ছাত্রনং অধ্যয়নং তপঃ
ছোটবেলায় আমরা যারা প্রথম স্কুলে ভর্তি হয়েছিলাম, আমাদের অনেকের কানেই সর্বপ্রথম এই উপদেশবাণীটি এসেছিল। ছাত্রের প্রধান কাজ হচ্ছে পড়াশোনা করা। তবে, সাথে সাথে এটিও মনে রাখা জরুরী যে, পড়াশোনা করা ছাড়াও ছাত্রজীবনে আরো নানা ধরণের কাজ রয়েছে।
১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে এ দেশের ছাত্রসমাজ একটি বড় ভূমিকা রেখেছে। ভাষা আন্দোলন, স্বৈরাচারী পতনের আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ- এসব কিছুতেই ছাত্রসমাজ অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে। তার মানে দাঁড়াচ্ছে এই যে, পড়াশোনার পাশাপাশি দেশের প্রতি, সমাজের প্রতিও আপনার কিছু দায়দায়িত্ব রয়েছে। এই দায়িত্বগুলো যদি আপনি সুষ্ঠুভাবে পালন করেন, বিশ্বাস করুন বাংলাদেশে আর কোন ধরণের অরাজকতা কিংবা কোন ধরণের অন্যায় থাকবে না।
চলচ্চিত্রে অহরহই একটি কথা বলতে শোনা যায়। তা হচ্ছে,
I will show you the power of student
কখনো কি ভেবেছেন এই শক্তি বলতে আসলে কি বোঝাচ্ছে? পেশিশক্তি নাকি গায়ের জোরে কোন কিছু কেড়ে নেবার শক্তি? অবশ্যই না। আপনি মনে রাখবেন আপনি একজন ছাত্র। আপনি সমাজের একজন গুরুত্বপূর্ণ প্রতিনিধি। যা বলবেন, যা করবেন তা সমাজে এক ধরণের ইতিবাচক এবং নেতিবাচক ভূমিকা রাখবে। কিন্তু একজন ছাত্রের দায়িত্ব হচ্ছে নেতিবাচক কাজগুলো থেকে নিজেকে বিরত রাখা এবং যাতে করে দেশ ও দশের উপকারে আসে এমন সব কাজ করা।
হয়ত এখন আপনার মনে প্রশ্ন উঠতেই পারে, একজন ছাত্র হিসেবে আমার দায়িত্ব কি হতে পারে? এমন কোন ধরণের কাজ করব আমি যাতে করে সমাজের একটি বড় অংশের কাছে আমার বার্তা পৌছাবে?
একটা মজার কথা বলি। পরিবর্তনটা কিন্তু ছাত্রদের দিয়েই শুরু হয়। একজন ছাত্র ভবিষ্যতের শিক্ষক, রাজনীতিবিদ, চিকিৎসক, খেলোয়াড়, চিন্তাবিদ, প্রকৌশলী ইত্যাদি নানা পেশায় নিয়োজিত হতে পারে। আপনি এসব কিছু নিয়ে ভাবতে চাইছেন না? আপনি কি চাইছেন আপনার পেশা অন্য কিছু হোক? তাহলে ছাত্রজীবন থেকেই একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে যান। প্রমাণ করুন, পড়াশোনার পাশাপাশি আপনি যে কাজটি করতে যাচ্ছেন বা চাইছেন, সে কাজটিতে আপনি সেরা।
আসুন কিছু উদাহরণের দিকে আসা যাক এবার।
ইস্টনলাশ্যাপেল একজন ছাত্র ছিলেন। তিনি প্রথম রোবোটিক হাত তৈরি করেছিলেন মাত্র ১৪ বছর বয়সে। একদিন তিনি স্কুলের একটি বিজ্ঞান মেলায় গিয়ে দেখেন যে একটি মেয়ের হাত নেই। সে প্রোস্থেটিক হাত ব্যবহার করছে, যা শুধু খোলা ও বন্ধ করা যেত। এই হাতের দাম কত জানেন? প্রায় ৮০ হাজার ডলার!
চিন্তাটা ইস্টনকে অনেক ভাবায়। পৃথিবীতে এমন অজস্র মানুষ আছেন যাদের এত দাম দিয়ে এমন হাত কেনার সামর্থ্য নেই। তারা কি করবেন? ইস্টন শুরু করলেন ডিজাইন। এমন একটি হাতের যেটি কিনা ১০০০ ডলারের চাইতেও কম দাম হবে এবং মানুষের ক্রয়সীমার মধ্যে থাকবে। তাঁর কাজ এত নিখুঁত ও অসাধারণ ছিল যে কিছুদিনের মাঝে নাসার রবোটিক দলে যোগদান করার জন্য তাঁর ডাক আসে। এই ইস্টনও কিন্তু একজন ছাত্র।
তায়কোয়ান্দো ক্লাসে দূর্ঘটনাজনিত কারণে যশ গুপ্ত তাঁর চশমা ভেঙে ফেললেন। হঠাৎ করেই তিনি বুঝতে পারলেন যে তিনি তাঁর চশমার ওপর কতটা নির্ভরশীল ছিলেন। এবার বাড়ি ফিরে গুগলে একটি তথ্য দেখে তিনি বিস্ময়ে হতবাক হয়ে গেলেন। তা হচ্ছে, সমগ্র বিশ্বে প্রায় ১২ কোটি শিশু তাদের জন্য যথাযথ চশমা পায় না, যেটি তাদের দৃষ্টিশক্তির জন্য সহায়তা করবে। যশ শুরু করলেন চশমা সংগ্রহের কাজ। তাঁর প্রতিষ্ঠান “সাইট লার্নিং” এখন প্রতি বছরে লক্ষাধিক শিশুদের চশমা সরবরাহ করছে, যারা চশমা কেনার মত সামর্থ্য বহন করে না। যশ গুপ্ত কত বছর বয়সে এটি শুরু করেছিলেন জানেন? ১৫ বছর বয়সেই।
কবি সুকান্তর কবিতাটা মনে আছে আপনাদের? আঠারো বছর বয়স মাথা নোয়াবার নয়। ছাত্ররা পড়াশোনা করবে অবশ্যই। সাথে সাথে তাদের হতে হবে দূরদৃষ্টিসম্পন্ন, থাকতে হবে সমাজের নানা অত্যাচার ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবার মত সাহস।
আপনি অভিযোগ করতেই পারেন।
আমার সামর্থ্য নেই, আমার সুযোগ নেই, তাহলে আমি কেমনভাবে কি করতে পারি?
আপনাকেই বলছি। শুরুটা করুন, বাকিরা আপনার সাথে এসে জুটবে অবশ্যই। লিখুন, পড়ুন, কাজ করুন। নিজেকে গুটিয়ে রাখবেন না। কেবলমাত্র বইয়ের ফাঁকে নিজেকে গুটিয়ে রাখবেন না। দেশ আপনার থেকে অনেক কিছু আশা করে। চোখটা বন্ধ করে একটু ভাবুন তো! যা করছেন, যা বলছেন তা মানুষের আদৌ কোন উপকারে আসছে কি না? তাহলে কেন নিজের মূল্যবান সময়টুকু নষ্ট করছেন? সময় কি হয় নি নিজেকে নিয়ে ভাবার? কোন কাজটা ভালো পারেন, সেটি নিয়ে ভাবুন। চেষ্টা করুন সে কাজেই নিজেকে সবার চাইতে সেরা হিসেবে উপনীত করার।
বিজয় সুনিশ্চিত।
আজ এ পর্যন্তই। প্রিয়লেখার সাথেই থাকুন, ভালো থাকুন।