মৌসুম শুরুর আগে টানা চারটি প্রস্তুতি ম্যাচে হেরেছিল জিনেদিন জিদান শিষ্যরা। অনেকেই তখন সন্দেহ প্রকাশ করেছিলেন, আগের মৌসুমের প্রায় অপরাজিত রিয়ালকে কি তবে পাওয়া যাবেনা এই মৌসুমে? উত্তর দিতে বেশি সময় নেয়নি মাদ্রিদ। লিগ শুরুর আগেই দুইটি সুপার কাপ জিতে বুঝিয়ে দিয়েছে, এই রিয়ালের জয়রথ এত সহজে থামবার নয়।
সাথে তুলে দিয়েছে একটি প্রশ্নও, বর্তমান ক্লাব ফুটবলে রিয়াল মাদ্রিদের স্কোয়াডই কি সবচেয়ে ভারসাম্যপূর্ণ এবং শক্তিশালী? টানা দ্বিতীয় চ্যাম্পিয়ন্স লিগ শিরোপা জয়ের সাথে লিগ শিরোপাও জিতেছে গত বছর, ৫৮ বছর পর একই মৌসুমে লিগ ও চ্যাম্পিয়ন্স লিগ শিরোপা জিতেছে জিদানের রিয়াল। এই মৌসুমেও ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ও বার্সেলোনার কাছে অপ্রতিরোধ্য মাদ্রিদ।
গত মৌসুমের দুই গুরুত্বপূর্ণ সদস্য আলভারো মোরাতা ও হামেস রদ্রিগেজ, সাথে পেপে, কোয়েন্ত্রাও, দানিলো, লরেন্তে, মারিয়ানোরা চলে গেলেও উয়েফা সুপার কাপ ও স্প্যানিশ সুপার কাপের দুই লেগের খেলা দেখে একদমই মনে হয়নি, রিয়ালের শক্তি একটুও কমেছে। বরং মাদ্রিদের স্কোয়াডের গভীরতা ও তাদের ব্যাকআপ প্লেয়ারদের মান দেখলে ইউরোপের অনেক শীর্ষ ক্লাবেরই ঈর্ষার উদ্রেক হবে।
হামেস ও মোরাতা চলে গেলেও মৌসুম শুরুর আগেই ভালো দুটি সাইনিং করিয়েছে মাদ্রিদ, যা তাদের স্কোয়াডের গভীরতা বৃদ্ধি করেছে আরেক ধাপ। আলাভেসের হয়ে গত মৌসুমে নজরকাড়া ডিফেন্ডার থিও হার্নান্দেজকে নগর প্রতিদ্বন্দ্বী অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের থেকে ৩০ মিলিয়ন ইউরো দিয়ে নিয়ে এসেছেন জিদান। থিওর জন্য মূল্য ছিল আসলে ২৪ মিলিয়ন, কিন্তু নগর প্রতিদ্বন্দ্বীদের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে অতিরিক্ত ৬ মিলিয়ন খরচ করেছেন পেরেজ।
মূলত মার্সেলোর ব্যাকআপ হিসেবে কেনা থিওকে এখন থেকেই আগামী দিনের অন্যতম সেরা লেফট ব্যাক হিসেবে দেখা হচ্ছে। জিদান যেভাবে দলকে রোটেট করে খেলান, তাতে করে মার্সেলো প্রথম পছন্দ হলেও থিও যে ভালই প্লেয়িং টাইম পাবেন সেটা বলে দেয়া যায়। এমনকি প্রয়োজনে ৪-৪-২ ফর্মেশনে উইঙ্গার হিসেবেও খেলতে পারেন থিও। ফ্রি কিকেও বেশ দক্ষ এই লেফট ব্যাক।
আরেক নবাগত দানি সেবায়োস। স্পেনের হয়ে অনূর্ধ্ব ২১ ইউরোতে আলো ছড়ানো মিডফিল্ডারকে ১৭ মিলিয়ন ইউরোতে রিয়াল বেতিস থেকে নিয়ে এসেছে মাদ্রিদ। এখানেও একই কৌশল অবলম্বন করেছেন পেরেজ। ১৫ মিলিয়নেই কেনার সুযোগ থাকলেও সুসম্পর্ক বজায় রাখার জন্য অতিরিক্ত ২ মিলিয়ন খরচ করেছেন মাদ্রিদ প্রেসিডেন্ট।
বর্তমানে নজর দেয়ার পাশাপাশি একইসাথে ভবিষ্যৎও সুরক্ষিত করছে ক্লাবটি। এরই মধ্যে চুক্তি করে ফেলেছে ব্রাজিলের ভবিষ্যৎ সুপারস্টার খ্যাত ১৭ বছর বয়সী ফ্ল্যামেঙ্গো স্টার ভিনিসিয়াস জুনিয়রের সাথে। নিজের ১৮ তম জন্মদিনের পরেই মাদ্রিদের স্কোয়াডে যোগ হবেন এই ব্রাজিলিয়ান। বার্সা যেখানে ব্রাজিলের বর্তমান সুপারস্টারকে হারিয়েছে, মাদ্রিদ সেখানে ব্রাজিলের ভবিষ্যৎ সুপারস্টারকে নিশ্চিত করেছে।
রিয়ালের গত মৌসুমের সাফল্যে বড় একটা অবদান রেখেছিলেন আলভারো মোরাতা। বেশিরভাগ সময় বদলি হিসেবে খেলেও ২০ গোল করেছিলেন এই স্প্যানিশ স্ট্রাইকার। এই মৌসুমে মাদ্রিদ ছেড়ে চেলসিতে গেলেও এখনো পর্যন্ত তার কোন বিকল্প কেনেননি জিদান। করিম বেনজেমার ব্যাকআপ হিসেবে খেলতে পারেন বোরয়া মায়োরাল।
সুপার কাপের দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের পর মূল একাদশে মার্কো অ্যাসেন্সিওর আরও বেশি সুযোগ পাওয়া উচিত। অ্যাসেন্সিওর সাথে জিদানের আরেক বড় অস্ত্র হবেন লুকাস ভাস্কুয়েজ। ইনজুরি কাটিয়ে ফিরেছেন গ্যারেথ বেল, সাথে ইস্কোও আছেন অসাধারণ ফর্মে। নতুন কোন সেন্টার ফরোয়ার্ড না কিনলেও তাই মাদ্রিদের স্কোয়াড যথেষ্টই ভারসাম্যপূর্ণ।
ডিফেন্সেও ব্যাকআপের কমতি নেই রিয়ালের। অধিনায়ক সার্জিও রামোস ও রাফায়েল ভারানের বিকল্প হিসেবে থাকছেন নাচো ও গত মৌসুমে ধারে ফ্রাঙ্কফুর্টে খেলা স্প্যানিশ অনূর্ধ্ব ২১ দলের ডিফেন্ডার হেসুস ভ্যালেহো।
কোচ জিদানও তার হাতে থাকা স্কোয়াড নিয়ে যথেষ্টই খুশি, ‘আমি আমার স্কোয়াড নিয়ে সন্তুষ্ট। আগেও বলেছি, ৩১ আগস্ট পর্যন্ত যেকোনো কিছুই হতে পারে, সেটা আমার নিয়ন্ত্রণের বাইরে। আমি শুধু এটুকুই বলতে পারি, আমার হাতে যেসব খেলোয়াড় আছে, আমি তাদের নিয়ে খুবই খুশি’।
খুশি হওয়ারই কথা। নতুন কোন নাম্বার নাইন ছাড়াও যে মাদ্রিদই ইউরোপের সবচেয়ে শক্তিশালী দল এখন! স্কোয়াডের গভীরতার দিকে থেকে মাদ্রিদের কাছাকাছি আসতে পারে কেবল বায়ার্ন মিউনিখ। পিএসজিও নেইমারকে নিয়ে বেশ শক্তিশালী হয়েছে এবার। আর নেইমারকে হারিয়ে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী বার্সেলোনা এখন হতবিহবল। নিজেদের পুরনো খেলার স্টাইলটাই অনেকটা হারিয়ে গেছে কাতালানদের।
মাদ্রিদের স্কোয়াড কতটা শক্তিশালী তার সবচেয়ে ভালো প্রমাণ বার্সেলোনার বিপক্ষে সুপার কাপের দুই লেগের ম্যাচ। প্রথম লেগে রোনালদো শুরু থেকে খেলেননি, লাল কার্ড পেয়ে মাঠও ছেড়েছেন আগে আগে। তারপরেও ন্যু ক্যাম্প থেকে ৩-১ গোলের জয় নিয়ে ফিরেছে তারা। দ্বিতীয় লেগে দলের অন্যতম সেরা স্তম্ভ রোনালদো, ইস্কো, ক্যাসেমিরোদের ছাড়াই ২-০ গোলের জয় তুলে নিয়েছে লস ব্লাঙ্কোসরা। এরপর বোধহয় আর মাদ্রিদের স্কোয়াডের শক্তিমত্তা সম্পর্কে সন্দেহ থাকার কথা না!
গোল ডট কম অবলম্বনে