রায়ের বাজার সবুজ সংঘ ক্রীড়া চক্রর পখ থেকে রাস্তার পাশে বেশ বড় করে চে গুয়েভারার একটি ছবি আঁকা হয়েছে। লাল ইটের দেয়ালের উপর ছবির বাম পাশে গোটা গোটা করে লেখা “মুক্তি অথবা মৃত্যু”। দেয়ালের উপরে এমন বিভিন্ন অর্থবহুল চিত্র বা লেখার নামই গ্র্যাফিটি।
গ্র্যাফিটি বলতে এমন একটি ধারণাকে বোঝায় যা অবশ্যই অবৈধ হবে, বিপ্লবী মনোভাব সম্পন্ন হবে এবং যার মধ্যে প্রতিবাদের একটি সুর থাকবে। বিভিন্ন দেশে গ্র্যাফিটি শিল্পীরা তাই বেনামে তাদের শিল্প চর্চা করে গেছেন আর সাধারণ মানুষের মধ্যে জাগ্রত করেছেন সুস্থ রাজনৈতিক পরিবেশের চেতনা।
কখনও কখনও শিল্পীকে ছাপিয়ে যায় তার শিল্পকর্ম। ইতিহাসের পাতায় স্রষ্টার চেয়ে তার সৃষ্টি বেশি গুরুত্ব পেলেই সার্থক হয় শিল্প। গ্র্যাফিটি এক্ষেত্রে বেশ উল্লেখযোগ্য উদাহরণ রেখে গেছে। শুধুমাত্র দেয়ালের কিছু আঁকিবুঁকি সমাজ ও রাজনীতিতে কিভাবে পরিবর্তন এনেছে তা রীতিমতো বিস্ময়কর। আমরা আজকে কিংবদন্তী বনে যাওয়া এমনই কিছু রাজনৈতিক গ্র্যাফিটি সম্পর্কে জানব।
মালয়েশিয়ার গণতন্ত্রের প্রতীক আরকার
মায়ানমারের ইয়াঙ্গুনের গ্র্যাফিটি শিল্পীরা স্বাধীনতার অধিকার সম্পর্কে বেশ সচেতন। প্রতিনিয়ত চলমান এই বিতর্কের বিরুদ্ধে সাহসী অবসান রাখেন আরকার কোয়াও। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার একটি মিউরাল তৈরি করেন। এই চিত্রকর্মটির একপাশে আমেরিকান এবং বার্মিজ পতাকার প্রতি বারাক ওবামার বিদ্রূপাত্মক হাসি দেখানো হয়। মায়ানমারের গণতন্ত্রের প্রতি উন্নত বিশ্বগুলোর অবস্থান বোঝাতে দুর্দান্ত ভূমিকা রাখে এই মিউরালটি। জনগণের মাঝে তীব্র সাড়া পড়ে যায় এটি নিয়ে। তবে একটি উন্নয়নশীল গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে নাগরিক অধিকার এবং আত্মপ্রকাশের ব্যাপারগুলো বাস্তবতা থেকে অনেকটাই দূরে অবস্থান করে। যে কারণে আরকারের এই মিউরালটি প্রকাশিত হওয়ার এক সপ্তাহের মধ্যে মায়ানমারে গ্র্যাফিটি শিল্প নিষিদ্ধ করে দেয়া হয়।
ইউক্রেনের স্বাধীনতা যুদ্ধের স্মারক গ্র্যাফিটি
ফরাসি শিল্পী শেঠ গ্লোবোপেনটারের একটি ভাস্কর্য স্বাধীনতা স্কয়ারের কাছাকাছি একটি শান্ত রাস্তার পাশের দেয়ালে সজ্জিত রয়েছে। স্বাধীনতার জন্য আন্দোলনকারীরা ২০১৩-১৪ সালের দীর্ঘ শীতের মাসগুলোতে এখানে জড়ো হত। তাদের এই প্রতিবাদের জের ধরে রাশিয়ান প্রেসিডেন্ট ভিক্টর ইয়ানুকোভিচকে বহিষ্কার করা হয় এবং ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে একটি যুদ্ধ শুরু হয়। এই ইতিহাসটি সংরক্ষণ করে রাখতেই ফ্রেঞ্চ শিল্পীর গ্র্যাফিটিটি ইউক্রেনের স্বাধীনতা স্কয়ারে স্থান পেয়েছে।
ফিলিস্তিনের লাইলার সমাজ পরিবর্তনকারী গ্র্যাফিটি
জর্দানের ইরবিদের ফিলিস্তিনি শরণার্থী শিবিরের গলিতে একটি কংক্রিট দেওয়ালে লায়লা আজজাউই দ্রুত কাজ করে, তার হাতের মধ্যে তিনটি স্প্রে-পেইন্ট বোতল খুব দ্রুত ঘোরাফেরা করছে। ২০ মিনিটের মধ্যে তিনি আরবি অক্ষরগুলোর দ্বারা অভিভূত চোখের একটি মেয়ের ঘোমটা আঁকিয়েছেন এবং তার পাশ দিয়ে একটি পালক শিলা অঙ্কিত করেছেন। তার গ্র্যাফিটি প্রায় সম্পূর্ণ হয়ে গেছে। ২০ বছর বয়সী এই সুপারগার্ল বলেন গ্র্যাফিটিই তার সুপারপাওয়ার। তিনি তার দেশের মানুষের জন্য একটি সঠিক বার্তা প্রদানের উদ্দেশ্যে বেছে নিয়েছেন এই মাধ্যমটিকে। পুরুষতান্ত্রিক সমাজের বিরুদ্ধে তার এই প্রতিবাদ বেশ সাড়া জাগিয়েছে পুরো ফিলিস্তিনব্যাপী।
ক্রিমিয়ার স্বাধীনতার প্রতীক “দ্য ড্রিমার”
ইউক্রেনীয় জিমন্যাস্টিকস হানা রিজাতডিনোভা যিনি মূলত ক্রিমিয়া বংশোদ্ভূত তবে বর্তমানে কিএভ হিসেবে পরিচিত তার একটি প্রতিকৃতি স্থান পায় গ্র্যাফিটি হিসেবে। রাশিয়া ক্রিমিয়ার পারস্য উপসাগরকে আক্রমনের কয়েক মাস পর আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এবং কয়েকজন স্থানীয় কর্তৃপক্ষ এর তীব্র নিন্দা করেছে, যার মধ্যে রয়েছেন রিজাতডিনোভাও। “ক্রিমিয়া রাশিয়া হতে পারে কীভাবে? আমাদের সিমফরপল স্কুল ট্রেন কিভাবে একটি রাশিয়ান পতাকার অধীনে থাকতে পারে? এ বিষয়ে আমি যথেষ্ট বিরক্ত”, এক সাক্ষাৎকারে তিনি এ কথা জানান। ফিন্টান ম্যাজি তার ছবিটি গ্র্যাফিটি হসেবে অঙ্কন করার সিদ্ধান্ত নেন যার শিরোনাম দেয়া হয় “দ্য ড্রিমার”।
বিপ্লব থেকে উদ্বুদ্ধ শিল্পী সাশা কোরবান
ছয় তলা বাড়িটির একপাশের পুরো দেয়াল জোড়া বাচ্চা একটি মেয়ের গ্র্যাফিটি। সাশা কোরবান এর স্রষ্টা, যিনি পূর্বে একটি কয়লা খনির শ্রমিক হিসাবে কাজ করেছেন, ড্যানিয়েটক যুদ্ধে পালিয়ে যান এবং পরবর্তীতে রাশিয়ান বিদ্রোহীদের ও ইউক্রেনীয় জাতীয় সেনাবাহিনীর মধ্যকার যুদ্ধে শহরে ধরা পড়েন। সেখান থেকে যুদ্ধ বিধ্বস্ত মানুষের মনে একটু শান্তির পরশ ছোঁয়াতে যুদ্ধের ভয়াবহতা ছেড়ে শান্তির বার্তা নিয়ে এই গ্র্যাফিটিটি আঁকেন তিনি।
তথ্যসূত্রঃ http://www.cosmopolitan.com,https://www.theguardian.com,https://dstarlip.wordpress.com,en.wikipedia.org,http://www.ranker.com/list