এত বছরের ইতিহাসে প্রত্যাবর্তনের গল্প কম দেখেনি ফুটবল বিশ্ব। প্রতিকূল অবস্থায় থেকেও হার না মানা মানসিকতা ধরে রেখে প্রত্যাবর্তনের অসাধারণ গল্প লিখেছে বহু দল। প্রিয়লেখার ঈদ আয়োজনে আপনাদের জন্য থাকছে সেরকমই কিছু দুর্দান্ত প্রত্যাবর্তন কাহিনী। আজকে থাকছে প্রথম পর্ব।
১) ইউসেবিও জাদুতে পর্তুগালের অবিশ্বাস্য জয়ঃ
১৯৬৬ বিশ্বকাপে পর্তুগাল-উত্তর কোরিয়ার এই ম্যাচ বিশ্বকাপ ইতিহাসের সেরা ১০ ম্যাচের একটি বলে বিবেচিত, আর পর্তুগালের ‘কালো পেলে’ বলে খ্যাত ইউসেবিওর অনবদ্য পারফরম্যান্সে সেই ম্যাচে জয়ে নিয়ে ফিরেছিল পর্তুগাল।
অথচ টুর্নামেন্ট শুরুর আগে উত্তর কোরিয়া যে এতদূর আসবে এটাই কেউ ভাবেনি। গ্রুপে নিজেদের প্রথম ম্যাচে সোভিয়েত ইউনিয়নের কাছে ৩-০ গোলের হারের পর তাদের বিদায় সম্পর্কে কারোর মনেই কোন সন্দেহ ছিল না। কিন্তু ২য় ম্যাচে চিলির সাথে ১-১ গোলে ড্র ও শেষ ম্যাচে দুইবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ইতালিকে ১-০ গোলে হারিয়ে বিস্ময়করভাবে নকআউট পর্বে উঠে যায় উত্তর কোরিয়া।
অপরদিকে গ্রুপে নিজেদের তিন ম্যাচই দাপটের সাথে জিতে কোয়ার্টার ফাইনালে ওঠা পর্তুগালের সামনে উত্তর কোরিয়া কোন বাধা হবে না বলেই ধারণা ছিল সকলের। কিন্তু সবাইকে চমকে দিয়ে প্রথমার্ধের অর্ধেক সময় যেতে না যেতেই ৩-০ গোলে এগিয়ে যায় উত্তর কোরিয়া। পর্তুগাল তখনও বুঝে উঠতে পারেনি কি হচ্ছে ম্যাচে। দ্রুতই বিভ্রম কাটিয়ে পর্তুগিজদের ম্যাচে ফেরান তাদের সবচেয়ে বড় তারকা ইউসেবিও। বিরতির আগেই ২ গোল শোধ দেন।
দ্বিতীয়ার্ধের ১৫ মিনিটের মধ্যে আরও দুই গোল করে নিজের হ্যাটট্রিক পূরণের পাশাপাশি পর্তুগালকে লিডও এনে দেন ইউসেবিও। ম্যাচের ১০ মিনিট বাকি থাকতে হোসে টোরেসের গোলে স্বপ্নভঙ্গ হয় উত্তর কোরিয়ার। একাই চার গোল করে পর্তুগালকে সেমিফাইনালে তোলেন ইউসেবিও।
২) রুপকথা লিখে লিভারপুলের চ্যাম্পিয়ন্স লীগ জয়ঃ
এখনো পর্যন্ত চ্যাম্পিয়ন্স লীগ ইতিহাসের সেরা প্রত্যাবর্তন বলা হয় এসি মিলান ও লিভারপুলের এই ম্যাচটিকে। ২০০৫ সালের চ্যাম্পিয়ন্স লীগ ফাইনালে ইস্তাম্বুলে মুখোমুখি হয় ইতালির মিলান ও ইংল্যান্ডের লিভারপুল। ম্যাচের আগে মিলানকেই ফেভারিট ধরা হচ্ছিল। অধিনায়ক পাউলো মালদিনির গোলে প্রথম মিনিটে এগিয়েও যায় তারা। বিরতির আগেই হার্নান ক্রেসপো আরও দুই গোল করলে প্রথমার্ধ শেষেই ৩-০ গোলে এগিয়ে যায় মিলান। মিলান সমর্থকেরা তখন উদযাপন শুরু করে দিয়েছেন, চ্যাম্পিয়ন্স লীগ ফাইনালে ৩ গোলের ঘাটতি মিটিয়ে এর আগে চ্যাম্পিয়ন হয়নি কেউ। কিন্তু দ্বিতীয়ার্ধে ৬ মিনিটের এক পাগুলে ঝড়ে খেলায় ৩-৩ সমতা আনে লিভারপুল। শেষ পর্যন্ত টাইব্রেকারে ৩-২ গোলে মিলানকে হারিয়ে শিরোপা উঠে লিভারপুলের হাতেই।
৩) জার্মানিকে স্তব্ধ করে দিয়েছিল যে ড্রঃ
২০১৪ ব্রাজিল বিশ্বকাপের ইউরোপ অঞ্চলের বাছাইপর্বের খেলা চলছে, মুখোমুখি জার্মানি ও সুইডেন। বিরতির আগেই মিরোস্লাভ ক্লোজার দুই গোল ও পার মার্টেসেকারের এক গোলে ৩-০ তে এগিয়ে যায় জার্মানি। বিরতির পরে মেসুত ওজিল আরও এক গোল দিলে ৪-০ ব্যবধানে ম্যাচে এগিয়ে যায় জার্মানি, জয় তখন একরকম নিশ্চিত। কিন্তু সেখান থেকেই জোয়াকিম লো কে স্তব্ধ করে দিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর অবিশ্বাস্য গল্প লেখে ইব্রাহিমোভিচের সুইডেন। ম্যাচের মাত্র ৩০ মিনিট বাকি থাকতে যে দল ৪ গোলে পিছিয়ে, ম্যাচ শেষে তারাই কিনা ৪-৪ সমতায়! ফলাফলে ড্র লেখা থাকলেও এই ড্র আসলে জার্মানির কাছে পরাজয়েরই শামিল, অপরদিকে ড্র করেও জয়ের আনন্দে মাতোয়ারা হয়েছিল সুইডিশরা।
৪) হাল না ছাড়া জার্মান মনোভাবে জিতেছিল ব্রেমেনঃ
কখনোই হাল না ছাড়া জাতি হিসেবে সুনাম আছে জার্মানির। জার্মানদের সেই চেনা রুপটাই আরেকবার নতুন করে দেখিয়েছিল জার্মান ক্লাব ভের্ডার ব্রেমেন। এটিও চ্যাম্পিয়ন্স লীগেরই ম্যাচ, ১৯৯৩ সালে। ৬৬ মিনিট পর্যন্ত ৩-০ গোলে এগিয়ে ছিল বেলজিয়ান ক্লাব আন্ডারলেখট। জয় প্রায় নিশ্চিত মনে করেই কিনা, খেলায় একটু ঢিলেমি দিয়েছিল বেলজিয়ান ক্লাবটি। আর সেই সুযোগেই মাত্র ২৩ মিনিটে ৫ গোল করে ম্যাচটি ৫-৩ গোলে জিতে নেয় ব্রেমেন!