আমরা সকলে চাই আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম যেন সুস্থ সবলভাবে বেড়ে উঠে। প্রত্যেকটি পরিবারে শিশু হয় পরিবারের কেন্দ্রবিন্দু। তার স্বাস্থ্য সম্পর্কে আমরা সকলে বেশ উদ্বিগ্ন থাকি সবসময়। আমরা মাঝে মাঝে বেশ দ্বিধায় পড়ে যাই বিভিন্ন প্রতিষেধক সম্পর্কে।সঠিক সময়ে সঠিক প্রতিষেধক আপনার শিশুকে বাচাতে পারে নানা ধরণের ঘাতক ব্যাধি থেকে। আবার একই প্রতিষেধক যদি ভুল সময়ে দেওয়া হয় হতে পারে বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যার কারনও। তবে আজ আসুন জেনে নেই নবজাতককে কখন কোন টিকা দিতে হবে।
টিকা কি?
টিকা বা প্রতিষেধক হচ্ছে নিদির্ষ্ট বয়সে নিদির্ষ্ট রোগের প্রতিষেধক যা সরাসরি শরীরে প্রবেশ করানো হয়। বিভিন্ন রোগের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ তৈরী করার জন্য প্রতিষেধক দেওয়া হয়।
শিশুর জন্মের ০-১১মাস এবং ১৫ মাস বয়সের শিশুদের সরকারীভাবে এইসব টিকা দেওয়া হয়। জন্মের পর যে কোন সরকারী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স অথবা মাতৃসদনে গেলেই আপনি আপনার শিশুকে বিনামূল্যে টিকা দিতে পারবেন।
আসুন তবে জেনে নেই কোন রোগের জন্য কোন টিকা দেওয়া হয় আর কত বছর বয়সে দিতে হয়?
বি সি জি টিকা
এক সময়ে বেশ প্রচলিত ছিল ,”যক্ষা হলে রক্ষা নাই” । আজ এটা শুধু প্রচলিত প্রবাদ হয়ে রয়ে গেছে। কেননা আবিষ্কার হয়েছে যক্ষ্মা রোগের টিকা। শিশুর জন্মের ৬সপ্তাহের মধ্যে বি সি জি টিকা দিতে হয়। বি সি জি টিকা যক্ষা রোগের প্রতিষেধক হিসেবে দেওয়া হয়।
পেন্টাভ্যালেন্ট ভ্যাকসিন (ডি পি টি, হেপাটাইটিস-বি, হিমোফাইলাস ,ইনফ্লুয়েঞ্জা -বি)
পাঁচটি রোগের টিকা একসাথে দেওয়া হয় বলে একে পেন্টাভ্যালেন্ট বলা হয়। ডি -ডিপথেরিয়া , পি- পারটোসিস, টি- টিটেনাস মূলত এই তিন রোগের প্রতিষেধক ডি পি টি এবং হিমোফাইলাস ,ইনফ্লুয়েঞ্জা -বি একসাথে দেওয়া হয়। শিশুর বয়স ৬ সপ্তাহে প্রথম এর পর পর্যায়ক্রমে ১০ ও ১৪ সপ্তাহে ৩টি টিকা দেওয়া হয়। এবং ১৫-১৮মাসে এর বুস্টার ডোজ দেওয়া হয়।
পি সি ভি টিকা
পি সি ভি টিকা দেওয়া হয় নিউমোনিয়া রোগের প্রতিষেধক হিসেবে। নিউমোনিয়া মারাত্মক ঝুকিপূর্ন রোগ। বর্তমান চিকিৎসা বিজ্ঞানে নিউমোনিয়া বা অ্যাকিউট রেসপিরেটরি ট্র্যাক্ট ইনফেকশনকে শিশু মৃত্যুহারের অন্যতম কারন হিসেবে চিহ্নিত করেছে। নিউমোনিয়ার জন্য দায়ী ভাইরাস হল নিউমোকক্কাস (স্ট্রেপটোকক্কাস নিউমোনি) ও হেমোফাইলাস ইনইয়ুযেকি। এই দুই ভাইরাস এর প্রতিষেধক হিসেবে এই টিকার কোন বিকল্প নেই। শিশুর বয়স ৬ সপ্তাহ হলে এই টিকা দেওয়া যায়।
এম আর টিকা
হাম ও রুবেলা নামক মারাত্মক যন্ত্রণাদায়ক রোগের প্রতিষেধক এম আর টিকা। শিশুর বয়স ১৫মাস এর মধ্যে এই প্রতিষেধক দিতে হয়।
পোলিও টিকা
পোলিও একটি মারাত্মক ব্যাধি। এই ব্যাধি থেকে মুক্তির একমাত্র উপায় শিশুকে সঠিক সময়ে টিকা দেয়া। দুইভাবে পোলিও টিকা দেয়া যেতে পারে। যথা- ও. পি. ভি. এবং আই. পি. ভি. । ও. পি. ভি. হল ওরাল পোলিও ভ্যাকসিন যা মুখে খাওয়ানো হয়ে থাকে এবং আই. পি. ভি. হল ইনএক্টিভেটেড পোলিও ভ্যাকসিন যা ইনজেকসান এর মাধ্যমে দেওয়া হয়। শিশুর বয়স শূন্য থেকে ৫ বছর পর্যন্ত এই টিকা দেওয়া হয়।
রোটা ভাইরাস টিকা
রোটা ভাইরাস জনিত ডায়রিয়া প্রাণঘাতক হতে পারে। তাই ডায়রিয়ার প্রতিষেধক হিসেবে বাচ্চাদের রোটা ভাইরাস এর প্রতিষেধক রোটাভাইরাস ভ্যাকসিন বা আরভি দিতে হবে। ডায়রিয়ার প্রতিষেধকের টিকা তিনটি ডোজে নিতে হয়। প্রথম ডোজ ৬ থেকে ১২ সপ্তাহের বয়সের মধ্যে দিতে হবে। পরবর্তী ডোজ ১০ সপ্তাহ/৪মাসের মাঝে দিতে হবে।
এছাড়াও টাইফয়েড,চিকেন পক্স সহ বিভিন্ন রোগের টিকা আবিষ্কার হয়েছে যা আপনার শিশুর সুস্থ্যভাবে বেচে থাকার জন্য খুব জরুরী। শিশুর স্বাস্থ্য সংক্রান্ত এমনই সচেতনতামূলক লেখা নিয়ে আসব প্রিয়লেখায়। ভালো থাকুন আর চোখ রাখুন প্রিয়লেখায়।