একটা ম্যাচে কতজন বোলার বল করেন? ওয়ানডেতে ন্যূনতম ৫ বোলারের বাধ্যবাধকতা থাকলেও টেস্টে নেই সেরকম কোন নিয়ম। অধিনায়ক যখন যাকে খুশি বোলিংয়ে আনতে পারেন। মূল বোলারেরা ব্যর্থ হলে, কিংবা তাদের খানিক বিশ্রাম দেয়ার জন্য পার্ট টাইম বোলারদের ব্যবহার করার প্রচলন আছে। ৭-৮ বোলার ব্যবহারের নজির তাই হরহামেশাই দেখতে পাওয়া যায়। কিন্তু তাই বলে দলের ১১ জন কে দিয়েই বল করানো! কখনো দেখেছেন এমনটা? ক্রিকেটের বিরলতম ঘটনাগুলির মধ্যেই এটি একটি, যেখানে উইকেটকিপার গ্লাভস ছেড়ে বল হাতে নেন! যে কারণে দেড়শ বছরের টেস্ট ইতিহাসে এমনটা ঘটেছে মাত্র চারবার। সেই ঘটনাগুলো নিয়েই আজকের আয়োজন।
টেস্ট ক্রিকেট প্রথমবার এমনটা দেখে ইতিহাসের ১৬তম টেস্টে, ১৮৮৪ সালে। অস্ট্রেলিয়ার ইংল্যান্ড সফরের ৩য় টেস্টের ঘটনা। লন্ডনের কেনিংটন ওভালে যখন ব্যাট হাতে নামছে বিলি মারডকের অস্ট্রেলিয়া, ইংলিশ অধিনায়ক লর্ড হ্যারিসের তখন কল্পনাতেও ছিল না কি অপেক্ষা করছে তাদের জন্য। অধিনায়ক মারডকের ডাবল সেঞ্চুরি, ও আরও দুই ব্যাটসম্যানের সেঞ্চুরি মিলিয়ে অস্ট্রেলিয়া থামে ৫৫১ রানে। তবে ইংলিশদের আসল কষ্ট সেখানে না, অস্ট্রেলিয়া অল আউট হওয়ার আগে পর্যন্ত যে মাঠে ৩১১ ওভার থাকতে হয়েছে ইংলিশ বোলার-ফিল্ডারদের! ৩১১ ওভার, মানে পুরো তিনদিন এরও বেশি সময়! দলের মূল বোলারেরা সবাই হয়ে পরেছিলেন ক্লান্ত বিধ্বস্ত, বাধ্য হয়েই তাই দলের সবাইকেই বোলিংয়ে আনতে হয় অধিনায়ক হ্যারিসকে। বাদ পরেননি উইকেটকিপার আলফ্রেড লিটলটনও। ১২ ওভার হাত ঘুরাতে হয়েছিল তাকেও।
এর চেয়েও আশ্চর্যের বিষয়, ১২ ওভার বল করে ১৯ রানে ৪ উইকেট নিয়ে উইকেটকিপার লিটলটনই ছিলেন দলের সেরা বোলার!
প্রথম ঘটনার প্রায় ১০০ বছর পরে এই ঘটনা ঘটে দ্বিতীয় বারের মত, মাঝে পেরিয়ে গেছে ৮৬২ টি টেস্ট। ১৯৮০ সালে ফয়সালাবাদে মুখোমুখি অস্ট্রেলিয়া ও পাকিস্তান। এবার ১১ জনকেই বোলিংয়ে আনার নজির গড়ে অস্ট্রেলিয়া। তবে প্রথম ঘটনার সাথে এটির তফাৎ রয়েছে। ইংল্যান্ড অধিনায়ক সবাইকে ব্যবহার করেছিলেন নিতান্তই বাধ্য হয়ে। আর এই টেস্টে অস্ট্রেলিয়া অধিনায়ক গ্রেগ চ্যাপেল তা করেন শখের বশে। ম্যাচ নিশ্চিত ড্র হবে জেনে নিস্তরঙ্গ খেলায় কিছুটা বিনোদনের জন্য দশম বোলার হিসেবে বোলিংয়ে আনেন কিপার রডনি মার্শকে। ১০ ওভার বোলিংও করান তাঁকে দিয়ে।
তৃতীয়বার এমনটা দেখার জন্য অপেক্ষা করতে হয় আবার ২২ বছর। সেন্ট জনসে ভারতের ১ম ইনিংসে করা ৫১৩ রানের জবাব দিতে নেমে ওয়েস্ট ইন্ডিজ থামে ৬২৯ রানে। তবে তার জন্য ওয়েস্ট ইন্ডিজ খরচ করে ২৪৮ ওভার! এত ওভার বল করতে গিয়ে স্বাভাবিকভাবেই ক্লান্ত হয়ে পরেন ভারতীয় বোলারেরা। বাধ্য হয়েই তাই অধিনায়ক সৌরভ গাঙ্গুলী বোলিংয়ে আনেন কিপার অজয় রাত্রাকে। অবশ্য এক ওভারের বেশি বোলিং তাঁকে দিয়ে করাননি সৌরভ।
আর এই ঘটনা সর্বশেষ ঘটেছে ২০০৫ সালে, সেন্ট জনসেই। সাউথ আফ্রিকার করা ৫৮৮ রানের জবাবে ওয়েস্ট ইন্ডিজ করে ৭৪৭ রান, এবং তার জন্য ব্যাটও করে প্রায় ২৩৫ ওভার। অধিনায়ক গ্রায়েম স্মিথ বোলিংয়ে আনেন কিপার মার্ক বাউচারকে। ১৪৭ টেস্ট খেলা বাউচার সেই প্রথম এবং একমাত্র বারের মত বল হাতে নেন, এবং সবাইকে অবাক করে দিয়ে নিজের অষ্টম এবং শেষ বলে উইকেটও তুলে নেন!