পেপ গার্দিওলার বার্সার একচ্ছত্র আধিপত্যের সময়ে কি কি না চেষ্টা করেছেন ফ্লোরেন্টিনো পেরেজ! মিলিয়ন মিলিয়ন ইউরো খরচ করেছেন তারকা খেলোয়াড়দের পেছনে, হোসে মরিনহোকে কোচ করে নিয়ে এসেছে, এমনকি কাতালান ক্লাবটির উপর চাপ তৈরির জন্য মিডিয়াকে ব্যবহার করেছেন কখনো কখনো। লাভ হয়নি কোনোটাতেই।
এতসব কিছু করলেও যেটা করার দরকার ছিল, সেটিই করেননি পেরেজ। দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা। বার্সার অমন মায়াঞ্জন বুলানো পারফরম্যান্সের পেছনেও ছিল এই দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা। অমন দুর্দান্ত একটি দল তৈরি করতে বহু বছরের পরিকল্পনা ও শ্রম দিতে হয়েছে বার্সাকে, তার ফসলও তারা হাতেনাতেই পেয়েছে।
তখন বুঝতে না পারলেও ফ্লোরেন্টিনো পেরেজ এখন এসে সাফল্যের মন্ত্র বুঝতে পেরেছেন। পেরেজের এই বোধোদয়ের ফল ৫ বছর পর এবার এসে পেতে শুরু করেছে মাদ্রিদ। বার্সার সেই মন্ত্রেই যেন সঞ্জীবনী শক্তি খুঁজে পেয়েছে মাদ্রিদ। একের পর এক অবিবেচকের মত সিদ্ধান্ত ও অদূরদর্শী কার্যকলাপে যেখানে নিজেদের জায়গা নড়বড়ে করে ফেলছে বার্সা, রিয়াল সেখানে ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত করছে খুবই বুদ্ধিমত্তার সাথে।
ইঙ্গিতটা গত বছরেই পাওয়া হয়ে গিয়েছিল যে সুদিন ফিরতে যাচ্ছে রিয়ালের। ৫ বছর পর লিগ জিতেছে, সাথে ব্যাক টু ব্যাক চ্যাম্পিয়ন্স লিগ, আর তাতে তরুণদের অবদানটাই ছিল সবচেয়ে বেশি। ইস্কো, মোরাতা, ক্যাসেমিরো, অ্যাসেন্সিও, কোভাচিচ, কারভাহাল, ভারানেদের মত তরুণেরা প্রতিনিয়ত নিজেদের ছাড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছেন, ছাড়িয়ে গিয়েছেন।
মোরাতা আর হামেস বাদে বাকি সব তরুণ খেলোয়াড়েরাই রয়ে গেছেন, সাথে যোগ হয়েছেন আরও দুই তরুণ থিও হার্নান্দেজ ও দানি সেবায়োস। এই তরুণদের বয়সের দিকে একবার তাকালেই মাদ্রিদের সুপরিকল্পনা স্পষ্ট হয়ে উঠে। কারোর বয়সই ২৫ এর বেশি না। অ্যাসেন্সিও ২১, ইস্কো ২৫, ক্যাসেমিরো ২৫, কারভাহাল ২৫, ভারানে ২৪, কোভাচিচ ২৩। আর নতুন দুই সাইনিং তো আরও কম বয়সী। থিওর বয়স সবে ১৯, সেবায়োসও এখনো ২১ পেরোননি, খেলেছেন সদ্য সমাপ্ত অনূর্ধ্ব ২১ ইউরোতেও। এমনকি লুকাস ভাস্কুয়েজ ও টনি ক্রুসের বয়সও মাত্র ২৬ ও ২৭!
গত এপ্রিলে বার্নাব্যুতে শ্বাসরুদ্ধকর ক্লাসিকো ৩-২তে জেতার পর বার্সা ডিফেন্ডার জেরার্ড পিকে চেঁচিয়ে চেঁচিয়ে বলেছিলেন, ‘আমরা অসীম ব্যবধানে মাদ্রিদের থেকে ভালো’। কিন্তু বাস্তবতা বলছে, পিকের সেই দাবি বর্তমান সময়ে এসে অন্তত খাটছে না। দুই ক্লাবের ফর্ম, পরিকল্পনা, পরিকল্পনার বাস্তবায়ন, দূরদৃষ্টি- সবই যেন বিপরীতমুখী। জাভির কোন উপযুক্ত বিকল্প না এনে আন্দ্রে গোমেজ ও পাউলিনহোর মত মিডফিল্ডারদের এনে ক্রমাগতভাবে মেসি ও ইনিয়েস্তার উপর চাপ বাড়ানো হচ্ছে। দানি আলভেজের শূন্যতাও এখনো ঠিকভাবে কাটিয়ে ওঠা যায়নি। আর নেইমারের দলবদলে পাওয়া অর্থ কোথায় কার পেছনে খরচ করবে সেটাই যেন বুঝে উঠতে পারছে না বার্সা বোর্ড!
সেদিকে মাদ্রিদ বোর্ড একের পর এক দুর্দান্ত সাইনিং করিয়ে চলেছে। শুধু যে বয়সে কম খেলোয়াড় এনেছে তাই না, এমন সব খেলোয়াড় এনেছে, যারা আগামী দিনে নিজেদের পজিশনে বিশ্বসেরা হওয়ার সামর্থ্য ও প্রতিভা রাখে। আর যাই হোক অন্তত অপাত্রে কাড়ি কাড়ি খরচ করেনি এবার মাদ্রিদ।
নিজেদের দর্শনটাই এভাবে বদলে নিয়েছে মাদ্রিদ। ‘এমন সব প্লেয়ারকে কিনো, যারা বর্তমান দলেও খাপ খাওয়াতে পারবে, আবার ভবিষ্যতেও ক্লাবকে সুরক্ষা দেবে’। এর পেছনে পেরেজের অবদান যতটা, কোচ জিদানের অবদান বোধহয় তার চেয়ে কোন অংশে কম নয়। ‘নয় বছর হল বার্সায় আছি, এই প্রথম মাদ্রিদকে আমাদের চেয়ে ভালো মনে হচ্ছে’- সুপার কাপের দুই লেগেই হারার পর পিকের স্বীকারোক্তিটাই বোধহয় বলে দেয়, রিয়ালের হল শুরু, বার্সার হল সারা!
গোল ডট কম থেকে অনুবাদকৃত