বহুল আলোচিত দলবদল এখন সমাপ্ত। রেকর্ড ২২২ মিলিয়ন ইউরোর বিনিময়ে পিএসজিতে যোগদানের সব আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করেছেন নেইমার। তবে এখন আলোচনার বিষয়বস্তু অন্য আরেক দিকে। যেই নাটকীয়তার মধ্যে প্যারিসে এলেন নেইমার, তাঁর নাম সম্বলিত জার্সি বিক্রি যে হু হু করে বাড়বে, সে তো বলাই বাহুল্য। কিন্তু তাতে পিএসজির আসলে লাভ কতটা? কেবল জার্সি বিক্রির টাকা দিয়ে কি নেইমারের পেছনে লগ্নি করা অর্থ উশুল করতে পারবে পিএসজি?
ব্রিটিশ পত্রিকা ইন্ডিপেনডেন্ট এবং ডেইলি মেইলের জবাব, না। কেবল জার্সি বিক্রি করে এত টাকা উঠানো অসম্ভবই বলছে তারা। কিন্তু কেন অসম্ভব?
একটি ফুটবল ক্লাবের উপার্জনের মূল রাস্তা ৩ টি। ১) ম্যাচ ডে ইনকাম (টিকিট বিক্রি, প্রোগ্রাম থেকে আয়, কর্পোরেট ডাইনিং), ২) মিডিয়া ইনকাম (মূলত স্থানীয় ও বৈশ্বিক টিভি স্পন্সর), এবং ৩) বাণিজ্যিক ইনকাম (স্পন্সরশিপ, জার্সি বিক্রি)।
এসবের মধ্যে বড় অঙ্কের অর্থটা আসে স্পন্সরশিপ এবং টিভি সত্ত্ব থেকে। তবে অনেক ফুটবল ফ্যানেরই ধারণা, তারকা খেলোয়াড়ের জার্সি বিক্রি করেই তাঁর ক্রয়মূল্যের বেশিরভাগটা তুলে ফেলে ক্লাবগুলো। আসলে যে এই ধারণার কোন ভিত্তি নেই, সেটাই দেখিয়েছে ব্রিটিশ পত্রিকা দুটি।
কোন একটি ফুটবল ক্লাবের সাথে তাদের জার্সি স্পন্সরের চুক্তিটা হয় বার্ষিক একটি অঙ্কের ভিত্তিতে। বছরে একটি নির্দিষ্ট অঙ্কের অর্থ জার্সির স্পন্সরশিপ বাবদ ক্লাবগুলোকে পরিশোধ করে তাদের জার্সি স্পন্সর প্রতিষ্ঠানগুলো। এরপর একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ জার্সি বিক্রি হলে প্রত্যেক জার্সির জন্য ১০-১৫% লভ্যাংশ দেয়া হয় সংশ্লিষ্ট ক্লাবকে।
উদাহরণস্বরূপ, ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড তাদের জার্সি স্পন্সর অ্যাডিডাসের কাছ থেকে বার্ষিক পায় ৭৫ মিলিয়ন পাউন্ড, চেলসি নাইকির কাছ থেকে পায় ৬০ মিলিয়ন পাউন্ড, আর্সেনাল পিউমার কাছ থেকে পায় ৩০ মিলিয়ন পাউন্ড। বছরে এই নির্দিষ্ট অঙ্কের অর্থ ক্লাবকে পরিশোধ করে দেয়ার পর যা লভ্যাংশ আসবে, তার উপর ক্লাবের আর কোন দাবি দাওয়া থাকে না, সবটাই পাবে স্পন্সর প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান। তবে দুই পক্ষের চুক্তি অনুযায়ী একটি নির্দিষ্ট সংখ্যক জার্সি বিক্রি হওয়ার পর প্রতি জার্সিতে ১০-১৫% রাজস্ব ক্লাবগুলোকে দিয়ে থাকে স্পন্সর প্রতিষ্ঠানেরা।
আপনার মনে প্রশ্ন জাগতে পারে, এখানে স্পন্সরদের স্বার্থ কোথায় তাহলে? কেন তারা ক্লাবগুলোকে এত এত অর্থ দিচ্ছে প্রতি বছর? দিচ্ছে, কারণ ক্লাব ও ক্লাবের খেলোয়াড়দের ইমেজ ব্যবহার করে তারা যা খরচ করছে তার দ্বিগুণ টাকাও উঠিয়ে নিতে সক্ষম। অ্যাডিডাসের সিইও হার্বার্ট হেইনার যেমন আশা প্রকাশ করেছেন, ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের সাথে ১০ বছরে ৭৫০ মিলিয়ন পাউন্ডের চুক্তির বিনিময়ে তারা ১.৫ বিলিয়ন পাউন্ড উপার্জন করবে। অর্থাৎ দ্বিগুণ অর্থ!
ক্লাবগুলো তো তাহলে নিজেরাই তাদের জার্সি বিপণন করে শতভাগ লাভ নিজেদের অ্যাকাউন্টে রেখে দিতে পারে! না, সেটাও আসলে সম্ভব নয়। অ্যাডিডাস, নাইকি, পিউমাদের মত সর্বগ্রাসী বিপণন সংস্থাগুলোর সাথে কিছুতেই ব্যবসায় পেরে উঠবে না ফুটবল ক্লাবগুলো। সে কারণে তাদের সাথেই ব্যবসা করতে হয় ক্লাবগুলোকে। বাস্তব প্রমাণ চান? চেলসি তাদের ১১২ বছরের ইতিহাসে যত উপার্জন করেছে, ২০১৭ সালের মার্চ, এপ্রিল, মে এই তিন মাসে নাইকি তার চেয়ে বেশি উপার্জন করেছে! এবার আপনিই বলুন, এই অসম প্রতিযোগিতায় ক্লাবগুলো কিভাবে টিকবে!
এতসব কারণেই শুধু জার্সি বিক্রি করে ২২২ মিলিয়ন ইউরোর মত বিশাল অঙ্কের অর্থ উপার্জন করা কখনোই সম্ভব না পিএসজির পক্ষে।
সূত্র- ইন্ডিপেনডেন্ট, ডেইলি মেইল
ছবি কৃতজ্ঞতা- মেট্রো.ইউকে