে আরও শাণিত করতে পারেন এই ফুলব্যাক।
মোহামেদ সালাহ- রোমা থেকে লিভারপুল; ৩৬.৯ মিলিয়ন পাউন্ড
চেলসিতে ফ্লপ করলেও মিশরীয় এই ফুটবলার লিভারপুলের খেলার ধরণের সাথে খুব সুন্দরভাবে খাপ খাইয়ে গেছেন বলেই মনে হচ্ছে। রেকর্ড সাইনিংয়ে লিভারপুলে আসা সালাহ এরই মধ্যে নিজের গতি, ড্রিবলিং ও ফিনিশিং দিয়ে সমর্থকদের মন জয় করে নিয়েছেন। পাঁচ ম্যাচ খেলে এরই মধ্যে ৩ গোল করে ফেলেছেন, আর্সেনালের বিপক্ষে ৪-০ গোলের জয়েও খেলেছেন দুর্দান্ত। প্রিমিয়ার লীগে তাই এবার সালাহ জাদু দেখা যেতেই পারে।
নেমানিয়া মাটিচ- চেলসি থেকে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড; ৪০ মিলিয়ন পাউন্ড
ট্রান্সফার উইন্ডোর শুরুতে মাটিচকে ইউনাইটেডে আনা একপ্রকার অসম্ভবই মনে হচ্ছিল। চেলসির গত মৌসুমে শিরোপা জয়ের পেছনে বড় অবদান ছিল মাটিচের। কিন্তু তারপরেও ৪০ মিলিয়ন পাউন্ডের বিনিময়ে লিগ প্রতিদ্বন্দ্বী ইউনাইটেডের কাছে মাটিচকে ছেড়ে দিয়েছেন কন্তে। প্রিমিয়ার লীগে ইউনাইটেডের হয়ে ৩ ম্যাচেই খেলেছেন এখন পর্যন্ত, মিডফিল্ড নিয়ন্ত্রণও করেছেন দারুণভাবে। মাটিচ আসায় পগবাও খেলতে পারছেন আরও ফ্রি হয়ে। ইউনাইটেডের মিডফিল্ডে তাই এবার বড় অবদানই থাকবে এই সার্বিয়ানের।
কিলিয়ান এম্বাপ্পে- মোনাকো থেকে পিএসজি; ধার
এই ট্রান্সফার উইন্ডো শেষে কেউ কেউ প্রশ্ন তুলে ফেলতেই পারেন, উয়েফার ফিন্যানশিয়াল ফেয়ার প্লে নীতি থাকার মানে টা কোথায়। খ্যাপাটে এক ট্রান্সফার উইন্ডোতে নেইমারের পর এম্বাপ্পেকেও সাইন করিয়ে এবারের দলবদলের সবচেয়ে বড় চমক পিএসজিই দেখিয়েছে।
বাস্তবতা হচ্ছে, এই ফেয়ার প্লে নীতির কারণেই এই ট্রান্সফার উইন্ডোতে এম্বাপ্পেকে পুরোপুরি নিজেদের করে নিতে পারছেনা পিএসজি। এখন এক মৌসুম আপাতত ধারে খেলবেন, পরে ১৬৫.৭ মিলিয়ন পাউন্ডের বিনিময়ে কিনে নেয়ার অপশনও রাখা হয়েছে চুক্তিতে।
১৮ বছর বয়সীর জন্য টাকার অঙ্কটা চোখ কপালে তুলে দেয়ার মতই, কিন্তু গত মৌসুমে ২৬ গোল করা এম্বাপ্পে এই মুহূর্তে বিশ্ব ফুটবলেরই সবচেয়ে প্রতিভাবান তরুণদের একজন।
লিওনার্দো বনুচ্চি- জুভেন্টাস থেকে এসি মিলান; ৪২ মিলিয়ন ইউরো
এই ট্রান্সফার উইন্ডোতে ১১ জন খেলোয়াড় সাইন করিয়েছে মিলান, কিন্তু তাদের মধ্যেও সবচেয়ে আকর্ষণীয় ছিল বনুচ্চির সাইনিং। লিগ প্রতিদ্বন্দ্বী জুভেন্টাস থেকে ৪২ মিলিয়নে বনুচ্চিকে সাইন করিয়ে রীতিমত চমকই দেখিয়েছে মিলান।
বর্তমানে অন্যতম সেরা সেন্টার ব্যাকদের একজন বনুচ্চিকে যে জুভেন্টাস ছাড়বে সেটাই ভাবতে পারেনি কেউ, তাও আবার নতুন করে দল গুছানো মিলানের কাছে। জুভেন্টাসের হয়ে সাত মৌসুমে ৩১৯ ম্যাচ খেলা বনুচ্চি টানা ৬ বার স্কুডেট্টো জিতেছেন তুরিনের ওল্ড লেডিদের হয়ে। ইন্টারের হয়েও একটি লিগ শিরোপা জেতা বনুচ্চি এবার নিজের অষ্টম শিরোপা জিততে চাইবেন মিলানের হয়ে।
নেইমার- বার্সেলোনা থেকে পিএসজি; ২২২ মিলিয়ন ইউরো
নিঃসন্দেহে এই ট্রান্সফার উইন্ডোর সবচেয়ে বড় দলবদল। বিশ্বের সবচেয়ে দামী ফুটবলার হয়ে যাওয়া নেইমার এরই মধ্যে পিএসজির হয়ে লিগ মাতাতে শুরু করেছেন। নিজের অভিষেকে গোল পেয়েছেন, নিজে গোল করছেন, অন্যকে দিয়েও করাচ্ছেন। মোট কথা পিএসজির খেলা এখন নেইমারকে আবর্তিত করেই হচ্ছে। দেখাই যাক, রেকর্ড দলবদলে পিএসজিতে গিয়ে বিশ্ব মাতাতে পারেন কিনা ব্রাজিলিয়ান পোস্টারবয়!