যেকোনো দেশের নিরাপত্তায় সেনাবাহিনী খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রতিষ্ঠান। প্রত্যেক দেশের বাজেটের একটা উল্লেখযোগ্য অংশ বরাদ্দ রাখা হয় সেনাবাহিনীর জন্য। সামরিক শক্তি বৃদ্ধির জন্য প্রতি দেশই বিশেষ পদক্ষেপ নিয়ে থাকে। আজ আপনাদের জন্য থাকছে ২০১৭ সালের গ্লোবাল ফায়ারপাওয়ার র্যাঙ্কিং অনুযায়ী বিশ্বের সেরা পাঁচ সামরিক বাহিনীর কথা।
১) যুক্তরাষ্ট্র:
অনুমিতভাবেই বিশ্বের সবচেয়ে সেরা সামরিক বাহিনীর অধিকারী যুক্তরাষ্ট্র। নিজেদের সামরিক বাহিনীর জন্য প্রতি বছর চোখ ধাঁধানো অঙ্কের অর্থ বরাদ্দ রাখে মার্কিন সরকার। বার্ষিক প্রায় ৬১২.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বরাদ্দ রাখা হয় মার্কিন সেনাবাহিনীর জন্য, এই তালিকার বাকি দেশের সামরিক বাহিনীর বাজেটের যোগফলের চেয়েও যা বেশি! প্রায় ১৪ লাখ সেনাসদস্য নিয়ে গঠিত এক বিরাট সেনাবাহিনী যুক্তরাষ্ট্রের। এছাড়া সংরক্ষিত সেনা আছে আরও প্রায় ৮ লাখের মত। আকাশযান তৈরিতে আমেরিকার ধারেকাছেও কেউ নেই। নিজেদের বহরে ১৯ টি এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ার আছে আমেরিকার, যেখানে বিশ্বের বাকি দেশগুলোর একত্রে আছে ১২ টা! এছাড়া প্রযুক্তিগত দিক, যেমন নেভির রেলগান এসব মিলিয়ে মার্কিন সেনাবাহিনীই বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী সেনাবাহিনী।
২) রাশিয়া:
আমেরিকার পর বিশ্বের দ্বিতীয় শক্তিশালী সেনাবাহিনী রাশিয়ার। রুশ সেনাবাহিনীর জন্য বার্ষিক বরাদ্দ বাজেটের পরিমাণ ৭৬.৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। আগামী তিন বছরের মধ্যে এই বাজেট আরও ৪৪% বৃদ্ধি পাওয়ারও সম্ভাবনা রয়েছে। সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর থেকে, বিশেষ করে ২০০০ সালে ভ্লাদিমির পুতিন রাশিয়ার দায়িত্বে আসার পর থেকেই ক্রমাগত বেড়েছে রুশ সেনাবাহিনীর শক্তি ও আর্থিক বরাদ্দ। ২০০৮ সালের পর থেকে এক তৃতীয়াংশ বৃদ্ধি পেয়েছে রুশ সেনাবাহিনীর জন্য বরাদ্দকৃত অর্থের পরিমাণ। রুশ সেনাবাহিনীর সদস্যসংখ্যা ৭ লাখ ৬৬ হাজার। এছাড়া বাহিনীতে আছে প্রায় ১৫ হাজার ট্যাঙ্ক, বিশ্বের আর কোন সেনাবাহিনীতে এত ট্যাঙ্ক নেই। পারমাণবিক অস্ত্রের দিক থেকেও রাশিয়া বিশ্বের সেরা, প্রায় সাড়ে ৮ হাজার নিউক্লিয়ার ওয়ারহেড আছে রাশিয়ার অস্ত্রভাণ্ডারে, যেখানে আমেরিকার আছে প্রায় সাড়ে ৭ হাজার।
৩) চীন:
আনুষ্ঠানিক হিসাব অনুযায়ী, চীনের সামরিক বাহিনীর জন্য বার্ষিক বরাদ্দ বাজেট ১২৬ বিলিয়ন ডলার। সাম্প্রতিক সময়ে যেভাবে এই খাতে বিনিয়োগ বাড়িয়েছে চীন, তাতে করে সামনের কয়েক বছরে এই বিনিয়োগ বাড়তে পারে আরও ১২.২%। চীনা সেনাবাহিনীর নিয়মিত সদস্য সংখ্যা প্রায় ২৩ লাখ, এছাড়া সংরক্ষিত সেনা আছে আরও প্রায় ২৩ লাখ। ২৫ হাজার স্থলযান আছে চীনা বাহিনীতে, আছে ২৮০০ আকাশযান। প্রায় ৩০০ পারমাণবিক অস্ত্র আছে এই বাহিনীর অধীনে। সংবেদনশীল সামরিক তথ্য জোগাড়ের ব্যাপারে সুনাম আছে এই সেনাবাহিনীর।
৪) ভারত:
নিজেদের বিশাল জনসংখ্যাকে কাজে লাগিয়ে বড়সড় একটা সেনাবাহিনী গড়ে তুলেছে ভারত। নিয়মিত সেনাসদস্য ১৩ লাখেরও বেশি, সংরক্ষিত সৈন্য মিলিয়ে যা দাঁড়ায় ৩৫ লাখের কাছাকাছি। ১৬ হাজার স্থলযানের পাশাপাশি ট্যাঙ্ক আছে সাড়ে ৩ হাজার, আকাশযান আছে ১৭৮৫ টি। ভারতের যা ব্যালিস্টিক মিসাইল আছে তা দিয়ে পুরো পাকিস্তান আক্রমণ করার সামর্থ্য রাখে ভারত। দেশটির বর্তমান ডিফেন্স বাজেট ৪৬ বিলিয়ন ডলার, সামনে যা আরও বাড়ার কথা রয়েছে। সামরিক দ্রব্যাদি আমদানির দিক থেকে ভারত বিশ্বে সবচেয়ে এগিয়ে।
৫) যুক্তরাজ্য:
বাকি দেশগুলো যেখানে সেনাবাহিনীর কলেবর বৃদ্ধি করছে দিন দিন, যুক্তরাজ্যের সেনাবাহিনী সেখানে হ্রাস করার কথা ভাবছে! ২০১৮ সালের মধ্যে সেনাবাহিনীর কলেবর ২০% হ্রাস করার কথা ভাবছে যুক্তরাজ্যের প্রশাসন। বর্তমানে যুক্তরাজ্যের সেনাবাহিনীর জন্য বার্ষিক বরাদ্দকৃত বাজেট ৫৪ বিলিয়ন ডলার। নিয়মিত সেনাসদস্য ২ লাখ ৫ হাজার, আকাশযান ৯০৮ টি ও নৌযান ৬৬ টি। যানের সংখ্যা তুলনামূলক কম হলেও কঠিন প্রশিক্ষণ ব্যবস্থার কারণে যুক্তরাজ্যের সেনাবাহিনী বিশ্বের সেরা সেনাবাহিনীর একটি।