ক্লাব ফুটবলের ইতিহাসের অন্যতম সেরা ও অভিজাত ক্লাব রিয়াল মাদ্রিদ। সারা বিশ্বের সব সেরা খেলোয়াড়দের নিয়ে দল গড়ায় জুড়ি নেই মাদ্রিদের। তারকার সম্মিলনী ঘটিয়েছিলেন বলে ফ্লোরেন্টিনো পেরেজের রিয়াল মাদ্রিদকে একসময় বলা হত ‘গ্যালাকটিকোস’। কিন্তু তাই বলে যে রত্ন চিনতে মাদ্রিদের একেবারেই ভুল হয় না, সেরকমটাও কিন্তু না। রিয়াল মাদ্রিদের সেরকমই কিছু ব্যর্থ সাইনিং নিয়ে থাকছে এবারের আয়োজন। আজ থাকছে প্রথম পর্ব।
-
নিকোলাস আনেলকা- আর্সেনাল থেকে ২০০৯ সালে; ৩৪.৫ মিলিয়ন ইউরো
৩৪.৫ মিলিয়ন ইউরোর বিনিময়ে আর্সেনাল থেকে ফ্রেঞ্চ স্ট্রাইকার আনেলকাকে দলে ভিড়িয়ে একপ্রকার ফাটকাই খেলেছিল মাদ্রিদ। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত সে ফাটকা কাজে লাগেনি। স্পেনে মাত্র ১ মৌসুমই টিকতে পেরেছিলেন এই ফরাসী স্ট্রাইকার।
শুরুটা কিন্তু আশা জাগানিয়াই ছিল আনেলকার। মাদ্রিদের সাদা জার্সি গায়ে প্রথম গোল পেয়েছিলেন ক্লাসিকোতে। চ্যাম্পিয়ন্স লীগ সেমিফাইনালে বায়ার্নের বিপক্ষে দুই গোলও করেছিলেন। কিন্তু সব মিলিয়ে ওই মৌসুমে করতে পেরেছিলেন মাত্র ৭ টি গোল। এর পেছনে অবশ্য আনেলকার নিষেধাজ্ঞারও একটা হাত আছে। স্পেনে তাঁকে ‘কুকুরের মত’ খাটানো হচ্ছে এই অভিযোগে অনুশীলন করতে অস্বীকৃতি জানানোয় ক্লাব কর্তৃপক্ষের থেকে মেলে ৪৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা! পরবর্তীতে ১ মৌসুম পরেই আনেলকাকে পিএসজির কাছে বিক্রি করে দেয় মাদ্রিদ।
-
এলভির বালজিচ- ফেনেরবাচে থেকে ১৯৯৯ সালে; ২৬ মিলিয়ন ইউরো
এতগুলো অর্থ অপচয়ের জন্য রিয়াল চাইলে জন টোশাক কে দায়ী করতেই পারে। এই ওয়েলস ম্যানের কথায় রাজি হয়েই তো বসনিয়ান ফরোয়ার্ডের জন্য এতগুলো ইউরো খরচ করতে রাজি হয়েছিল লস ব্লাঙ্কোসরা!
স্পেনে আসার পরপরই হাঁটুর ইনজুরিতে পড়েন বালজিচ। কিন্তু ফিট হওয়ার পরেও এমন কোন খেলা দেখাতে পারেননি, যা দেখে মনে হয় তিনি আসলেই রিয়াল মাদ্রিদের মত দলের ফরোয়ার্ড হওয়ার যোগ্য। মাদ্রিদে নিজের এক মৌসুমে লা লিগায় মোটে ১ গোল করেছিলেন বালজিচ! ফলাফল, এক মৌসুম পরেই ফেনেরবাচেতে আবার ধারে পাঠানো হয় বালজিচকে। পরবর্তীতে এক সাক্ষাৎকারে বালজিচ বলেছিলেন, ‘মিডিয়া আমাকে রিয়াল মাদ্রিদের ফ্লপ সাইনিংয়ের লিস্টে অন্তর্ভুক্ত করেছে দেখে আমি মোটেও হতাশ নই, কারণ আমি নিজে সেরকমটা ভাবিনা’!
-
অ্যান্টোনিও কাসানো- রোমা থেকে ২০০৬ সালে; ৫ মিলিয়ন ইউরো
টাকার অঙ্কটা দেখলে তেমন বড় কিছু মনে হবে না, কিন্তু অ্যান্টোনিও কাসানোর সাইনিংটা রিয়ালের জন্য বিভীষিকার চেয়ে কম কিছু ছিল না! ৭ ম্যাচ খেলে মাত্র ১ গোল করেছিলেন, কিন্তু সেটাও সম্ভবত অতটা সমস্যা করেনি যতটা করেছিল কাসানোর মাত্রাতিরিক্ত খাদ্যপ্রীতি!
ইতালিয়ান ফুটবলার পরে নিজেই স্বীকার করেছিলেন, ‘মাদ্রিদে আমার একটা ওয়েটার বন্ধু ছিল। ওর কাজ ছিল প্রতিবার যৌন সঙ্গমের পর আমাকে ৩-৪ টি করে পেস্ট্রি সরবরাহ করা। ও পেস্ট্রি নিয়ে উপরে আসলে পরে ওর সাথে পেস্ট্রি আর নারী অদল বদল করে নিতাম! ওকে নারী দিয়ে ওর থেকে পেস্ট্রি নিয়ে নিতাম। নারী আর পেস্ট্রি, দুয়ে মিলে হত একটি সম্পূর্ণ রাত’!
-
দানিলো- পোর্তো থেকে ২০১৫ সালে; ৩১.৫ মিলিয়ন ইউরো
মাদ্রিদে মিডিয়া প্রতিটি খেলোয়াড়কে এমন নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখে, যা কিনা খেলোয়াড়দের উপর চাপ হয়ে জেঁকে বসে। ভাববেন না বাইরের কেউ বলেছে কথাটি, কথাটি স্বয়ং মাদ্রিদ ডিফেন্ডার দানিলোর। ‘এখানে ছোটখাটো একটি ভুলও সহজে ভাইরাল হয়ে যায়। আবার আপনি যখন ভালো কিছু করেন, সেটিও খুব সহজেই মানুষের চোখে পড়বে’।
পোর্তো থেকে দুই মৌসুম থেকে মাদ্রিদে আসলেও এখনো নিজের নামের প্রতি সুবিচার করতে পারেননি এই ব্রাজিলিয়ান। ২০১৫-১৬ মৌসুমে রিয়াল মোট যতগুলো ম্যাচ হেরেছিল, তার প্রতিটিতে প্রতিটি মিনিট মাঠে ছিলেন দানিলো! এই মৌসুমে চেলসি এবং জুভেন্টাস দুই দলের রাডারেই আছেন দানিলো, কে জানে উপযুক্ত মূল্য পেলে হয়তো তাঁকে ছেড়েও দেবে মাদ্রিদ।
-
মাইকেল এসিয়েন- চেলসি থেকে ধারে ২০১২ সালে
২০১২-১৩ মৌসুমে হোসে মরিনহো যখন এই ঘানাইয়ানকে দলে টানেন, তখনই অনেকে একটু ভ্রু কুঁচকেছিলেন। এমনিতেই হাঁটুর ইনজুরির কারণে চেলসিতে নিজেকে হারিয়ে খুঁজছিলেন, তার মধ্যে মাদ্রিদের মত ক্লাবে এসে কতটা কি করতে পারবেন, তা নিয়ে সন্দেহ ছিল শুরু থেকেই। শেষ পর্যন্ত সেই শঙ্কাই সত্যি প্রমাণিত হয়েছিল। মরিনহো নাকি খেলোয়াড় এসিয়েনে না, বরং মানুষ এসিয়েনে মুগ্ধ হয়ে তাঁকে দলে টেনেছিলেন! এসিয়েনের ৩০ তম জন্মদিনে অনেক মাদ্রিদ খেলোয়াড় যোগদান না করায় মরিনহো তাদের উপর রুষ্ট হয়েছিলেন বলেও জানা যায়।