চিকিৎসা বিজ্ঞানের উত্তরোত্তর উন্নতির কারণে আজ আমাদের জীবনযাত্রার মান অনেক উন্নত হয়েছে। আজকাল বিজ্ঞানের অগ্রগতি এতটাই সুদূর প্রসারী যে হৃদপিণ্ড পর্যন্ত স্থানান্তর ও পুনঃপ্রতিস্থাপন সম্ভব হয়েছে। কিন্তু আজো আমরা ক্যান্সার নামক মরনব্যাধির নাম শুনলে আঁতকে উঠি। কেননা ক্যান্সারের চিকিৎসা আবিষ্কার হলেও সুনির্দিষ্ট ও সহজলভ্য সমাধান আজো আবিষ্কার সম্ভব হয়নি।
আমাদের দেহ কোষ থেকে সৃষ্টি। সুনির্দিষ্ট কোষ বিভাজনের কারণে আজ এই শরীর নিয়ে বেচে আছি আমরা। কিন্তু কখনও কোন কারণে যদি কোষগুলোর অস্বাভাবিক বিভাজন শুরু হয় তখন কি ঘটবে?তখন হয় টিউমার আর এই কোষ বিভাজনকে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব না হলে সেটা রূপ নেই মরনব্যাধিতে। ক্যান্সার মূলত অনিয়ন্ত্রিত কোষ বিভাজন থেকে সৃষ্টি হয়। মানবদেহের স্নায়ুতন্ত্রহীন অঙ্গ ছাড়া সব অংশে ক্যান্সার হতে পারে। ক্যানসার যে কোন বয়সে হতে পারে। শিশুরাও আক্রান্ত হতে পারে। চোখ, কিডনী, স্নায়ু, লিভার, ব্রেইন, রক্ত, হাড়, লাংস ও নারীর ব্রেস্ট ও জরায়ুতে ক্যান্সার হতে পারে।
ক্যান্সার হল “চিকিৎসা বিভ্রাট”। ক্ষতিকর রাসায়নিক উপাদান, হরমোন তারতম্য, তেজস্ক্রিয়তা, নেশা, ঘর্ষণজনিত আঘাত, বিকৃত যৌনাচার, অধিক চর্বিযুক্ত খাদ্য গ্রহণ, বায়ূ ও পানিদূষণ, জীবন যাপন পদ্ধতি, ভৌগলিক ও পরিবেশগত প্রভাব ইত্যাদি সাধারনত সর্বজীবনভাবে ক্যান্সার সৃষ্টির কারণ।
ক্যান্সারের একমাত্র প্রতিকারের উপায় হল ক্যান্সার কোষগুলোকে ধ্বংস করা যা অনেক ব্যয় বহুল এবং অনেক জটিল প্রক্রিয়া।তাই আমরা প্রতিকার নিয়ে না ভেবে প্রতিরোধ নিয়ে ভাবি। আমাদের দৈনন্দিন খাদ্য তালিকার কিছুটা পরিবর্তনই হতে পারে এই ঘাতকব্যাধিকে মোকাবিলা করার ফলপ্রসূ মাধ্যম।
যেসব খাদ্যতে ক্যান্সার প্রতিরোধক উপাদান রয়েছে আসুন তা দেখে নেই-
১. বেরি-
বেরি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ ফল হিসেবে বেশি পরিচিত। এর জুস স্বাস্থ্যের জন্য খুবই ভালো। এটি শরীরে সৃষ্ট ক্যান্সার কোষ নষ্ট করতে পারে। তাই আপনার খাদ্য তালিকায় অবশ্যই ব্ল্যাক বেরি, ব্লু বেরি অথবা স্ট্রবেরি রাখবেন।
২. হলুদ-
হলুদে শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আছে, যা কারকিউমিন নামে পরিচিত। এটি ক্যান্সার ছড়িয়ে পড়া রোধ করে।
৩. সবুজ চা-
সবুজ চা শুধুমাত্র আপনার শরীর তরতাজা রাখবে না, ওজন কমাতেও কাজ করে। নতুন এক গবেষণায় দেখা গেছে, সবুজ চা ক্যান্সার প্রতিরোধেও সাহায্য করে।
৪. রসুন-
এটি তীব্র কটুযুক্ত এক ধরনের খাদ্য। গবেষকরা প্রতিদিন খাদ্য তালিকায় রসুন রাখার পরামর্শ দিয়েছেন। কারণ এটি কান্সার বৃদ্ধি রোধ করে। খাদ্য তালিকায় রসুন রাখুন, ক্যান্সারকে বাই জানান।
৫. গাজর-
গাজর বিটা-ক্যারোটিনের মতো ক্যারটিনয়েড সমৃদ্ধ। যাতে প্রয়োজনীয় ভিটামিনও আছে। ক্যান্সার প্রতিরোধে যুদ্ধ করে।
৬.বাঁধাকপি-
বাঁধাকপিতে আছে ওষুধি উপকরণ ইন্ডোল-৩-কারবিনল। স্তন ক্যান্সারের জন্য দায়ী ইস্ট্রোজোনের বিরুদ্ধে এটি যুদ্ধ করে। হরমোনের ক্ষতিকর প্রভাবকে উপকারী উপকরণে পরিণত করে।
৭. ফুলকপি-
ফুলকপিতে আছে ক্যান্সারে প্রতিরোধের উপকরণ। ফুলকপিতে আছে সালফোফেন নামের যৌগ, যা অস্টিওআর্থ্রাইটিস কমাতে সাহায্য করে। গরুর দুধের চেয়েও প্রায় পাঁচগুণ বেশি ক্যালসিয়াম আছে ফুলকপিতে। এ ছাড়াও রয়েছে ২০০ গুণ বেশি আয়রন।
৮.মাশরুম-
ভিটামিন ‘বি’ ও আয়রনের প্রধান উৎস হচ্ছে মাশরুম। শুধু ভিটামিন আর আয়রন নয়, এটি ডায়াবেটিস ও টিউমার প্রতিরোধের মহাওষুধ। এতে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আছে, যা ক্যান্সারের সঙ্গে যুদ্ধ করে। কেমোথেরাপি ও রেডিয়েশন দেওয়ার পর শরীর পুনরুদ্ধারে মাশরুম সাহায্য করে।
৯. ব্রুকলি-
এর সেলফোরাফেন ক্যান্সারের সঙ্গে যুদ্ধ করে। এর যৌগ টিউমার প্রতিরোধও করে।
১০. মিষ্টি আলু-
এটি পলিফেনল অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ক্যাফেইন অ্যাসিড ক্যাফিওলাইনিক অ্যাসিডে সমৃদ্ধ। মিষ্টি আলু গলব্লাডার, কিডনি ও স্তন ক্যান্সারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে।
১১. জাম্বুরা-
জাম্বুরা ডায়াবেটিকসের সঙ্গে যুদ্ধ করে। ক্যান্সারের সঙ্গে যুদ্ধ করারও সবচেয়ে ভালো উৎস। জাম্বুরার ফ্ল্যাভোনয়েড ক্লোন ক্যান্সার প্রতিরোধ করে এবং ক্যান্সার সেলের উৎসও ধ্বংস করে।
১২. পেঁপে-
পেঁপে প্রচুর পরিমাণ বিটা ক্যারোটিন ও ল্যাইকোপেন সমৃদ্ধ। যেটা ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করে।
১৩. আঙ্গুর-
আঙ্গুরে রয়েছে প্রো-অ্যানথোসায়ানিডিনস। এ উপাদানটি ক্লোন, মূত্রথলি ও স্তন ক্যান্সারের সঙ্গে যুদ্ধ করার উপযোগী।
মরনব্যাধি আমাদের কারো কাম্য নয়। তাই প্রতিকার নিয়ে না ভেবে আমরা প্রতিরোধ করতে পারি খাদ্য তালিকায় হাতের কাছে পাওয়া কিছু খাদ্য সঠিকভাবে গ্রহণের মাধ্যমে।সচেতনতা বাড়াই, সুস্থ থাকি।