ভারতের কাছে হেরে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি থেকে বিদায় নিতে হল বাংলাদেশকে। টুর্নামেন্টের শুরুতে অনেকেই বাংলাদেশকে সেমিফাইনালে না দেখলেও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে অসাধারণ এক জয়ে সেমিফাইনালে উঠে বাংলাদেশ। তবে সেমিফাইনালে উঠলেও বাংলাদেশকে ভাবাচ্ছে পুরো টুর্নামেন্টে বোলারদের পারফরম্যান্স। ব্যাটিংয়ে সিনিয়র ক্রিকেটারেরা আলো ছড়ালেও বোলিংটা আসলেই মানসম্মত হয়নি টাইগারদের, যে কারণে টুর্নামেন্ট জুড়েই ভুগতে হয়েছে বাংলাদেশকে।
নিজেকে নতুন করে চেনালেন তামিম:
তাঁর ব্যাটিংয়ের সৌন্দর্য নিয়ে প্রশ্ন ছিলনা কখনোই। জায়গায় দাঁড়িয়ে কভার ড্রাইভ, কিংবা দুই পা এগিয়ে এসে এক্সট্রা কাভার ফিল্ডারের মাথার উপর দিয়ে মারা লফটেড কাভার ড্রাইভ, কিংবা স্টেপ আউট করে লং অন দিয়ে মারা ছয়, সবই চোখের জন্য প্রশান্তিদায়ক। বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসের বেশিরভাগ ব্যাটিং রেকর্ডই তাঁর দখলে, তামিম ইকবাল তাই নিঃসন্দেহে এদেশের ক্রিকেট ইতিহাসের সেরা ব্যাটসম্যান।
কিন্তু এই তামিমই বছর দুয়েক আগেও ছিলেন বেশ অধারাবাহিক। ইনিংসগুলো বড় করতে পারতেন না, দলকে চাপের মুখে রেখে আউট হয়ে ফিরতেন প্রায়ই। সেই তামিম যে আর নেই, বদলে গেছেন অনেকটাই, এই চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি যেন তার সবচেয়ে বড় প্রমাণ। এই টুর্নামেন্ট থেকে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় প্রাপ্তিও সম্ভবত বাঁহাতি এই ওপেনারের দারুণ ধারাবাহিক পারফরম্যান্স।
চার ইনিংসে ব্যাট করে তিনটিতেই পেরিয়েছেন পঞ্চাশ, একটিতে তো সেঞ্চুরিও করেছেন। দায়িত্ব নিয়ে ইনিংস বড় করেছেন, নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচটি বাদে প্রতি ম্যাচেই দলকে এনে দিয়েছেন কাঙ্ক্ষিত সূচনা। প্রথমে সেট হতে একটু সময় নিয়েছেন, কিন্তু সেট হয়ে পরে হাত খুলেছেন দারুণভাবে। যার প্রমাণ, ৪ ইনিংসে ২৯৩ রান করে টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকদের তালিকায় তামিমের অবস্থান তিন নম্বরে। ৩০৪ ও ৩১৭ রান করে তামিমের উপরে আছেন কেবল রোহিত শর্মা ও শিখর ধাওয়ান।
তামিম ছাড়াও সেরা দশে আছেন বাংলাদেশের আরও একজন ব্যাটসম্যান, নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচে ম্যাচজয়ী ইনিংস খেলা সাকিব আল হাসান। ৪ ম্যাচে ১৬৮ রান নিয়ে তালিকার দশ নম্বরে আছেন সাকিব। খুব একটা পিছিয়ে নেই মুশফিকুর রহিম ও। ৪ ম্যাচে ১৬৩ রান নিয়ে এই উইকেটকিপার ব্যাটসম্যান আছেন ১২ নম্বরে।
এছাড়া সেরা বিশে আছেন আরও এক বাংলাদেশি। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সাকিব আল হাসানের সাথে রেকর্ড জুটি করা মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ৪ ম্যাচে ১৩৭ রান নিয়ে আছেন তালিকার ১৭ নম্বরে।
হতাশ করেছেন বোলারেরা:
ব্যাটসম্যানেরা যতটা ভালো করেছেন, ঠিক ততটাই হতাশাজনক পারফরম্যান্স দেখিয়েছেন বোলারেরা, যার প্রমাণ পাওয়া যায় শীর্ষ উইকেটশিকারি তালিকার দিকে তাকালে। ৪ ম্যাচে সম্ভাব্য ৪০ ম্যাচের মধ্যে মাত্র ১১ টি উইকেট শিকার করতে পেরেছেন টাইগার বোলারেরা! এর মধ্যে আবার ৩ টিই গেছে অনিয়মিত বোলার মোসাদ্দেক হোসেনের পকেটে।
তালিকার সেরা বিশে জায়গা পাওয়া একমাত্র বাংলাদেশি বোলারও তাই এই মোসাদ্দেকই। তিনি আছেন ২০ নম্বরে। ৪ ম্যাচে ২ উইকেট পাওয়া অধিনায়ক মাশরাফি মর্তুজা আছেন তালিকার ২৯ নম্বরে। সমান দুই উইকেট পাওয়া তাসকিন আহমেদ ও রুবেল হোসেন আছেন যথাক্রমে ৩৬ ও ৩৭ নম্বরে।
তবে উইকেটের জন্য সবচেয়ে বেশি ভরসা ছিল যাদের উপরে, সেই মুস্তাফিজুর রহমান ও সাকিব আলা হাসান হতাশ করেছেন চূড়ান্তভাবে। মুস্তাফিজ তবুও নিউজিল্যান্ডের সাথে ১ উইকেট পেয়েছিলেন, আশ্চর্যজনক হলেও সত্যি, গোটা টুর্নামেন্টে একটিও উইকেট পাননি দলের অন্যতম বোলিং ভরসা সাকিব আল হাসান! টুর্নামেন্টে ৬৬ জন বোলার বল করেছেন, তাদের মধ্যে সাকিব আল হাসানের অবস্থান ৬০ তম!
চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির মিশন শেষ, প্রথমবারের মত কোন বৈশ্বিক আসরে সেমিফাইনাল খেলার গর্ব নিয়েই দেশে ফিরবেন মাশরাফিরা। কিন্তু বোলারদের পারফরম্যান্স কেন এতটা খাপছাড়া হল, সেটা বোধহয় একটু ভেবে দেখার সময় এসেছে!