২০০২ সালে মুক্তি জুন মাসে মুক্তি পেয়েছিল ডগ লিম্যান পরিচালিত এবং ম্যাট ড্যামন অভিনীত চলচ্চিত্র দ্য বর্ন আইডেন্টিটি।কথা-সাহিত্যিক রবার্ট লুডলামের লেখা বর্ন ট্রিলজির প্রথম উপন্যাসের উপর ভিত্তি করেই ছবিটি তৈরি করা হয়েছিল। উপন্যাস গুলোর উৎপত্তি হয়েছে, ‘কার্লোস দ্য জ্যাকেল’ হিসেবে পরিচিত ইলিখ রামিরেজ সানচেজকে নিয়ে ১৯৭৫ সালে রচিত দুটি সংবাদপত্রের আর্টিকেল থেকে। এর মূল চরিত্রের নামকরণ করা হয়েছে এন্সেল বর্ন নামের এক অ্যামনেশিয়া রুগীর নামানুসারে। ১৮৮৭ সালে রোডস দ্বীপের এন্সেল বর্ন নামের এক পাদ্রী হঠাৎ করেই নিজের পরিচয় ভুলে গিয়ে পেন্সেলভেনিয়াতে গিয়ে সে ব্রাউন নাম নিয়ে বসবাস শুরু করেন। এর ঠিক তিনমাস পরে হঠাৎ ঘুম থেকে উঠে তিনি আবার গত তিনমাসে ঘটে যাওয়া কিছুই আর মনে করতে পারেন না। তবে মজার ব্যাপার হচ্ছে, জেসন বর্ন ট্রিলজি লেখার আগে লেখক নিজেও কিছুদিনের জন্যে অ্যামনেশিয়া আক্রান্ত ছিলেন। ভালো হওয়ার পরপরই বর্ন সিরিজ লেখার চিন্তা তার মাথায় আসে।
এবার সিনেমায় ফেরা যাক। এর মূল কাহিনী, মার্সেই এর কাছাকাছি কোথাও ইতালিয়ান কয়েকজন জেলে সমুদ্র থেকে উদ্ধার করে গুলিবিদ্ধ এক অজ্ঞান অ্যামেরিকানকে ঘিরে। বোট মেডিক আহত সেই আমেরিকানের শরীর থেকে গুলি বের করার সময় তার কমরের অংশ থেকে বের করে একটি ক্ষুদ্র লেজার প্রজেক্টর। সুস্থ হবার পর সে আবিষ্কার করে বিভিন্ন ভাষায় অনর্গল কথা বলতে পারা ছাড়াও আর্ম-কমব্যাটে তার অসাধারণ দক্ষতা। কিন্তু সে মনে করতে পারেনা সে কে, কি তার পরিচয়! ক্লু বলতে তার কাছে আছে শুধুমাত্র সেই লেজার প্রজেক্টর পাওয়া একটি ডিপোজিটের নাম্বার। পুরো চলচ্চিত্রজুড়েই চলে তার স্মৃতি ফিরে পাবার অভিযান।
থ্রিলারধর্মী এই সিনেমাটির কাহিনী রেট্রগেট অ্যামনেশিয়া আক্রান্ত জেসন বর্নের আসল পরিচয় খুঁজে বের করার উন্মত্ততা নিয়েই। আমাদের অতিপরিচিত একশন-থ্রিলার ঘরানার হওয়া সত্ত্বেও অন্যসব সিনেমা থেকে এটি ছিল বেশ ব্যতিক্রম। সিনেমার একশন সিকুয়েন্স গুলা ক্যামেরাবন্দি করা হয়েছে শেকি-ক্যাম টেকনিক ব্যবহার করে। তাছাড়া কোন ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট না থাকা সত্ত্বেও দ্য বর্ন আইডেন্টিটিটি আসলেই অসাধারণ একটি স্পাই-থ্রিলার সিনেমা। এর চিত্রনাট্য, সিনেমাটোগ্রাফি আবহ সঙ্গীত আপনাকে চমৎকৃত করবে।
দ্য বর্ন আইডেন্টিটি
আইএমডিবিঃ ৭.৯/১০
রটেনটমাটোঃ ৮৩% ফ্রেশ
ছবিতে অভিনয়ে করেছেনঃ ম্যাট ড্যামন, ফ্রাঙ্কা পটেন্টে, ক্রিস কুপার, ব্রায়ান কক্স, ক্লাইভ ওয়েন, আদ্যেল আখিনওয়্যে, গ্যাব্রিয়েল মান, জুলিয়া স্টাইলস, জশ হেমিল্টন, ওয়াল্টন গগিন্স, অর্স মারিয়া গুয়্যেরিনি এবং টিম ডাটন। মুল চরিত্রের জন্য প্রথমে পরিচালক ব্রাড পিটের শরণাপন্ন হোন। কিন্তু স্পাই গেইম ছবির জন্যে পিট বর্ন আইডেন্টিটিতে অভিনয় করতে রাজী হননি।
প্রধান চরিত্রে অভিনয়ে ছিলেন, ম্যাট ড্যামন
পুরো নামঃ ম্যাথিউ পেইজ ড্যামন
জন্মঃ অক্টোবর ৮, ১৯৭০ (বয়স ৪৫)
জন্মস্থানঃ কেমব্রিজ, ম্যাসাচুসেটস, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র
একজন অভিনেতা, চিত্রনাট্যকার, প্রযোজক এবং লোকহিতৈষী। ম্যাটের বাবা একজন স্কটিশ এবং মা ফিনিশ এবং সুইডিশ বংশোদ্ভূত। ম্যাট বড় হয়েছেন আরেক অভিনেতা বেন অ্যাফ্লেকের সাথে (উল্লেখ্য ম্যাট বেনের ১০ম কাজিন)। তার আরেক প্রতিবেশী ছিলেন মার্কিন ইতিহাসবিদ হাওয়ার্ড জিন। পরবর্তীতে হাওয়ার্ড জিনকে নিয়ে নির্মিত ডকুমেন্টারি ‘ইউ ক্যান্ট বি নিউট্রাল অন এ মুভিং ট্রেইন’ এর ন্যারেটর ছিলেন। ছোটবেলা থেকেই ড্যামন নিজেকে অভিনয়ের সাথে পারিপার্শ্বিকভাবে নিযুক্ত করে নেন। তার অভিনয় জীবন শুরু ১৯৮৮ সালে। তবে ১৮ নভেম্বর ১৯৯৭ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘দ্য রেইন মেকার’ চলচ্চিত্রে তিনি প্রথম প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেন। একই বছরের ৫ ডিসেম্বর মুক্তি পায় তার আরেকটি ছবি ‘দ্য গুড উইল হান্টিং’ যার অসাধারণ লিখন এবং চিত্রনাট্যের জন্যে সহ-লেখক বেন আফ্লেকের সাথে যৌথভাবে অস্কার জিতে নেন। এই জুটির কবলে রয়েছে সেরা মৌলিক চিত্রনাট্যের জন্য একাডেমী পুরস্কার এবং শ্রেষ্ঠ চিত্রনাট্যের জন্য গোল্ডেন গ্লোব অ্যাওয়ার্ড। দ্য ট্যালেন্টেড মিস্টার রাইপ্লিতে প্রধান চরিত্রে দুর্দান্ত অভিনয়ের জন্য তিনি গোল্ডেন গ্লোব মনোনয়ন পান। ২০০৯ সালে নির্মিত ইনভিক্টাস চলচ্চিত্রে, ফ্রাঞ্ছুয়া পিয়নার চরিত্রের জন্য শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব অভিনেতার একাডেমী পুরস্কার মনোনয়ন পান। এছাড়াও তিনি অভিনয় করেছেন সেভিং প্রাইভেটর রায়ান, দ্য ডিপার্টেড, ওশেন’স ট্রিলজি এবং দ্য বর্ন ট্রিলজি প্রভৃতি বাণিজ্যিকসফল চলচ্চিত্রে। ২০০৭ সালে পিপল ম্যাগাজিন তাকে ‘সেক্সিয়েস্ট ম্যান অ্যালাইভ’ স্বীকৃতি দেয়তার অভিনীত উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্রঃ দ্য রেইন মেকার, দ্য গুড উইল হান্টিং, সেভিং প্রাইভেটর রায়ান, দ্য গুড শেফার্ড, দ্য ডিপার্টেড, ওশেন’স ট্রিলজি এবং দ্য বর্ন ট্রিলজি, এলিজিয়ুম, দ্য মার্শিয়ান।