আচ্ছা, বাংলাদেশ আসলে কোন দিকে যাচ্ছে? বাংলাদেশ বলতে এখানে দেশের কথা বোঝাচ্ছি না। বোঝাচ্ছি, এই দেশের তরুণ সমাজ কোনদিকে যাচ্ছে? গবেষণা করবার জন্য এটি খুব মুখরোচক বিষয় হতে পারে তবে সাদা চোখ নিয়ে যদি আপনি চারপাশে তাকান, তাহলে দেখতে পাবেন বাংলাদেশের একজন কিশোরের পরিপূর্ণ যুবায় পরিণত হতে বেশ কয়েকটি ধাপ পার হতে হয়। এই ধাপগুলো যদি দেখা যায় তাহলে এই ধাপের মাঝে কি কি থাকতে পারে?
প্রথমত, পড়াশোনা।
দ্বিতীয়ত, বন্ধু বান্ধবের সাথে এক ধরণের সামাজিকীকরণ প্রক্রিয়া।
তৃতীয়ত, একটি পরিণয়ে সূত্রিত হওয়া, যেটিকে আমরা কেউ কেউ বলে থাকি কৈশোরের সামান্য ভুল হিসেবে।
চতুর্থত, একটি প্রকট মুখোশধারী সমাজের দিকে এগিয়ে যাওয়া। এই সমাজকে চাকচিক্যের বাহার বলুন কিংবা নিজেদের সামাজিক স্ট্যাটাস বজায় রাখবার একটি ধাপ, প্রক্রিয়াটি কিন্তু সুস্থ নয়।
তবে আশার ব্যাপার হচ্ছে এখনো বাংলাদেশকে নিয়ে, দেশের তরুণ সমাজকে নিয়ে স্বপ্ন দেখতে মানুষ আশা করে। স্বপ্নে আমরা যেমন বসত করি, ঠিক তেমনি সে বসতের ভিতটাও গড়তে চাই। কিন্তু কিভাবে?
কেউ বলেন, আমাদের দেশের মেধা প্রচুর কিন্তু সঠিক মূল্যায়ন হয় না। আবার কেউ কেউ বলেন, মেধা রয়েছে কিন্তু সঠিকভাবে তা পরিচর্যা করা হয় না উপযুক্ত পরিবেশের অভাবে। তবে একটা কথা ঠিক, ফান্ডিং কিংবা বাজেট আমাদের দেশের তরুণ সমাজকে এগিয়ে নিয়ে যাবার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ। সমাজের বিত্তশালী যারা রয়েছেন, তারা কিন্তু ইচ্ছা করলে দেশের আনাচে কানাচে থেকে এসব উদ্যমী তরুণদের পরিচয় করিয়ে দিতে পারেন বিশ্ব দরবারের সামনে। সে সুযোগটিও নেই? তাহলে তো তরুণদের উদ্দেশ্যে রবি ঠাকুরের সে চরণকেই পাথ্যে হিসেবে নিতে হয়-
“যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে
তবে একলা চল রে”
শুরুটা করেই ফেলুন না? নিজের আইডিয়াকে কেবল স্বপ্নে না রেখে বাস্তবায়ন করা শুরু করুন। আজ আপনাদের সাথে পরিচয় করিয়ে দেব এমন ক’জন উদ্যোক্তার সাথে যারা তাদের স্বপ্নের বলে বলীয়ান হয়ে আজ পৃথিবীর বুকে নিজেদের সফল উদ্যোগ শুরু করেছেন। এরা কেউই আমাদের দেশী নয় তবে আপনি এদের আইডিয়াগুলো দেখলে চমকে যাবেন। চমৎকার কিন্তু সাধারণ কিছু বুদ্ধিদীপ্ত কৌশল নিয়ে তারা তাদের ব্যাটন উঁচিয়ে ধরেছেন অতি গর্বের সাথে, সমগ্র পৃথিবীতে।
১) নোয়া মিন্টযঃ ন্যানি’জ বাই নোয়া (Nannies by Noa) এর প্রতিষ্ঠাতাঃ
নোয়া মাত্র ১৬ বছর বয়সে তার এই কাজটি শুরু করেছেন। সোজা বাংলায় বলতে গেলে, নোয়ার কাজটি হচ্ছে ঘরে ঘরে প্রসূতি মায়ের জন্য “দাই মা” সরবরাহ করা। আমাদের দেশে কর্মজীবি নারীরা রয়েছেন যারা কর্মক্ষেত্রে গেলে প্রায়ই নানা দোটানার মধ্যে পড়ে যান যে বাচ্চা কার কাছে দিয়ে যাবেন। এটি শুধু আমাদের দেশ না, বিশ্বের প্রতিটি দেশের জন্যই প্রযোজ্য। নোয়ার মাথায় একটি বুদ্ধি আসে যে, যারা কর্মজীবি রয়েছেন, তাদের সন্তানের দেখভালের জন্য যদি শিক্ষিত, আধুনিক মেয়েদের কাজে লাগানো যায় তাহলে কেমন হয়? এর থেকে দুটি কাজ হবে। প্রথমটি হচ্ছে, কর্মজীবি মায়েদের সন্তানকে নিয়ে আর চিন্তা ভাবনা করা লাগবে না। দ্বিতীয়টি হচ্ছে, কিশোরী মেয়েদের সময়টিও ভালো কাটবে বাচ্চাদের সাথে, একইসাথে তাদের পকেটেও কিছু ডলার আসবে।
বর্তমানে ন্যানিজ বাই নোয়া একটি সফল উদ্যোগ।
২) জর্জ মাতুসঃ টিল’এর প্রতিষ্ঠাতা (Teal)
হাইস্কুলে থাকাকালীন সময়েই একজন কিশোর তার স্বপ্ন বাস্তবায়ের জন্য ২.৮ মিলিয়ন ডলার সংগ্রহ করে ফেলেছেন! কেমন করে সম্ভব হলো এটি?
জর্জ মাতুস একজন হাইস্কুল টিনেজার। তিনি হচ্ছেন টিল’এর প্রতিষ্ঠাতা, যে কোম্পানিটি ইলেকট্রনিক ড্রোন তৈরি করে থাকে। এই ড্রোনের সাথে যুক্ত থাকে পাখা এবং স্বয়ংক্রিয় ক্যামেরা। এটি ঘন্টায় প্রায় ৭০ মাইল উড়তে সক্ষম। জর্জ মাতুসের এই আবিষ্কার বর্তমানে সেনাবাহিনী থেকে শুরু করে বিভিন্ন প্রাইভেট প্রতিষ্ঠান, চলচ্চিত্র নির্মাণের কাজে মাতুসের এই ড্রোন নানাভাবে ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
৩) শুভম ব্যানার্জীঃ ব্রেইগো ল্যাবস এর প্রতিষ্ঠাতা (Braigo Labs)
শুভম ব্যানার্জী। মাত্র ১৪ বছর বয়সেই তৈরি করে ফেলেছেন যারা অন্ধ হবার কারণে পড়তে অপারগ, তাদের জন্য চমৎকার একটি ব্রেইল বুক। ওয়াই ফাই ও ইন্টারনেটের সাহায্যে এই ব্রেইল বই খুব সহজেই কোন লেখাকে ব্রেইলে রুপান্তর করে ফেলতে পারবে। শুভম ব্যানার্জী এখন চেষ্টা করছেন চিকিৎসা বিদ্যায় কেমন করে আধুনিক প্রযুক্তির যোগাযোগ আরো ভালোভাবে করা যায়।
শুরুটা আসলে করা যায় নিজের ভেতর থেকেই। জগতের বিখ্যাত সব মানুষদের দিকে তাকিয়ে দেখুন। তারা কিন্তু কেউ সোনার চামচ মুখে নিয়ে জন্ম নেয় নি। অনেক সাধনা, ত্যাগ স্বীকার করে সাফল্যের দ্বারপ্রান্তে তাদের পৌছতে হয়েছে। আর একটি কথা সবসময় মনে রাখা উচিত আমাদের। তা হচ্ছে, একজন ব্যর্থ মানুষই কেবল জানেন সফলতার স্বাদ কি। তাই ব্যর্থ হওয়াকে সহজভাবে নিতে শিখুন। মনে করুন, আপনার সামনের রাস্তায় এগিয়ে যাবার ক্ষেত্রে রাস্তাটি আরেকটু প্রশস্ত হলো মাত্র। অর্থ কিংবা যশের পেছনে এখুনি ছুটবেন না। লেগে থাকুন, সাফল্য আসবেই।
শেষ করছি শুভম ব্যানার্জীর একটি প্রিয় উক্তির মাধ্যমে,
“বিনয়ী হতে শিখুন। আবিষ্কার করুন সঠিক কারণের উদ্দেশ্যে, অর্থের উদ্দেশ্যে নয়।”
আজ এ পর্যন্তই। প্রিয়লেখার সাথে থাকুন, সকলের প্রিয় হয়ে থাকুন।