ছোটবেলা থেকেই বিজ্ঞান ও বিজ্ঞান বিষয়ক নানা ধরণের বিষয়ের সাথে রাফসানের সখ্যতা অনেক আগ থেকে। নানা ধরণের পরীক্ষা নিরীক্ষা ও রাসায়নিক দ্রব্যাদির মাঝে থাকতে পছন্দ করে সে। তার বয়সী ছেলেমেয়েরা যখন খেলাধূলা কিংবা হৈ চৈ করে ঘুরে বেড়াতে ভালোবাসে, সে তখন আইনস্টাইনের জীবনীতে মুখ বুজে পরে থাকে। অনেকে তাকে মজা করে “ছোটদের আইনস্টাইন” বলে ক্ষেপায়। রাফসান এতে রাগ করে না। বরং, সে বেশ মজাই পেয়ে থাকে। তার বাবাকে সে মাঝে মাঝেই বিভিন্ন দেশের বিজ্ঞান বিষয়ক সেমিনার কিংবা নানা জাদুঘরের কথা বলে থাকে। বিভিন্ন ডকুমেন্টারী কিংবা পেপার কাটিং থেকে এগুলো সম্পর্কে সে জেনেছে। এমনই একদিন তার বাবা তাকে খোঁজ দিলেন আগারগাঁওয়ের বিজ্ঞান জাদুঘর সম্পর্কে। শুনে লাফিয়ে উঠল সে। এবার বিজ্ঞান বিষয়ে সে আরো ভালো করে জানতে পারবে। চলুন, রাফসানের সাথে আজ জেনে নেয়া যাক আগারগাঁও এর বিজ্ঞান জাদুঘর সম্পর্কেঃ
আসলে, ঘুরে বেড়ানো আমরা কে না পছন্দ করি? সকলেই চাই নাগরিক এই যান্ত্রিক জীবন থেকে একটু দূরে গিয়ে একটু স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে। কিন্তু কোথায় যাওয়া যায় বলুন? সারাদিনের জ্যাম কিংবা সময়- এই দুটোই আমাদের বাধ সাধে। সারাদিন কর্মচাঞ্চল্যে ভরপুর একটি দিন কাটাবার পরে দুদণ্ড যে পরিবার পরিজন নিয়ে একসাথে হৈ হল্লা করে আসবেন, তার কোন যো নেই।
একইসাথে রয়েছে দূরে কোথাও যাওয়া কিংবা কাছে কোথাও যাওয়ার ভয়। পরিবার পরিজন কিংবা বাচ্চাদের নিয়ে ঘুরে আসতে পারেন ঢাকার আগারগাঁও এর বিজ্ঞান জাদুঘর থেকে। সুন্দর একটি সময় কাটানোও হল, একইসাথে বিজ্ঞানের শিক্ষনীয় কিছু বিষয় জেনে আসতে পারবেন। আমাদের রাফসানও কিন্তু তার পরিবারের সাথে এই কাজটিই করছে আজ। তার বাবা তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, বিজ্ঞান জাদুঘরে আসলে কেন যাওয়া উচিত? উত্তরে রাফসান যা বলল,
“প্রথম কথা হচ্ছে, বর্তমান যুগে শিশুদের বিজ্ঞানমনষ্ক হিসাবে গড়ে তোলা খুবই জরুরী। তাই তাদেরকে পড়াশোনার সাথে সাথে বিজ্ঞানশিক্ষা দেয়ার বিকল্প আর কিছু নেই। এক্ষেত্রে জাতীয় বিজ্ঞান জাদুঘরটি হতে পারে আদর্শ একটি স্থান। নানা বিষয় শিখবার সাথে সাথে বাচ্চারা হয়ে উঠবে বিজ্ঞানমনষ্ক এবং বিজ্ঞানের প্রতি আগ্রহী।
দ্বিতীয় কথা হচ্ছে, অনেকেই জানেন না আগারগাঁওতে একটি বিজ্ঞান জাদুঘর রয়েছে। এখানে একজন ব্যক্তিকে বিজ্ঞানের প্রতি আগ্রহ করবার যথেষ্ট উপকরণ রয়েছে। হাতে কলমে শেখার আগে আমাদের দরকার তার ইতিহাস ও প্রায়োগিক জ্ঞান সম্পর্কে। বিজ্ঞান জাদুঘরে এ সম্পর্কে নানা ধরণের তথ্য ও ঐতিহাসিক নিদর্শন রয়েছে।
তৃতীয়ত, বিজ্ঞান জাদুঘর আপনাকে সুযোগ করে দিচ্ছে রাতের আকাশ টেলিস্কোপের মাধ্যমে পর্যবেক্ষণের।”
রাফসান এবার তার বাবাকে জিজ্ঞাসা করল, “কি কি জিনিসের দেখা মিলবে বিজ্ঞান জাদুঘরে গেলে?” উত্তরে তিনি বললেন-
বিজ্ঞান জাদুঘরে ক্যাটাগরী অনুযায়ী নানা ফিচার অনুযায়ী গ্যালারি রয়েছে। এদের মধ্যে রয়েছে-
১) ভৌত বিজ্ঞান গ্যালারী
২) শিল্প প্রযুক্তি গ্যালারী
৩) তথ্য প্রযুক্তি গ্যালারী
৪) মহাকাশ বিজ্ঞান গ্যালারী
৫) জীববিজ্ঞান গ্যালারী
৬) সায়েন্স পার্ক ও আরো অনেক কিছু।
রাফসান এবার একটু চুপ হয়ে বলল, “রাতের আকাশ সম্পর্কে কি যেন বলছিলে বাবা?”
এবার তার বাবার উত্তর-
“আমাদের সকলের একটি ইচ্ছা থাকে মনের মাঝে যে আকাশটাকে হাত বাড়িয়ে দেখি। কিন্তু তা আমাদের পক্ষে সম্ভব না। তবে বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করেছেন টেলিস্কোপ, যার সাহায্যে আপনি রাতের আকাশ দেখতে পাবেন। প্রতি শুক্র ও শনিবার সূর্যাস্ত থেকে এক ঘণ্টা আপনি জাদুঘরের মানমন্দির থেকে আকাশের গ্রহ নক্ষত্র দেখতে পাবেন। তবে বৃষ্টি থাকলে তা বাঁধা হয়ে দাঁড়াতে পারে। সারা মাস ধরে আপনি দক্ষিণ পশ্চিম আকাশে মঙ্গল ও শনি গ্রহ দেখতে পাবেন।”
রাফসান তার বাবার সাথে বিজ্ঞান জাদুঘর ঘুরে এসেছে। চাইলে আপনিও ঘুরে আসতে পারেন। তবে তার জন্য দরকার সময়সূচী, যার ফলে আপনি জানতে পারবেন কবে কবে ও কখন খোলা পাবেন এই বিজ্ঞান জাদুঘর-
শনি থেকে বুধবার : সকাল ৯:০০ ঘটিকা থেকে বিকাল ৪:৩০ঘটিকা পর্যন্ত
শুক্রবার : সকাল ১০:০০ ঘটিকা থেকে দুপুর ১২:০০ ঘটিকা পর্যন্ত, দুপুর ২:০০ ঘটিকা থেকে সন্ধ্যা ৬:০০ ঘটিকা
বৃহস্পতিবার : সাপ্তাহিক বন্ধ। প্রবেশ মূল্য – ১০ টাকা ( প্রতিজন)
আকাশ পর্যবেক্ষণ : প্রতি শুক্র ও শনিবার সন্ধ্যা থেকে এক ঘন্টা
আকাশ মেঘমূক্ত থাকা সাপেক্ষে। প্রবেশ মূল্য – ১০ টাকা ( প্রতিজন)
তো আর দেরি কেন? ঘুরে আসুন আগারগাঁও থেকে। উপভোগ করুন রাতের আকাশ কিংবা বিজ্ঞানের সব মজার মজার কীর্তি। রাফসানের মত আপনার সন্তানও উপভোগ করতে পারে বিজ্ঞান জাদুঘরের মজা!
আজ আর নয়। প্রিয়লেখার সাথেই থাকুন, সকলের প্রিয় হয়ে উঠুন।