কোরবানির ঈদের প্রধান একটি কাজ থাকে মাংসকে ঘিরে। নির্ধারিত অংশ দরিদ্রদের মাঝে বিলিয়ে দিয়ে বাকি মাংসটুকু ঠিকমতো সংরক্ষণ করা, রান্না করা, তা দিয়ে অতিথিদের আপ্যায়ন করা হাজারো ঝক্কির শেষ নেই। এই পুরো সময়টুকু যেন আপনারা নির্বিঘ্নে কাটাতে পারেন তা নিশ্চিত করতেই প্রিয়লেখার ঈদ আয়োজন নিয়ে আমরা আছি আপনাদের সাথে।
মাংস কীভাবে এবং কতোদিন সংরক্ষণ করা যায়, তা নিয়ে বিতর্ক লেগেই আছে। সবাই চায় মাংস অনেকদিন সংরক্ষণ করে ধীরে ধীরে খেতে। বিশেষ করে কোরবানির মাংসের বেলায় এটা খুব বেশি হয়। কিন্তু পুষ্টি গবেষকদের মতে, মাংস অনেকদিন সংরক্ষণ করলে এতে নানান সমস্যা দেখা দেয়। তাই বেশি দিন মাংস ফ্রিজে সংরক্ষণ করলে এর স্বাদ ও পুষ্টিগুণ নষ্ট হয়ে যায়। তবে আজ কোরবানির মাংস সঠিকভাবে সংরক্ষণের কিছু সহজ পদ্ধতি জানিয়ে দেয়া হল।
মাংস সংরক্ষণ করার আগে প্রথম ধাপ হলো ফ্রিজ পরিষ্কার করা। ঈদের আগের দিন ফ্রিজ বন্ধ করে ভেতরের সব মাছ, মাংস বের করে ভেতরটা ভালোমতো পরিষ্কার করে নিন। কারণ মাছ, মাংস রাখতে রাখতে ফ্রিজের ভেতরে একটা বাজে গন্ধ হয়ে যায়। তাই ঈদের আগে ফ্রিজ পরিষ্কার না করে মাংস সংরক্ষণ করলে সেই মাংসে বাজে গন্ধ হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
- ফ্রিজে মাংস রাখতে হলে অবশ্যই পলিথিনে রাখুন। ফ্রিজে পর্যাপ্ত জায়গা থাকলে বক্সে ভরে আলাদা করেও রাখতে পারেন। এক্ষেত্রে মাংস বেশি দিন ভালো থাকবে।
- ফ্রিজে গরুর মাংস তিন থেকে থেকে চার মাস আর খাসির মাংস দুই থেকে তিন মাস পর্যন্ত রেখে দেয়া যেতে পারে। এর বেশি রাখলে সেই মাংসের আর কোনো পুষ্টিগুণই অবশিষ্ট থাকবে না।
- তবে কলিজার বেলায় এই সময়টা আবার ভিন্ন। কলিজা বেশিদিন ফ্রিজে না রাখাই ভালো। এতে স্বাদ একেবারে নষ্ট হয়ে যেতে পারে।
- ফ্রিজে মাংস রাখার আগে মাংস ধুয়ে নিয়ে পানি ভালোমতো ঝরিয়ে রাখুন। এতে মাংস অনেকদিন ভালো থাকবে। মাংস রাখার জন্য প্লাস্টিকের ব্যাগ ব্যবহার করুন। সবচেয়ে ভালো হয় যদি চর্বিসহ মাংসগুলো আলাদা রাখার ব্যবস্থা করতে পারেন।
- অনেকেই বার বার ঝামেলার ভয়ে রান্না করা মাংস ফ্রিজে রেখে দেন। এক্ষেত্রে রান্না মাংস ছোট ছোট বক্সে রাখুন। প্রত্যেকবার বড় বক্স বের করে গরম করা এবং অল্প একটু খেয়ে বাকিটুকু আবার রেখে দিলে মাংসের স্বাদ নষ্ট হয়ে যেতে পারে।
- মাংস প্যাকেট করে ফ্রিজের ভেতর রাখার সময় ২ প্যাকেটের মাঝে মোটা কাগজ বা পাতলা কাঠের টুকরা দিতে পারেন। এতে মাংসের প্যাকেট একটার গায়ের সাথে আরেকটা এঁটে যাবার চিন্তা থাকবে না। রাখার আগে মার্কার দিয়ে পলিথিনের প্যাকেটে তারিখ লিখে রাখুন। এতে মাংস কতোদিন ধরে ফ্রিজে আছে তা সহজেই বের করতে পারবেন।
ফ্রিজ ছাড়া মাংস সংরক্ষণের উপায়ঃ
আর যদি কেউ ফ্রিজ ছাড়া মাংস সংরক্ষণ করতে চান, বিশেষত যারা গ্রামে গিয়ে কোরবানি দিচ্ছেন বা যেখানে ফ্রিজের সুবিধা পাচ্ছেন না তারা নিম্নলিখিত উপায়গুলো অনুসরণ করতে পারেন।
জ্বাল দিয়ে মাংস সংরক্ষণঃ
এটা অনেক প্রাচীন এবং গতানুগতিক একটা পদ্ধতি। মাংস বড় পাত্রে নিয়ে হলুদ আর লবন মাখিয়ে জ্বাল দিয়ে অনেকদিন পর্যন্ত সংরক্ষণ করা যায়। তবে এই পদ্ধতিতে মাংস সংরক্ষণ করতে কমপক্ষে দিনে দুইবার মাংস জ্বাল দিতে হবে যাতে মাংসে ব্যাকটেরিয়া জমে মাংস নষ্ট হয়ে না যায়।
রোদে শুকিয়ে মাংস সংরক্ষণঃ
মাছের শুটকির কথা কে না জানে ? কিন্তু মাংস যে রোদে শুকিয়ে সংরক্ষণ করা যায় সেটা অনেকেরই অজানা। কিন্তু এই পদ্ধতিতে অনেক আগে থেকে গ্রাম-গঞ্জে যেখানে ফ্রিজ নেই সেই এলাকায় মাংস সংরক্ষণ করা হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে মাংস পরিষ্কার করে নিয়ে ছোট ছোট টুকরা করে কেটে রোদে শুকিয়ে সংরক্ষণ করা হয়। মাংস একটা লম্বা তারে শুটকি মাছের মতো করে গেঁথে রোদে শুকাতে হবে। এবারে কমপক্ষে ৫-৬ দিন রোদে শুকিয়ে টিন বা কাঁচের বয়ামে মাংস সংরক্ষণ করা যায়। এই মাংস রান্নার আগে কম পক্ষে ১ ঘণ্টা গরম পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হবে তার পর স্বাভাবিক নিয়মে রান্না করতে হবে।
এবারের ঈদে মাংস সংরক্ষণ নিয়ে আর কোন ঝামেলা হবে না আশা করি! আনন্দে কাটুক সবার ঈদ, প্রিয়লেখা পরিবারের পক্ষ থেকে প্রাণঢালা শুভেচ্ছা সবাইকে।