চোখ বন্ধ করে কোন ঘটনা মনে করবার চেষ্টা করেছেন? ধরুন, একটি চোখের সামনেই খুব গুরুত্বপূর্ণ কোন ঘটনা ঘটে গিয়েছে। আপনি তা মনে করবার খুব চেষ্টা করছেন কিন্তু পারছেন না। চোখ বন্ধ করে ঘটনাস্থলে চলে গিয়েছেন। কি হচ্ছে, কেমন করে ঘটছিল তা মনে করার চেষ্টা করছেন। আবছাভাবে কিছু মনে আসছে, কিছু মনে আসছে না। এমন যদি হয়, পুরো ঘটনাটিই আপনার চোখের সামনে ফিল্মের মত ভাসছে? কেমন হবে তাহলে?
আপনি কি জানেন আমাদের কোষের ডি এন এ কতটুকু তথ্য ধারণে সক্ষম? বিজ্ঞানীদের একটি গবেষণায় জানা গিয়েছে, আমাদের একটিমাত্র ডি এন এ সূত্রকে যে পরিমাণ তথ্য সংরক্ষণ করা যায়, তা পড়তে পড়তে প্রায় ৩৭ বছর লেগে যাবার কথা। এবার চিন্তা করে দেখুন আমাদের শরীরে লক্ষ লক্ষ ডি এন এ রয়েছে। তাদের সংরক্ষিত তথ্যের পরিমাণ কত হবে!
যদি আপনার মনে হয়ে থাকে ফ্ল্যাশ ড্রাইভে তথ্য সংরক্ষণ আর করা যাচ্ছে না, তাহলে একটু বিজ্ঞানীদের জন্য অপেক্ষা করুন। শুনে আসি তারা কি বলছেন। গবেষকরা কিছু ডাটাকে এনকোডেড আকারে ব্যাকটেরিয়ার ডি এন এ মলিক্যুলে সংরক্ষণ করার চেষ্টা করছেন, যেখানে একটি শর্টফিল্ম তৈরি করা যায়। জেনেটিক কোড থেকে তথ্য উদ্ধার করার পর ছবিটি চালু করার কাজেও তারা সফল হয়েছেন।
এই কাজটি করবার জন্য বিজ্ঞানীরা ১৮৭০ সালের একটি ঘোড়দৌড়ের পাঁচটি ছবির ফ্রেম নিয়েছেন। এরপর তারা ফ্রেমগুলোকে ভেঙে সুবিধেমত পিক্সেলে ভাগ করে নেন এবং প্রতিটি পিক্সেলের জন্য আলাদা করে কোড নির্মাণ করেন। ছবির মাঝে থাকা এই কোডে পিক্সেলের রঙ সম্পর্কিত তথ্য এবং তাদের অবস্থান সম্পর্কিত তথ্য জমা থাকে।
এরপর গবেষকরা ডি এন এ এর এই সংক্ষিপ্ত নির্যাস ব্যাকটেরিয়ার ভেতরে প্রবেশ করিয়ে দেন এবং ব্যাকটেরিয়া তাদের মাঝে এই নির্যাস আত্মস্থ করে নেয়। সাধারণত ব্যাকটেরিয়ার ধর্মই এটি। প্রায় ৯০ শতাংশ একিউরেসি বা যথার্থতার মাধ্যমে ব্যাকটেরিয়ার জিনোম কোড থেকে এই শর্টফিল্ম তৈরি করা সম্ভব হয় বিজ্ঞানীদের জন্য।
যদিও আপাতদৃষ্টিতে দেখলে মনে হবে এই প্রকল্পে খুব বেশি কিছু করবার নেই এবং আমাদের জীবনে এর কাজ খুব সামান্য, তবে বিজ্ঞানীরা কিন্তু আশার বাণী শুনিয়েছেন। তারা বলছেন, এই গবেষণার ফলাফলের ওপর ভিত্তি করে তারা সামনে আরো যুগান্তকারী কিছু ঘটানোর আশা করছেন।
বোস্টনের হার্ভার্ড মেডিকাল স্কুলের একজন গবেষক, সেথ শিপম্যান বলেন,
“আমাদের মূল লক্ষ্য ব্যাকটেরিয়ার অভ্যন্তরে শর্টফিল্ম সংরক্ষণ করা নয়।”
এর পরিবর্তে বিজ্ঞানীরা চাইছেন এক ধরণের “মলিক্যুলার রেকর্ডার” তৈরি করতে যা জীবের প্রতিটি কোষের মাঝে কোন ঘটনা রেকর্ড করবার এবং তা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে প্রচার করবার ক্ষমতা রাখবে। বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, যেসব ঘটনাবলী খালি চোখে দেখা যায় না, তা এর মাধ্যমে সমাধান হবে। যেমন আমাদের মস্তিষ্কের উন্নয়ন কেমন করে ঘটে, বিকাশ হয়, তা এই ঘটনার মাধ্যমে এখন থেকে আমরা জানতে পারব।
শিপম্যান আরো বলেন, “আমরা চাই প্রতিটা কোষ হোক একেকটি ইতিহাসবিদ। আমরা এমন একটি জীবতাত্ত্বিক সংরক্ষানাগার তৈরি করতে যাচ্ছি যেখানে নানা বিষয়, নানা ঘটনা, নানা ইতিহাস, প্রযুক্তি একসাথে সংরক্ষিত হয়ে থাকবে। প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে মানুষের ডি এন এতে সংরক্ষিত হয়ে থাকবে ইতিহাস। সে লক্ষ্যেই আমরা কাজ করে যাচ্ছি।”
তবে আরো অসুবিধাও কিন্তু আছে। পরীক্ষার হলে ছাত্ররা তাহলে কেমন করে পরীক্ষা দেবে যদি যদির মত সব পড়া তাদের চোখের সামনে ভাসতে থাকে? বেশ মজার! তাই না?
নেচার জার্নালে এই গবেষণাটি প্রকাশিত হয়েছিল।
আমরা চাই বিজ্ঞানীরা তাদের এই কাজে সফল হোক। আমাদের সামনে আসুক জানা অজানার আরো নতুন নতুন অনেক তথ্য। শিহরিত হই আমরা, জ্ঞানের আরো নানা দুয়ার খুলে যাক একইসাথে।
আজ এ পর্যন্তই। প্রিয়লেখার সাথেই থাকুন। সকলের প্রিয় হয়ে উঠুন।
তথ্যসূত্রঃ লাইভ সাইন্স
https://www.livescience.com/59791-dna-movie.html