মালায়ালাম ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি! একটি ভালোবাসার নাম। এই ভালোবাসার সাথে জড়িয়ে আছে ৩১ বছরের এক টগবগে তরুণ। তাকে মলিউডের বরপুত্র বললেও খুব একটা অত্যুক্তি করা হবে না। শুরুটা হয়েছিল শ্রীনাথ রাজেন্দ্রর ‘সেকেন্ড শো’ ছবির মাধ্যমে। মলিউডের আকাশে জ্বলজ্বলে এই তারাটিকে সাদরে বরণ করে নিলেন সবাই। ক্যারিয়ারের প্রথমেই যে অভিনেতা ফিল্মফেয়ারের সেরা ডেব্যুট্যান্টের পুরস্কার বাগিয়ে নিলেন, ঠিক তার পরের বছরেই তিনি ছিনিয়ে নেন সেরা অভিনেতার পুরস্কার। ছবির নাম ছিল উস্তাদ হোটেল (২০১২)। জানান দিলেন তিনি রাজত্ব করতেই এসেছেন।
মালায়ালাম ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি কিংবা মলিউডের ছবি যারা দেখেন, তারা দুলকারকে একনামে চেনেন। দুলকার সালমান!
বাবা মাম্মুথিকে তিনি ছাড়িয়ে যাবেন, একথা অনায়াসে বলে দেয়া যায়। উস্তাদ হোটেলের হাস্যোজ্জ্বল ফায়জাল, রহস্যময় চার্লি কিংবা ব্যাঙ্গালোর ডেইজের আজু- তার অভিনীত সবগুলো চরিত্রই চোখে লেগে থাকার মত। ব্যক্তিগতভাবে আমার কাছে চার্লিই সবসময় এগিয়ে থাকবে। দুলকারকে ভালো লাগার অন্যতম কারণ হচ্ছে তার অভিনয়ের সাথে মানিয়ে যাওয়া যথার্থ লুক।
হিন্দুস্তান টাইমস পত্রিকাকে দেয়া দুলকারের একটি সাক্ষাৎকার পর্ব নিয়েই আমাদের প্রিয়লেখার আজকের আয়োজন। সাক্ষাৎকারটি নেয়া হয়েছিল O k Kanmani ছবির মুক্তি উপলক্ষ্যেঃ
হিন্দুস্থান টাইমসঃ এই ছবিটি তামিল ও তেলেগু দুটো ভাষায় মুক্তি পেতে যাচ্ছে। তেলেগু ইন্ডাস্ট্রিতে আপনার পদার্পণ হচ্ছে তাহলে এবার?
দুলকারঃ দেখুন, এখানে সিনেমাপ্রেমী দর্শক রয়েছেন এবং তাদের কেউ কেউ আমার সাথে নিয়মিত ফেসবুকেও যোগাযোগ করেন। তারা গুগলে বছরের সেরা ছবিটি সম্পর্কে সার্চ করেন, তা দেখেন। ভাষা তাদের কাছে কোন বাঁধা হয়ে দাঁড়ায় না। উস্তাদ হোটেল ছবিটির সময়ে ঠিক এমনটিই হয়েছিল এবং সেখানকার দর্শক ছবিটিকে ভালোবেসেছেন। সত্যি বলতে গেলে, আমার প্রথম ফিল্মফেয়ার পুরস্কার আমি হায়দ্রাবাদেই গ্রহণ করেছিলাম। এ ভাষায় আমার ছবি হতে যাচ্ছে, এটা আমার জন্য খুশির খবর।
হি.টাইমসঃ মনি রত্নমের ছবির নায়ক হবার অভিজ্ঞতাটা কেমন ছিল?
দুলকারঃ যে কোন অভিনেতার জন্যই মনি রত্নমের ছবির নায়ক হওয়া অনবদ্য একটি অভিজ্ঞতা। তার ছবি দেখতে দেখতে আমি বড় হয়েছি। প্রত্যেক অভিনেতাকে তিনি আরেকটু পরিণত হবার সুযোগ দেন যাতে তারা যেন সে চরিত্রটাতে নিজেদের রুপান্তরিত করতে পারে। O.K Kanmani ছবির সময়টিতেও ঠিক একই ঘটনা ঘটেছিল। তিনি আমাকে “আদি” চরিত্রটি সম্পর্কে বলেন, যে চেন্নাইয়ের একজন টেকি গাই (Techie Guy) ছিল। তিনি আমাকে আদি কে, তার চরিত্র কেমন হবে ও এর ইতিহাস সম্পর্কে বললেন এবং বাকিটা আমার ওপরই ছেড়ে দিলেন।
হি.টাইমসঃ আদি কে? তার সম্পর্কে কিছু বলুনঃ
দুলকারঃ সে আমার অপরিচিত কেউ নয়। চেন্নাইতে বেড়ে ওঠা এই আমার সাথে আদির সম্পর্ক আমি রিলেট করতে পেরেছিলাম। আদির কাজ তাকে মুম্বাইতে নিয়ে যায় এবং সে এখানে নিজের জীবনের বড় কিছু সিদ্ধান্ত নেয়। আমি আদি নই, তবে আমি আদিকে জানি।
হি.টাইমসঃ নিত্থিয়া (নিত্থিয়া মেনন) এর সাথে এটা তাহলে আপনার তৃতীয় কাজ?
দুলকারঃ হ্যা। আসলে যাদের আপনি চেনেন, তাদের সাথে কাজ করাটা সবসময়ই উপভোগ্য। ছবিতে যারা কাজ করেন, তারা আসলে জিপসিদের মত। আমরা সেট থেকে সেটে ঘুরতে থাকি, অনেক দিন কাটে শ্যুটিং এর কাজে। স্পট বয় থেকে শুরু করে মেক-আপ আর্টিস্ট, কাস্ট, ফিল্মের ক্রু- সকলেই একটা পরিবারের মত হয়ে যান। আর নিত্থিয়ার সাথে আমার কথা বলতে গেলে প্রথমে বলব উস্তাদ হোটেলের কথা। এখানে তার সাথে আমার দৃশ্য সাকুল্যে কয়েকটি মাত্র ছিল। 100 Days of Love ছবিতে আমাদেরত গল্পটা অন্যরকম ছিল। একটা ট্রেইল, যেখানে একটি মেয়েকে হন্যে হয়ে খুঁজতে হয়। তবে O K Kanmani ছবিতে আমাদের গল্পটা একেবারেই আলাদা।
হি.টাইমসঃ আপনি আপনার নিজের চরিত্রটি একটু বদলের চেষ্টা করছেন? যেখানে ব্যাক টু ব্যাক রোমান্টিক ছবিতেই আপনাকে কাস্ট করা হচ্ছে?
দুলকারঃ দেখুন, এখানে চরিত্রগুলো কিন্তু একেবারেই আলাদা। তারা আলাদা ভাষায় কথা বলে, আলাদা কাপড় পরে এবং নিজেদের ভিন্ন ভিন্ন ঘটনার মাঝে খুঁজে পায়। এ ধরণের ছবিগুলোতে কাজ করে আমি একধরণের মজা পাই যদিও এই দুটোই রোমান্টিক ছবি। আমার নিজেকে নিয়ে কষ্টই করতে হয় নি কারণ, ছবিগুলোর গল্পগুলো ছিল একেবারেই আলাদা।
হি.টাইমসঃ আপনার ছবিগুলো বাছাই করার ক্ষেত্রে মূলত আপনি কি করেন?
দুলকারঃ আমি আমার ইন্সটিংকট নির্ভর কাজ করি। আমি পরিচালকের দিকে তাকাই, যারা যারা এই চলচ্চিত্রের সাথে যুক্ত আছেন তাদের সাথে মিশি। আমার মাঝে একধরণের কনফিডেন্স চলে আসে। ব্যাস, এই তো…
হি.টাইমসঃ আপনার ছবির চরিত্রগুলোর কথা বললে দেখা যায় যে, রান্নার প্রতি আপনার এক ধরণের দূর্বলতা আছে। উস্তাদ হোটেল থেকে শুরু করে 100 Days of Love ছবিতেও আপনাকে রান্নাবান্না করতে দেখা গিয়েছে। এ সম্পর্কে যদি কিছু বলতেন-
দুলকারঃ (সামান্য হেসে) পড়াশোনার জন্য আমি দীর্ঘ একটা সময় বাইরে ছিলাম। বিদেশ বিভূঁইতে থাকলে আপনি দেশের রান্না প্রচন্ড মিস করবেন। আমিও করেছিলাম, বিশেষ করে ভারতীয় স্পাইসি খাবার। আমি চিকেন কারি, রাইস, খিমা এগুলো রান্না করতে পারি। চাইনিজ আর কোরিয়ান খাবার আমার খুব প্রিয়।
হি.টাইমসঃ আপনার বাবা, মাম্মুথির সাথে তুলনাটা আপনি কখনোই এড়িয়ে যেতে পারবেন না। এটা কি আপনার ওপর কোনভাবে প্রভাব ফেলে?
দুলকারঃ মোটেই না। আমি নিজেকে বরং ভাগ্যবান মনে করি তাই তুলনা করা নিয়ে আমার কোন সমস্যা নেই। আমার মনে হয়, বরং এটাই অনিবার্য। তিনি আমার থেকে অনেক ওপরে এবং আমি ভাগ্যবান যে তার সন্তান হতে পেরেছি। আমি ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে নিজের করা কিছু কাজ রেখে যেতে চাই, যাতে দর্শক আমাকে মনে রাখেন।
হি.টাইমসঃ অনেক তরুণরাই আজকাল অনেক ভাষায় ছবি করছেন। আপনিও কি বলিউডে অচিরেই পা রাখতে যাচ্ছেন?
দুলকারঃ আমার কাছে রাস্তা সবসময়ই খোলা আছে। কেউ যদি আমাকে অফার করেন, তাহলে আমি সাথে সাথে সেটা লুফে নেব। তবে আমার ফোকাস সবসময় মালায়ালাম ছবির দিকেই থাকবে। আমি মনে করি, মাল্টিটাস্ক যদি আপনি অতি মাত্রায় করতে থাকেন, তাহলে আখেরে কোনটাই ভালো হবে না। চলচ্চিত্র জগত নানা দুর্বোধ্যতা দিয়ে তৈরি এবং এখানে কাজটা মোটেও সহজ নয়। আমি ছবিতে কাজ করা পছন্দ করি এবং সেটা যখন অনেক মানুষ দেখে, আমার প্রচন্ড আনন্দ হয়।
হি.টাইমসঃ আপনার আসন্ন ছবির জন্য আপনাকে অনেক অনেক শুভকামনা।
দুলকারঃ আপনাকেও ধন্যবাদ।
(ঈষৎ সংক্ষেপিত ও পরিমার্জিত)