নেইমারের দলবদলের নাটকের মাঝেই ঢিমেতালে হলেও শুরু হয়েছে আরেক নাটক, কিলিয়ান এমবাপ্পের রিয়াল মাদ্রিদে আসা না আসার নাটক। গত মৌসুম মাতানো ফ্রেঞ্চ টিনেজারের জন্য নাকি ১৮০ মিলিয়ন পর্যন্ত বিড করতে প্রস্তুত মাদ্রিদ!
শেষ পর্যন্ত এই নাটকের শেষ অঙ্কে কি আছে তা সময়ই বলে দেবে, তবে চুক্তিটা হলে মোনাকোর জন্য তা হবে সোনায় সোহাগা। এক খেলোয়াড়ের জন্য ১৮০ মিলিয়ন ইউরো কে কবে পেয়েছে!
এমবাপ্পেকে ছাড়লে বিশাল অঙ্কের লাভ হবে মোনাকোর। জিনিসটার সাথে অবশ্য ভালই পরিচিত ফ্রান্সের এই ক্লাবটি। কম টাকায় তরুণ খেলোয়াড় কিনে তাদেরকে উচ্চ মূল্যে বিক্রি করায় যে রীতিমত পারদর্শী হয়ে উঠছে ক্লাবটি!
গত মৌসুম রীতিমত স্বপ্নের মত কেটেছে তাদের। ফ্রেঞ্চ লীগ জিতেছে, উঠেছে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের সেমিফাইনালেও। এই মৌসুমে যে ইউরোপের বড় ক্লাবগুলোর নজর তাদের উপর পরবে, এটা মোটামুটি অনুমিতই ছিল। সেই সুযোগ নিয়ে মোনাকোও ব্যবসা করে নিচ্ছে পুরোদমে।
গত এপ্রিলে অবশ্য ক্লাবটির ভাইস প্রেসিডেন্ট ও ট্রান্সফারের দায়িত্বে থাকা ভাদিম ভাসিলইয়েভ জানিয়েছিলেন, ক্লাবকে এমন স্মরণীয় মৌসুম উপহার দেয়া দল থেকে দুইজনের বেশি তারা বিক্রি করবে না এই ট্রান্সফার উইন্ডোতে। কিন্তু এক মাস পরে লিগ শিরোপা জেতার পরেই ক্লাব প্রেসিডেন্ট দিমিত্রি রিবোলভলেভের কণ্ঠে শুনতে পাওয়া যায় অন্য সুর। কোন খেলোয়াড়কেই তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে আটকে রাখবে না বলে জানিয়ে দেন এই রাশিয়ান বিলিওনিয়ার। ন্যায্য মূল্য পেলে সব খেলোয়াড়ই বিক্রয়যোগ্য বলেও ঘোষণা দেন তিনি।
বিক্রয় করা শুরু করেছে মোনাকো, এবং সেটিও রাজকীয় হালে। এক্ষেত্রে তাদের গতিবিধি একটাই, কম দামে কিনে আনা তরুণ অথচ প্রতিভাবান খেলোয়াড়দের কয়েক গুণ বেশি দামে বিক্রয় করা।
২০১৫ সালে ১৫.৭৫ মিলিয়ন ইউরো দিয়ে বেনফিকা থেকে কিনে এসেছিল পর্তুগীজ মিডফিল্ডার বার্নার্ডো সিলভাকে। গত মৌসুমে মোনাকোর অবিশ্বাস্য পারফরম্যান্সের পেছনে বড় অবদান ছিল সিলভার। সিলভাকে পেতে তাই মরিয়া হয়েছিল ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড, ম্যানচেস্টার সিটি ও জুভেন্টাসের মত ক্লাবগুলো। সেই সুযোগটাই কাজে লাগায় মোনাকো, প্রায় ১৬ মিলিয়ন ইউরো দিয়ে কিনে আনা সিলভাকে ম্যানচেস্টার সিটির কাছে বিক্রি করে ৫০ মিলিয়ন ইউরোতে!
একই কথা প্রযোজ্য টিমো বাকায়োকোর ক্ষেত্রেও। ২০১৪ সালে মাত্র ৮ মিলিয়ন ইউরোতে কিনে এনেছিল ফ্রেঞ্চ মিডফিল্ডারকে। গত মৌসুমের পারফরমান্সের পর তাকে পেতে লড়াইয়ে নেমেছিল চেলসি ও ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড। শেষ পর্যন্ত ২২ বছর বয়সী ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার বাকায়োকোকে এই মৌসুমে চেলসির কাছে বিক্রি করেছে প্রায় ৪৫ মিলিয়ন ইউরোতে!
বাকি আছে আরও। দুর্মূল্যের এই বাজারে ভালো একজন লেফট ব্যাক পাওয়া বেশ কঠিনই। ফ্রান্সের হয়ে ৪ ম্যাচ খেলা বেঞ্জামিন মেন্ডির পারফরম্যান্সের সুবাদে তাকে পেতে তাই মরিয়া ছিল ইউরোপের বেশ কয়েকটি বড় ক্লাবই। শেষ পর্যন্ত ভাগ্যে শিকে ছিঁড়েছে পেপ গার্দিওলার। তবে তার জন্য ম্যানচেস্টার সিটির ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে খসে গেছে ৫২ মিলিয়ন পাউন্ড! সর্বকালের সবচেয়ে দামী লেফট ব্যাকও তাই এখন এই ফ্রেঞ্চ ডিফেন্ডার! অবাক হওয়ার পালা বাকি আছে আরও, যখন জানবেন, ১ বছর আগেই মাত্র ৫.৫ মিলিয়ন পাউন্ডে মেন্ডিকে কিনে এনেছিল মোনাকো। অর্থাৎ, এক খেলোয়াড় বিক্রি করেই প্রায় ১০ গুণ লাভ!
সাথে যোগ করুন ৮ মিলিয়ন ইউরোতে মার্শেইয়ের কাছে ভ্যালেরি জার্মেইন, ৫ মিলিয়ন ইউরোতে মেইঞ্জের কাছে আব্দোউ দিয়ালো, ৪.৫ মিলিয়ন ইউরোতে ফেনেরবাচের কাছে নাবিল দিরার ও ৩.৫ মিলিয়ন ইউরোতে টুলুজের কাছে করেন্টিন জিনকে বিক্রি। সব মিলিয়ে এই মৌসুমে খেলোয়াড় বিক্রি করে এখনো পর্যন্ত ১৭৩.৫ মিলিয়ন ইউরো পেয়েছে মোনাকো, ইউরোপের সব ক্লাব মিলে যা সর্বোচ্চ। থমাস লেমার ও কিলিয়ান এমবাপ্পের ডিলটাও যদি হয়ে যায়, অঙ্কটা কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে একবার ভাবুন!
এ তো গেল এই মৌসুমের হিসাব, গত কয়েক মৌসুম ধরেই কিন্তু এমন ব্যবসা ভালই চালাচ্ছে মোনাকো। ইয়ানিক কারাসকো, অ্যান্থনি মার্শিয়াল, জেফ্রি কনডোগবিয়া, লেয়ভিন কুরজাওয়া ও আয়মেন আবডেনোরকে বিক্রি করে দুই মৌসুম আগেই ১৮০ মিলিয়ন ইউরো উপার্জন করেছিল মোনাকো। এছাড়া হামেস রদ্রিগেজকে মাদ্রিদের কাছে বিক্রি করেও বেশ মোটা অঙ্কের লাভ করেছিল ক্লাবটি।
মাঠের বাইরের মোনাকো যে মাঠের মোনাকোর চেয়ে অনেক ভালো ‘খেলোয়াড়’, সেটা নিয়ে বোধ হয় আর সন্দেহ থাকার কথা না!
তথ্যসূত্র: সনি ইএসপিএন