একসময় একটা মজার কৌতুক বেশ প্রচলিত ছিল। তরুণ বয়সের মেসি এক সুন্দরী রমণীর সাথে বেডরুমে অন্তরঙ্গ অবস্থায় সময় কাটাচ্ছেন। অন্তরঙ্গতা কেবল ঘনিষ্ঠতার দিকে পর্যবসিত হচ্ছে, এমন সময় মেসি বিছানা ছেড়ে উঠে গেলেন, এবং রুমের বাইরে চলে গেলেন। কিছুক্ষণ পরে তিনি আরও দুই জনকে সঙ্গে করে ফিরে এলেন। মেয়েটি অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল, এসব কি হচ্ছে? মেসি তখন জবাব দিলেন, ‘আমি দুঃখিত। কিন্তু আমি জাভি ও ইনিয়েস্তাকে ছাড়া কিছু করতে পারব না!’
বার্সা ফ্যানেরা খেপে যাবেন না, এটি নিছকই কৌতুক মাত্র। কিন্তু বার্সেলোনা ফরোয়ার্ডের ক্যারিয়ারের শুরুর সময় এমনটাই মনে করতেন অনেকে। মেসির এমন জাদুকরী পারফরম্যান্স নাকি জাভি-ইনিয়েস্তা জুটির দুর্দান্ত রসায়নেরই ফসল। জাভি ও ইনিয়েস্তাকে ছাড়া নাকি মেসি অচল, যার প্রমাণ আর্জেন্টিনার জার্সি গায়ে মেসির পারফরম্যান্স।
পরবর্তীতে অবশ্য মেসি সবই ভুল প্রমাণ করেছেন। জাভি-ইনিয়েস্তা থাকুক কিংবা না থাকুক, মেসি নিজের প্রতিভা মেলে ধরতে পারেন সমানভাবে। বহুবার সেটি করেও দেখিয়েছেন। আর্জেন্টিনার জার্সি গায়েও দলকে টানা ৩ টি আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টের ফাইনালে তুলেছেন। জাভি চলে যাওয়ার পর মিডফিল্ডের দায়িত্ব সামলাতে হয়েছে অনেকটা, যার কিছুটা হলেও প্রভাব পরেছে মেসির গোল ট্যালিতে। জাতীয় দলকে এখনো কোন আন্তর্জাতিক সাফল্য এনে দিতে পারেননি, চাপ আছে সেটিরও। তারপরেও কিছুটা ঝুঁকি নিয়ে বোধহয় বলেই দেয়া যায়, এই মৌসুমই হতে যাচ্ছে লিওনেল আন্দ্রেস মেসির ক্যারিয়ারের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।
জাভি বিদায় নিয়েছেন বেশ কয়েক বছর। ইনিয়েস্তা ছিলেন, ছিলে দানি আলভেজও। মেসির বার্সা ক্যারিয়ারে মেসিকে সবচেয়ে বেশি গোলের যোগান দিয়েছেন যিনি। গত মৌসুমে বিদায় নিয়েছিলেন সেই দানিও। ইনিয়েস্তা এখনো বিদায় নেননি, তবে বেলা শেষের গান শুনতে পাচ্ছেন তিনিও। তারপরেও গত তিন মৌসুমে মেসি ছিলেন অসাধারণ হয়েই, যার মূলে ছিল মেসি-সুয়ারেজ-নেইমার তথা এমএসএন ত্রয়ী।
সেই এমএসএনও আজ ইতিহাস। নেইমার তো মাসের শুরুতেই পিএসজিতে পাড়ি জমিয়েছেন, রিয়াল মাদ্রিদের বিপক্ষে সুপার কাপের দ্বিতীয় লেগে হাঁটুর ইনজুরিতে পরে কমপক্ষে এক মাসের জন্য মাঠের বাইরে ছিটকে পরেছেন সুয়ারেজও। জাভি-ইনিয়েস্তা নেই, দানি আলভেজ নেই, নেইমার-সুয়ারেজও নেই। মেসি এবার আক্ষরিক অর্থেই একা!
রিয়াল মাদ্রিদ যেখানে রোনালদোকে ছাড়াই প্রতিপক্ষকে নিয়ে ছিনিমিনি খেলার মত স্কোয়াড বানিয়ে বসে আছে, বার্সেলোনা সেখানে পুরোপুরি মেসির উপর নির্ভরশীল হয়ে পরেছে। শুধু নির্ভরশীল বললেও হয়তোবা কিছুটা কম বলা হয়ে যায়, বলা চলে মেসির উপর অতিনির্ভরশীলই হয়ে পরেছে কাতালানরা।
নিজের সেরাটা দেয়ার পরেও বার্নাব্যুতে দলকে উদ্ধার করতে পারেননি মেসি। মেসি নিজে অবশ্য এত তাড়াতাড়ি আশা হারাচ্ছেন না। সুপারকাপই সব না, পুরো মৌসুমই সামনে পরে আছে বলে সতীর্থদের উজ্জীবিত করার চেষ্টা করছেন।
কিন্তু বাস্তবতা হল, মেসি একা পুরো দলকে সারা মৌসুম ধরে টানতে পারবেন না। দলীয় সামর্থ্য ও বোঝাপড়া বাড়াতে না পারলে বিশ্বের অন্যতম সেরা ফুটবলারও বোধহয় বার্সাকে রক্ষা করতে পারবেন না এবার!