ডব্লিউ জি গ্রেস একবার আউট হওয়ার পর ক্রিজ ছেড়ে যেতে না চাইলে আম্পায়ার তাকে ড্রেসিংরুমে ফিরে যেতে বলেন। তখন গ্রেস বলেছিলেন, ‘দর্শকেরা কি বোলারের আউট করার উল্লাস দেখতে এসেছে? দর্শকেরা আমার ব্যাটিং দেখতে এসেছে’। কথাটার মর্মার্থ একদিক থেকে কিন্তু সত্য। যতই ব্যাট বলের ভারসাম্যের কথা বলা হোক, শেষ পর্যন্ত কিন্তু দর্শকেরা চার ছক্কাই দেখতে চান। ব্যাটসম্যানেরা একক নৈপুণ্যে যেমন দর্শকদের আনন্দ দেন, তেমনি জুটি বেঁধে ফিল্ডিং দলকে শাসন করার নজিরও নেহায়েত কম নেই। ক্রিকেট ইতিহাসের তেমনি বিখ্যাত ১০ টি জুটির গল্প থাকছে আপনাদের জন্য। আজ প্রথম পর্বে থাকছে টেস্ট ইতিহাসের বিখ্যাত ৫ টি জুটির কথা।
১) গেইল-স্যামুয়েলসের বিশ্বরেকর্ড জুটি:
গত বিশ্বকাপে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও জিম্বাবুয়ের মধ্যকার ম্যাচ। ম্যাচের শুরুটা হয়েছিল একেবারে জিম্বাবুয়ের স্বপ্নের মত, দ্বিতীয় বলেই বোল্ড ডোয়াইন স্মিথ। কিন্তু এরপর ক্রিস গেইল ও মারলন স্যামুয়েলস মিলে ম্যাচটাকে জিম্বাবুয়ের জন্য বানিয়ে তোলেন দুঃস্বপ্ন। ইনিংসের তৃতীয় বলে জুটি বেঁধেছিলেন, সেই জুটি ভাঙ্গে একেবারে ইনিংসের শেষ বলে! মাঝে দুজনে মিলে যোগ করেন ৩৭২ রান। বিশ্বকাপে তো বটেই, ওয়ানডে ক্রিকেটের ইতিহাসেই যা যেকোনো উইকেটে সর্বোচ্চ রানের জুটি। ক্রিস গেইলের ব্যাট থেকে আসে ২১৫ রান, আর স্যামুয়েলস করেন অপরাজিত ১৩৩ রান। দুজনে মিলে মেরেছিলেন ২১ টি চার ও ১৯ টি ছয়।
২) সাকিব-মাহমুদউল্লাহর অবিশ্বাস্য জুটিতে বাংলাদেশের স্বপ্নপূরণ:
এই জুটি নিয়ে আর নতুন করে লেখার কিছু নেই। কার্ডিফে মোহাম্মদ আশরাফুলের সেঞ্চুরির মত এই জুটিটিও বাংলাদেশের ক্রিকেট রূপকথার অংশ হয়ে গেছে! শুধু দেশের ক্রিকেটেই বা কেন, এই জুটি তো বিশ্ব ক্রিকেটের ইতিহাসেই চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে! শুধু রানের সংখ্যার জন্য নয়, ম্যাচের পরিস্থিতি বিবেচনায়ও এই জুটি অমূল্য। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ইতিহাসে এটিই ৫ উইকেট জুটিতে সর্বোচ্চ রানের জুটি, ওয়ানডে ইতিহাসেই ৫ম উইকেটে এর চেয়ে বেশি রানের জুটি আছে মাত্র দুইটি। হ্যামিল্টনে জিম্বাবুয়ের সাথে জেপি ডুমিনি-ডেভিড মিলার করেছিলেন অপরাজিত ২৫৬ রান, আর ডাবলিনে আয়ারল্যান্ডের সাথে রবি বোপারা-এউইন মরগান মিলে যোগ করেছিলেন অপরাজিত ২২৬ রান।
৩) সৌরভ-দ্রাবিড়ের যে জুটি ইতিহাসে থাকবে চিরকাল:
গেইল-স্যামুয়েলস ভেঙ্গে দেয়ার আগে বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ জুটির রেকর্ডটি ছিল ভারতের সৌরভ গাঙ্গুলী ও রাহুল দ্রাবিড়ের দখলে। ১৯৯৯ বিশ্বকাপে ভারতের দুই তরুণ তুর্কি গাঙ্গুলী ও দ্রাবিড় মিলে ২য় উইকেটে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে করেছিলেন ৩১৮ রানের জুটি। ইনিংসের এক বল বাকি থাকতে আউট হওয়ার আগে সৌরভ করেন ক্যারিয়ারসেরা ১৮৩ রান, আর দ্রাবিড়ের ব্যাট থেকে আসে ১৪৫ রানের ইনিংস।
৪) থারাঙ্গা-জয়াসুরিয়ার দখলে সেরা ওপেনিং জুটির রেকর্ড
প্রথমে ব্যাট করে স্কোরবোর্ডে জমা পরেছে ৩২১ রানের বড় সংগ্রহ, লিডসে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে তাই জয়ের আশাই করছিল ইংল্যান্ড। কিন্তু ‘মাতারা হারিকেন’ যে ভেবে রেখেছিলেন অন্য কিছু! উপুল থারাঙ্গাকে সাথে নিয়ে গড়লেন ২৮৬ রানের ওপেনিং জুটি! তাও আবার মাত্র ৩২ ওভারে! টর্নেডোর গতিতে ব্যাট চালিয়ে জয়াসুরিয়া করেন ১৫২ রান, তাও মাত্র ৯৯ বলে। থারাঙ্গা করেছিলেন ১০২ বলে ১০৯ রান।
৫) রঙ্কি-এলিয়টে অবিশ্বাস্য নিউজিল্যান্ড:
টস হেরে ব্যাট করতে নেমে মাত্র ২০ ওভারে ৯৩ রানেই নেই ৫ উইকেট। নিউজিল্যান্ড তখন অশনি সংকেত দেখছে। সেই অবস্থায় ত্রাতা হয়ে এলেন লুক রঙ্কি ও গ্র্যান্ট এলিয়ট, লঙ্কান বোলারদের ছাতু বানিয়ে ষষ্ঠ উইকেট জুটিতে দুজনে মিলে গড়লেন অবিচ্ছিন্ন ২৬৭ রানের জুটি! ২০ ওভার শেষে যে দলের সংগ্রহ ছিল মাত্র ৯৩, ৫০ ওভার শেষে তারাই গিয়ে দাঁড়ায় ৩৬০ রানের পর্বতসমান সংগ্রহে! ষষ্ঠ উইকেট জুটিতে এটিই ওয়ানডে ইতিহাসের সেরা জুটি।