বছরের শুরুতেই ঘোষণা করা হয় ফুটবলের অন্যতম সম্মানজনক ও আকর্ষণীয় ব্যক্তিগত পুরষ্কার ব্যালন ডি’অর। ব্যক্তিগত পুরষ্কার পাওয়ার ব্যাপারটাকে লিওনেল মেসি আর ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো মিলে এমন ছেলেখেলার পর্যায়ে নিয়ে গেছেন, এই প্রজন্মের বাকি ফুটবলারদের চেয়ে চেয়ে দেখা ছাড়া আর তেমন কিছুই করার থাকে না। তবুও সকলের মধ্যে বিরাজ করে চাপা এক উত্তেজনা, কার হাতে উঠবে ব্যালন ডি’অর।
তবে এ বছরের ব্যালন ডি’অরের দৌড়ে কিছুটা হয়তো পিছিয়েই পরলেন বার্সেলোনা সুপারস্টার লিওনেল মেসি। ব্যালন ডি’অর প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান ফ্রান্স ফুটবল ম্যাগাজিন এ বছরের চ্যাম্পিয়ন লিগের সেরা একাদশ ঘোষণা করেছে কয়েকদিন আগে। আশ্চর্যজনক ভাবে হলেও সত্যি, সেই একাদশে জায়গা হয়নি মেসির!
একাদশের ফরোয়ার্ড লাইনে আছেন টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ গোলদাতা রোনালদো, জুভেন্টাসের পাওলো দিবালা ও মেসির বার্সা সতীর্থ নেইমার। রোনালদোর জায়গা নিয়ে কোন সংশয় নেই, কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে মেসির না থাকা নিয়ে। রোনালদোর পরে ২য় সর্বোচ্চ ১১ গোল নিয়ে তালিকায় ২য় স্থানটি কিন্তু মেসির দখলেই। এমনকি ফাইনালের আগে পর্যন্ত রোনালদোর চেয়েও এগিয়ে ছিলেন মেসি। এছাড়া গ্রুপ পর্বে সর্বোচ্চ ১০ গোলও ছিল মেসির দখলেই। এছাড়া ১১ গোলের পাশাপাশি ২ টি অ্যাসিস্টও আছে মেসির।কিন্তু জুভেন্টাসের তরুণ তারকা ও মেসির আর্জেন্টিনা সতীর্থ পাউলো দিবালা মেসিকে ছাপিয়ে কিভাবে একাদশে জায়গা করে নিলেন, সেটা নিয়ে কিছুটা প্রশ্ন রয়েছে। টুর্নামেন্টে ৪ গোল করেছেন দিবালা, অ্যাসিস্ট নেই একটিও। ৪ গোল করা একজন খেলোয়াড় কিভাবে ১১ গোল করা একজন খেলোয়াড়কে ছাপিয়ে একাদশে জায়গা পান, সেটা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অনেক ভক্ত সমর্থক।
দিবালার পক্ষে সবচেয়ে শক্তিশালী যে যুক্তি, সেটিই আবার মেসির বিপক্ষে সবচেয়ে শক্তিশালী যুক্তি। কোয়ার্টার ফাইনালের ১ম লেগে তুরিনে অনেকটা দিবালার একক নৈপুণ্যেই মেসির বার্সাকে উড়িয়ে দিয়েছিল জুভেন্টাস। শেষ পর্যন্ত ওই ১ম লেগের ৩-০ গোলের জয়ের ব্যবধান ধরে রেখেই সেমিফাইনালে উঠেছিল জুভেন্টাস।
মেসির বিপক্ষেও হয়তো গেছে ঠিক এই পয়েন্টটিই। গ্রুপ পর্বে ১০ গোল করলেও নকআউট পর্বে অনেকটাই নিষ্প্রভ ছিলেন মেসি। রাউন্ড অফ সিক্সটিনের ২ লেগ ও কোয়ার্টার ফাইনালের ২ লেগ মিলিয়ে ৪ ম্যাচে মোটে ১ গোল করতে পেরেছেন মেসি, পিএসজির বিপক্ষে ২য় লেগে পেনাল্টি থেকে। অনেকের মতে বার্সার কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে বিদায়ের নেপথ্যের একটা অন্যতম বড় কারণও মেসির নিষ্প্রভ থাকা।
মেসি নিষ্প্রভ ছিলেন এটা যেমন সত্যি, আবার এটাও তেমন সত্যি, গোটা দলের ব্যর্থতার দায় একা মেসির ঘাড়ে চাপানোটাও একপ্রকার অন্যায়। কোয়ার্টার ফাইনালের দুই লেগে শুধু মেসি একা নন, পুরো বার্সেলোনা দলই ফ্লপ ছিল। নকআউট স্টেজে গোল করতে পারেননি বলে মেসির গ্রুপ পর্বের ১০ গোলের মাহাত্ম্য নিশ্চয়ই কমে যাচ্ছে না।
জুভেন্টাসের ফাইনালে ওঠাটা দিবালার পক্ষে গেছে নিশ্চিতভাবেই। এছাড়া একাদশে আরও জায়গা করে নিয়েছেন জুভেন্টাসের বর্ষীয়ান গোলকিপার বুফন, বনুচ্চি, আলভেজ; রিয়াল মাদ্রিদের মার্সেলো, রামোস, মদ্রিচ এবং মোনাকোর লেমার ও ফ্যাবিনহো।
২০১৮ এর জানুয়ারিতে ঘোষণা করা হবে পরবর্তী ব্যালন ডি’অর। ব্যালন ডি’অর প্রদানকারী ফ্রান্স ফুটবল ম্যাগাজিনের একাদশেই যেখানে জায়গা পাননি মেসি, সেখানে তার ব্যালন ডি’অর জয়ের সম্ভাবনা কতটুকু? অপরদিকে রোনালদোর অসাধারণ নৈপুণ্যে দ্বাদশ চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জিতেছে রিয়াল, সাথে জাতীয় দলের হয়েও প্রতিযোগিতা আছে রোনালদোর। মেসির কিন্তু সেরকম কোন সুযোগ নেই এই বছর। ব্যালন ডি’অরের লড়াইয়ে কি তাহলে পিছিয়েই পরলেন লিওনেল মেসি?