ইউরোপের ফুটবলে এখন চলছে টাকার খেলা। কাঙ্ক্ষিত ফুটবলারকে পেতে যত টাকা ঢালার দরকার পরুক না কেন, পিছপা হচ্ছে না ক্লাবগুলো। যার সর্বশেষ উদাহরণ ম্যানচেস্টার সিটি। ৪৯.২ মিলিয়ন পাউন্ড খরচ করে ঠিকই মোনাকো থেকে নিয়ে এসেছে লেফট ব্যাক বেঞ্জামিন মেন্ডিকে। এতে করে নগর প্রতিদ্বন্দ্বী ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের লুক শ কে পেছনে ফেলে ফুটবল ইতিহাসের সবচেয়ে দামী লেফট ব্যাকও হয়ে গেছেন মেন্ডি। এভাবে প্রতিটি পজিশনের সবচেয়ে দামী খেলোয়াড়দের নিয়ে একটি একাদশ বানিয়েছে ব্রিটিশ পত্রিকা স্কাই স্পোর্টস, যার সম্মিলিত মূল্য পরেছে ৬৯০.৪৫ মিলিয়ন পাউন্ড! বদলি খেলোয়াড় সহ হিসাব করলে যা ১ বিলিয়ন ছাড়িয়ে যায়! প্রিয়লেখার পাঠকদের জন্য আজ থাকছে ফুটবল ইতিহাসের সবচেয়ে দামী একাদশটি।
গোলকিপার- এডারসন (বেনফিকা থেকে ম্যানচেস্টার সিটি; ৩৪.৭ মিলিয়ন পাউন্ড)
অনেক আশা করে বার্সেলোনা থেকে ক্লদিও ব্রাভোকে নিয়ে এসেছিলেন পেপ গার্দিওলা। প্রথম মৌসুমে অন্তত নিজের সেরাটা দিতে পারেননি এই চিলিয়ান, হতাশ করেছেন বেশ কয়েকটি ম্যাচে। এই মৌসুমে তাই আর ঝুঁকি নিতে চাননি, গোলবারের সুরক্ষার দিকেই নজর দিয়েছেন আগে। এতটাই চিন্তিত ছিলেন যে, বিশ্বরেকর্ডই করে ফেলেছেন! ৩৪.৭ মিলিয়ন পাউন্ডের বিনিময়ে বেনফিকা থেকে নিয়ে এসেছেন ব্রাজিলিয়ান গোলকিপার এডারসনকে। এতে করে জিয়ানলুইজি বুফনকে পেছনে ফেলে সর্বকালের সবচেয়ে দামী গোলকিপার হলেন এডারসন। ২০০১ সালে পার্মা থেকে প্রায় ৩৩ মিলিয়ন পাউন্ডে জুভেন্টাসে এসেছিলেন বুফন।
রাইট ব্যাক- কাইল ওয়াকার (টটেনহাম থেকে ম্যানচেষ্টার সিটি; ৫০ মিলিয়ন পাউন্ড)
দানি আলভেজকে নিয়েই হয়তো পরিকল্পনা আঁটা শুরু করে দিয়েছিলেন পেপ। মাঝখান থেকে পিএসজি দানিকে ‘ছিনতাই’ করে নেয়ায় নতুন রাইট ব্যাকের দিকে হাত বাড়াতে হয়েছে পেপকে। শেষ পর্যন্ত পেপ দলে এনেছেন গত কয়েক মৌসুমে ধারাবাহিক পারফর্ম করা ইংলিশ রাইট ব্যাক কাইল ওয়াকারকে, এবং যথারীতি বিশ্বরেকর্ড গড়ে। ৫০ মিলিয়ন পাউন্ড দিয়ে স্পার্সদের থেকে ওয়াকারকে কিনেছে সিটি। এর আগে সবচেয়ে দামী রাইট ব্যাক ছিলেন ফ্যাবিও কোয়েন্ত্রাও, ২০১১ সালে বেনফিকা থেকে ২৭.১ মিলিয়ন পাউন্ড দিয়ে তাঁকে কিনেছিল রিয়াল মাদ্রিদ।
সেন্টার ব্যাক- ডেভিড লুইজ (চেলসি থেকে পিএসজি; ৫০ মিলিয়ন পাউন্ড)
লুইজের ট্রান্সফারটা চেলসির দারুণ বাণিজ্যিক চিন্তাভাবনারই প্রতীক হয়ে আছে। মাত্র ২০ মিলিয়ন পাউন্ড দিয়ে কিনে ব্রাজিলিয়ান ডিফেন্ডারকে পিএসজির কাছে বিক্রি করেছিল প্রায় আড়াই গুণ বেশি দামে, ৫০ মিলিয়ন পাউন্ডে! দামের যথার্থতাও ছিল অবশ্য, সে সময় দারুণ ফর্মেই ছিলেন লুইজ, ১২ বছরের মধ্যে চেলসিকে ৫ম প্রিমিয়ার লীগ জেতাতে রেখেছিলেন বড় ভূমিকা।
সেন্টার ব্যাক- জন স্টোনস (এভারটন থেকে ম্যানচেস্টার সিটি; ৫০ মিলিয়ন পাউন্ড)
চারজনের মধ্যে ৩য় বারের মত আসছে ম্যানচেস্টার সিটির নাম, এই পজিশনের বিশ্ব রেকর্ডও যে তারাই গড়ে রেখেছে! সিটিতে এসেই এভারটন থেকে রেকর্ড গড়ে নিয়ে এসেছেন স্টোনসকে। ৬ বছরের চুক্তিতে সিটিতে যোগ দেয়া স্টোনস লুইজের সাথে যৌথভাবে সবচেয়ে দামী সেন্টার ব্যাক।
লেফট ব্যাক- বেঞ্জামিন মেন্ডি (মোনাকো থেকে ম্যানচেস্টার সিটি; ৪৯.২ মিলিয়ন পাউন্ড)
অনেকদিন ধরেই চেষ্টায় ছিলেন, কিন্তু মোনাকো কিছুতেই ছাড়ছিল না। শেষ পর্যন্ত অবশ্য নিজের চাহিদা ঠিকই পূরণ করে নিলেন গার্দিওলা, মৌসুমে ৩য় বারের মত বিশ্বরেকর্ড করে ৪৯.২ মিলিয়ন পাউন্ডের বিনিময়ে নিয়ে এসেছেন বেঞ্জামিন মেন্ডিকে!
রাইট উইং- অ্যাঙ্গেল ডি মারিয়া (রিয়াল মাদ্রিদ থেকে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড; ৫৯.৭ মিলিয়ন পাউন্ড)
রিয়াল মাদ্রিদের লা ডেসিমা জয়ে বড় ভূমিকা রেখেছিলেন এই আর্জেন্টাইন। অনেক আশা করেই তাই মাদ্রিদ থেকে ম্যানচেস্টারে নিয়ে আসা হয়েছিল ডি মারিয়াকে। তাঁর জন্য বেশ মোটা অঙ্কের অর্থও খরচ করতে হয়েছিল রেড ডেভিলদের, প্রায় ৬০ মিলিয়ন পাউন্ডের বিনিময়ে স্পেন থেকে ইংল্যান্ডে আসেন ডি মারিয়া। একাদশে সবচেয়ে দামী রাইট উইং হিসেবে জায়গাটা তাই ডি মারিয়াই পাচ্ছেন।
সেন্ট্রাল মিডফিল্ড- পল পগবা (জুভেন্টাস থেকে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড; ৯৩.২৫ মিলিয়ন পাউন্ড)
যাকে একসময় ফ্রিতে ছেড়ে দিয়েছিল, সেই পগবাকেই আবারো ফিরিয়ে আনতে বিশ্বরেকর্ডই করতে হয়েছে ইউনাইটেডকে! ৯৩.২৫ মিলিয়ন পাউন্ড এর বিনিময়ে নিজের আঁতুড়ঘরে ফিরেছেন পগবা, হয়েছেন ইতিহাসের সবচেয়ে দামী মিডফিল্ডারও।
সেন্ট্রাল মিডফিল্ড- হামেস রদ্রিগেজ (মোনাকো থেকে রিয়াল মাদ্রিদ; ৬৩ মিলিয়ন পাউন্ড)
ব্রাজিল বিশ্বকাপে গোল্ডেন বুট জিতেই নজরে পরেছিলেন ফ্লোরেন্টিনো পেরেজের। মাদ্রিদ যে যেকোনো মূল্যে তাঁকে দলে টানবেই সেটা অনেকটা পরিষ্কারই ছিল। শেষ পর্যন্ত মোনাকো থেকে এই কলম্বিয়ান সেনসেশনকে আনতে ৬৩ মিলিয়ন পাউন্ড খসাতে হয়েছিল পেরেজকে।
লেফট উইং- গ্যারেথ বেল (টটেনহাম থেকে রিয়াল মাদ্রিদ; ৮৫.৩ মিলিয়ন পাউন্ড)
নেইমারের জন্য পিএসজির ২২২ মিলিয়ন ইউরোর প্রস্তাবটা যেমন পুরো ট্রান্সফার মার্কেট কাপিয়ে দিয়েছে, তেমনি ভাবে গ্যারেথ বেলের জন্য মাদ্রিদের এই অফারও পুরো ট্রান্সফার মার্কেট কাঁপিয়ে দিয়েছিল। ইতিহাসে কোন খেলোয়াড়কে যে ১০০ মিলিয়ন ইউরোর বিনিময়ে কেনা হয়নি এর আগে! পাউন্ডের হিসাবে অঙ্কটা দাঁড়ায় ৮৫.৩ মিলিয়ন পাউন্ড, কোন খেলোয়াড়ের ট্রান্সফার ফি বাবদ কোন ব্রিটিশ ক্লাব এর চেয়ে বেশি উপার্জন করতে পারেনি।
ফরোয়ার্ড- গঞ্জালো হিগুয়েইন (নাপোলি থেকে জুভেন্টাস; ৭৫.৩ মিলিয়ন পাউন্ড)
নাপোলি ছেড়ে প্রতিদ্বন্দ্বী ক্লাব জুভেন্টাসে যাওয়া নিয়ে তো বটেই, গঞ্জালো হিগুয়েইনের দলবদল আগুন ছড়িয়েছে অর্থের দিক থেকেও। ফুটবল ইতিহাসের ২য় সর্বোচ্চ দামী ফুটবলার হিসেবে ইতালিয়ান চ্যাম্পিয়ন দলে আসেন হিগুয়েইন। এই তালিকায় অবশ্য আরেকটু হলেই হিগুয়েইনকে সরিয়ে ঢুকে পড়তে পারতেন রোমেলু লুকাকু, লুকাকু পেছনে পরেছেন মাত্র ৩ লাখ পাউন্ডের জন্য।
ফরোয়ার্ড- ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো (ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড থেকে রিয়াল মাদ্রিদ; ৮০ মিলিয়ন পাউন্ড)
হিগুয়েইন-লুকাকুদের দাম দেখে হয়তো মনে মনে মুচকি হাসেন ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো। রোনালদো ক্লাব ছাড়তে চাইলে যে সব রেকর্ড চুরমার করে দিতে পারেন, সেটা কে না জানে! যতই দাম উঠুক লুকাকুদের, এখনো কিন্তু ফুটবল বিশ্বের সবচেয়ে দামী ফরোয়ার্ড রোনালদোই। আট বছর আগে ৮০ মিলিয়নের বিনিময়ে মাদ্রিদে এসেছিলেন, আজও অক্ষত আছে সেই রেকর্ড।
বদলি খেলোয়াড়-
গোলকিপার- জিয়ানলুইজি বুফন (পার্মা থেকে জুভেন্টাস; ৩২.৬ মিলিয়ন পাউন্ড)
ডিফেন্ডার- শকোদ্রান মুস্তাফি (ভ্যালেন্সিয়া থেকে আর্সেনাল; ৩৫ মিলিয়ন পাউন্ড)
মিডফিল্ডার- কাকা (এসি মিলান থেকে রিয়াল মাদ্রিদ; ৫৯ মিলিয়ন পাউন্ড)
মিডফিল্ডার- কেভিন ডি ব্রুইন (ভলফসবার্গ থেকে ম্যানচেস্টার সিটি; ৫৪.৫ মিলিয়ন পাউন্ড)
ফরোয়ার্ড- রোমেলু লুকাকু (এভারটন থেকে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড; ৭৫ মিলিয়ন পাউন্ড)
ফরোয়ার্ড- লুইস সুয়ারেজ (লিভারপুল থেকে বার্সেলোনা; ৬৫ মিলিয়ন পাউন্ড)
তথ্যসূত্র ও ছবি কৃতজ্ঞতা: স্কাই স্পোর্টস