ইতিহাস বলতে আসলে কি বোঝায়? প্রাচীন আমলের কিছু ছবি নাকি ভাঙা কিছু পাত্রের টুকরো? নাকি ইতিহাস বলতে বোঝায় জানা অজানা নানা কাহিনীর মিশেল, যার ফলে আমরা হয়ে উঠি চমকিত, যার ফলে আমাদের মনে জাগে নানা ধরণের প্রশ্ন? প্রত্নতাত্ত্বিকেরা কিংবা বিজ্ঞানীরা কেন ইতিহাস নিয়ে নাড়াচাড়া করেন? বর্তমানের এই উন্নত প্রযুক্তির যুগে ইতিহাসের সাথে বসবাস কি আদৌ কোন প্রয়োজন আছে কি?
হ্যাঁ, আছে। ইতিহাস থেকে আমরা পাই শিক্ষা, ইতিহাস থেকে আমরা পাই অজানা নানা তথ্য। মিশরের পিরামিডের এত সুউচ্চ পাথরগুলো কি করে প্রাচীন মানুষরা এত উচ্চে নিয়ে গেলেন, তা নিয়ে আজো আমাদের মনে নানা ধরণের প্রশ্ন জাগে। কেমন করে এসব প্রশ্নের জবাব পাব আমরা? পিরামিডের নানা তথ্য নিয়ে বিজ্ঞানিরা আজো চমকিত হন। কেউ কেউ নিয়ে আসেন এলিয়েন থিওরী, আবার কেউ কেউ নিয়ে আসেন অলৌকিক কোন সত্যের না পাওয়া আস্বাদ।
এর মাঝেই প্রত্নতাত্ত্বিকেরা তাদের কাজের মাধ্যমে আমাদের সামনে নিয়ে আসেন নতুন নতুন তথ্য। মেলে দেন তথ্যের ঝাঁপি। আজ সে ঝাঁপি থেকেই আপনাদের জন্য আয়োজন। প্রাচীন ট্রয় নগরীর ইতিকথাঃ
ট্রয়ঃ
পৃথিবীতে যত প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান নিয়ে বিতর্ক হয়েছে, ট্রয় নগরী নিঃসন্দেহে তাদের মাঝে প্রথম সারিতে অবস্থান করবে। হোমারের অমর গাঁথা “ইলিয়াড”-এ ট্রয় নগরী নিয়ে বিশদ বর্ণনা দেয়া আছে। এখান থেকেই ট্রয় নগরীর উদ্ভব। ট্রোজান যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল ট্রয় এবং মাইসিনিয়ান গ্রীস নামক দুটি রাজ্যের মাঝে।
বহু ইতিহাসবেত্তারাই এটা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেন যে আসলেই এমন কোন যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল নাকি। তবুও হোমার, হেরোডেটাস, সফোক্লিক নানা বিখ্যাত নামগুলো লিখে গিয়েছেন ট্রোজান যুদ্ধ নিয়ে, যা সংঘটিত হয়েছিল ট্রয় রাজ্য ও মাইসিনিয়ানদের মাঝে। যীশুর জন্মের ১১৮০ বছর আগের এমন কিছু নিদর্শন প্রত্নতাত্ত্বিকেরা পেয়েছেন, যেখানে তাদের স্পষ্ট ধারণা রয়েছে যে প্রাচীনকালে ট্রয় বলতে আসলেই একটি নগরী ছিল। এরা ছিল নানা ক্ষেত্রে বিশেষ করে যুদ্ধের বিষয়ে পারদর্শী।
ট্রোজান যুদ্ধ কি নিয়ে সংঘটিত হয়েছিলঃ
অনেকেই বলে থাকেন, পৃথিবীতে যত ভয়ঙ্কর যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল, তার বেশিরভাগই হয়েছে নারী এবং রাজ্যের জন্য। ট্রোজান রাজপুত্র অপহরণ করলেন স্পার্টার রানী হেলেনকে। মাইসিনির রাজা আগামেমননকে রানী উদ্ধারে রাজি করিয়ে ফেলেন হেলেনের স্বামী মেনেলাস। গ্রীক বীর অ্যাকিলিস, অডিসিয়াস, নেস্টর, অ্যাজাক্সসহ হাজার হাজার রণতরী রওয়ানা দেয় এই বিশাল যুদ্ধের দিকে। একটি কূটকৌশলে ট্রয়ের দূর্গ অভ্যন্তরে প্রবেশ করেন তারা।
বিশাল একটি কাঠের ঘোড়া উপহার দেন ট্রয়ের রাজা প্রিয়ামকে। এর ভেতরে লুকিয়ে ছিল শত শত যোদ্ধা। উদ্দেশ্য, কাঠের ঘোড়াটি দূর্গের অভ্যন্তরে ঢোকার সাথে সাথে আক্রমণ করা হবে। কিন্তু বিধি বাম! যুদ্ধে হেরে যায় গ্রীক বীররা। সে নিয়ে আরেকদিন গল্প করা যাবে, কেমন?
জার্মান প্রত্নতাত্ত্বিক হাইনরিখ শ্লীম্যান ১৮৭০ সালে সিটাডেলের কিছু অংশ ও ২৫ মিটার গভীর একটি ডেবরিসের অংশ পান। এছাড়াও এখানে ৯টি বেষ্টনীর মাঝে প্রায় ৪৬টি দালান ছিল, যেটি বোঝায় যে ট্রয় নগরী ব্রোঞ্জ সভ্যতার একটি অন্যতম নিদর্শন হিসেবে তৎকালীন আমলে দাঁড়িয়ে ছিল পৃথিবীর বুকে। শ্লীম্যান নানা সাক্ষাৎকারে বলতে চেষ্টা করেন যে, ট্রয় নগরী ও ট্রোজান যুদ্ধের ঐতিহাসিক ভিত্তি আসলেই রয়েছে।
তার চেষ্টার পেছনে কিন্তু যুক্তিও ছিল। তিনি হিসালরিকের কিছু অংশ খুঁড়ে রাজা প্রিয়ামের ব্যবহৃত কিছু দ্রব্যাদি পান। ধারণা করা হয় যে, রাজা প্রিয়াম ছিলেন ট্রয়ের শাসনকর্তা এবং ট্রোজান যুদ্ধের সময় তিনি ট্রয়ের শাসক ছিলেন।
যদিও ইতিহাসবেত্তারা এটি নিয়ে সংশয়ে ভুগে থাকেন যে হিসালরিক আদতেই ট্রয়ের আদি অংশ কি না, তবে তাদের মনে একটি বিষয় নিয়ে কোন সংশয় নেই। হাজারো বছরের প্রাচীন নিদর্শন এই হিসালরিকের সাথে জড়িয়ে আছে। এমন কিছু অংশ ও প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন পাওয়া গিয়েছে যার ফলে জানা যায় ট্রয়ের সাথে হিসালরিকের কোন সম্পর্ক থাকলেও থাকতে পারে।
প্রত্নতাত্ত্বিকদের ধারণা অনুযায়ী হিসালরিক দাঁড়িয়ে আছে ১৩টি নগরের ওপর, যা ট্রয়ের সময়কার যে ভয়াবহ যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল তার সাথে কিছু কিছুভাবে মিলে যায়।
তবে সত্য হোক কিংবা মিথ্যা, ট্রয় নগরী একটি ঐতিহাসিক নামে পরিচিত হয়ে গিয়েছে। লাখো মানুষ হেলেন অব ট্রয় কিংবা ট্রয় এন্ড দ্য ট্রোজান ওয়ার-এসব বিষয় নিয়ে ফ্যান্টাসীতে ভুগে থাকে, গল্প পড়ে, ছবি দেখে। যতদিন না ট্রয় নগরীর আসল রহস্য উদঘাটিত হচ্ছে, ট্রয় নগরী ইতিহাসের একটি অংশ হয়েই থাকবে।
আজ এ পর্যন্তই। প্রিয়লেখার সাথেই থাকুন।