টুর্নামেন্টের অন্যতম ফেভারিট ভারতের কাছে বড় ব্যবধানে হেরেই চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে নিজেদের সফলতম আসর শেষ করেছে টাইগারেরা। কিন্তু তারপরেও বাংলাদেশ সম্মানের সাথেই দেশে ফিরবে বলে মনে করেন লঙ্কান কিংবদন্তি কুমার সাঙ্গাকারা। আইসিসির ওয়েবসাইটে এক কলামে এমনটাই জানিয়েছেন সদ্যই প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে শততম সেঞ্চুরির মালিক হওয়া এই ব্যাটসম্যান। প্রিয়লেখার পাঠকদের জন্য সাঙ্গাকারার কলামটি অনুবাদ করা হল।
চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির শিরোপা ধরে রাখার মিশনে ভারত আরও এক ধাপ এগিয়ে গেল। এজবাস্টনে শ্রেয়তর দল হিসেবেই সেমিফাইনাল জিতেছে তারা। এশিয়ান ডার্বির জন্য বার্মিংহাম ছিল উপযুক্ত একটি ভেন্যু, আর সেখানে রোহিত আর শিখর ভালো ব্যাটিং করেছে।
ভারতের জয়ে আরও একটি ভারত-পাকিস্তান ফাইনাল নিশ্চিত হল, টুর্নামেন্ট শুরুর আগে যেটা খুব কম লোকই ভেবেছিলেন। এই কন্ডিশনে তিনটি এশিয়ান দল সেমিফাইনালে উঠবে, সেটিই বা কয়জন ভেবেছিলেন!
কিন্তু বিগত কয়েক সপ্তাহে এশিয়ান দলগুলো এখানে খুব ভালোভাবে খাপ খাইয়ে নিয়েছে, নিজেদের সামর্থ্য এবং চরিত্র দেখিয়ে ঠিকই নিজেদের যোগ্যতা প্রমাণ করেছে।
এই ম্যাচে বাংলাদেশ ভালো খেলতে পারেনি ঠিকই, কিন্তু ঢাকার বিমানবন্দরে তারা যখন নামবে, মাশরাফি বাহিনী তাদের মাথা উঁচু রাখতেই পারে। আর পরবর্তী অস্ট্রেলিয়া সিরিজেও তারা নিজেদের আত্মসম্মানবোধ নিয়েই খেলতে নামতে পারবে।
গত কয়েক বছরে চন্ডিকা হাথুরুসিংহের মত একজন কোচ, বিসিবির মত একটি প্রতিষ্ঠান ও সাকিব আল হাসানের মত কিছু সিনিয়র প্লেয়ারের তত্ত্বাবধানে বাংলাদেশ সত্যিই দারুণ উন্নতি করেছে।
সর্বশেষ দুইটি আইসিসি ইভেন্টেই তারা নকআউট পর্বে উঠেছে, এবং ২০১৯ বিশ্বকাপের জন্য তারা এখন থেকেই জোরেশোরে পরিকল্পনা শুরু করে দিতে পারে, কারণ সেখানে তারা বিশ্বকাপের যোগ্য দাবিদার হিসেবেই যাবে।
বাংলাদেশ নিজেদের শক্তিমত্তা ও প্রাণোচ্ছলতা প্রমাণ করেছে। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সৌভাগ্যক্রমে ১ পয়েন্ট পেয়েছে ঠিকই, কিন্তু নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে তারা যে সাহসী মনোভাব দেখিয়েছে, তা আমাকে ১৯৯৬ এর শ্রীলঙ্কার কথাই মনে করিয়ে দেয়।
ভারতের বিপক্ষে খেলা বাংলাদেশের জন্য কঠিনই ছিল। তাদের ব্যাটসম্যানেরা দুর্দান্ত ফর্মে আছেন, তাদের বোলিং ইউনিট সুসংগঠিত, আর সবচেয়ে বড় ব্যাপার, তাদের ফিল্ডিং টুর্নামেন্ট সেরা মনে হয়েছে।
বাংলাদেশ কিন্তু বেশ শক্ত একটা ভিত্তি পেয়েছিল, কিন্তু এইরকম বড় টুর্নামেন্টের সেমিফাইনালের মত বড় ম্যাচ খেলার অনভিজ্ঞতাই ওদের জন্য কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। নাহলে ২২ ওভার হাতে রেখে ২ উইকেটে ১৫৪ রান, বাংলাদেশ কিন্তু ভালো কিছুরই ইঙ্গিত দিচ্ছিল।
খেলাটা ঘুরে গেছে কেদার যাদবকে বোলিংয়ে আনার পর। স্মার্ট মুভ ছিল এটা বিরাট কোহলির। তামিম আর মুশফিকুর যে কেদারের বোলিংয়ে অমনভাবে কাটা পরল, এর একটাই ব্যাখ্যা হতে পারে। বাংলাদেশ জানত এই উইকেটে ৩০০+ না করলে ভারতের সাথে পেরে ওঠা মুশকিল হবে, সে কারণে তারা শেষে উইকেট রেখে ঝড় তোলার বদলে কেদারের উপর চড়াও হতে চেয়েছিল।
আর শেষে এসে বাংলাদেশ আটকে গেছে জসপ্রীত বুমরাহর কাছে, যে কিনা খুব সম্ভবত এই মুহূর্তে বিশ্বের অন্যতম সেরা ডেথ ওভার বোলার।
শেষদিকে মাশরাফি মর্তুজার ঝড় কিছুটা হলেও আশা দেখিয়েছিল বাংলাদেশকে, কিন্তু সত্যিটা হল, এই উইকেটে ভারতকে ২৬৫ তে আটকে রাখা অনেকটা অসম্ভবই বটে। বাংলাদেশের শুরুতেই উইকেট দরকার ছিল, যাতে করে ভারতীয় শিবিরে একটা আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়তে পারত।
বাংলাদেশ তাদের অর্জন নিয়ে গর্বিত হতে পারে। কিন্তু ইংল্যান্ডে বিশ্বকাপ জেতার মিশনে আসতে হলে বাংলাদেশকে অবশ্যই তাদের বোলিংয়ে আরও ধার বাড়াতে হবে, আরও বৈচিত্র্য আনতে হবে। তাদের একটা দারুণ কোর গ্রুপ আছে, অসাধারণ সব প্রতিভাও আছে। শুধু দলটাকে গুছিয়ে আনতে হবে। আমি নিশ্চিত, বাংলাদেশের জন্য সামনে রোমাঞ্চকর সময়ই অপেক্ষা করছে।