বর্তমানে চিকনগুনিয়া আতঙ্কের মত ছড়িয়ে পড়েছে মানুষের মধ্যে কিন্তু অনেকেরই খুব একটা ভালো ধারণা নেই রোগটি সম্পর্কে। চিকনগুনিয়া এক ধরনের ভাইরাস জ্বর। মশার মাধ্যমে দ্রুত ছড়াচ্ছে এই রোগ। জানা যায়, ২০০৫ সালে ভারতে চিকনগুনিয়া ভয়াবহ রূপ নিলে আইইডিসিআর (জাতীয় রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইন্সটিটিউট) বাংলাদেশে জরিপ চালায়। তখন এ রোগে আক্রান্ত কোনও বাংলাদেশি পাওয়া যায়নি। পরে ২০০৮ সালে রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জে প্রথম চিকনগুনিয়ায় আক্রান্ত রোগী পাওয়া গিয়েছিল। মূলত ২০০৮ সাল থেকে রোগটি বাংলাদেশে আক্রমণ করে কিন্তু অতি সম্প্রতি বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় বেশ ব্যাপক ভাবে চিকনগুনিয়ার ব্যাপকতা দেখা যাচ্ছে। এ রোগের প্রার্দুভাব শুধু বাংলাদেশ নয় , দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায় বেশ দেখা যাচ্ছে।
চিকনগুনিয়া কি?
চিকনগুনিয়া ভাইরাস সংক্রামিত রোগ। স্ত্রী এডিস মশা এই রোগের বাহক। এডিস মশার কামড়ে মানবদেহে এই রোগের ভাইরাস প্রবেশ করে । ইহা মানব দেহ থেকে মশা এবং মশা থেকে মানব দেহে ছড়িয়ে থাকে। অর্থাৎ আক্রান্ত ব্যক্তিকে যদি সুস্থ মশা কামড় দেয় তাহলে সেই মশার দেহে ভাইরাস চলে যায় এবং সেই পরবর্তীতে সুস্থ মানুষকে কামড় দিলে সেই ব্যাক্তিও ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে যায়।
এই ভাইরাসটি রক্তের লোহিত কনিকার ফাইব্রোব্লাস্ট মেকরোফেজ নামক রক্ত কনিকাকে আক্রান্ত করে থাকে।
লক্ষণ-
১. প্রাথমিক অবস্থায় রোগী জ্বরে আক্রান্ত হয়ে থাকে, জ্বর যা দুই থেকে পাঁচ দিন পর্যন্ত স্থায়ী হয়ে থাকে। শরীরের তাপমাত্রা ১০৪-১০৫ ডিগ্রি থাকে।
২. জ্বরের পরে রোগী শরীরের বিভিন্ন গিটে ব্যথায় আক্রান্ত হয়। গিটের ব্যথা সাধারণত হাত এবং পায়ের গিটকে আক্রান্ত করে থাকে। এ ধরনের গিটের ব্যথা সাধারণত কয়েক সপ্তাহ থেকে কযেক মাস পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে ।
৩. সারা শরীরে রেশ (লাল দাগ ও ফোলা) দেখা দেয় ।
৪. এর সাথে বমি ভাব শরীর ব্যথা ও প্রচন্ড দুর্বলতা অনূভুত হয় ।
৫. রক্তচাপ কমে যেতে পারে ।
৬. খাওয়ার রুচি কমে যায় থাকে না বললেও চলে ।
*সাধারণভাবে মশার কামরে দুই থেকে পাঁচ দিনের মধ্যে এ রোগের লক্ষণ দেখা দিতে শুরু করে ।
খাদ্যাভাস-
জ্বর হলে সাধারণত শরীরের বিপাক ক্রিয়া বৃদ্ধি পায় বলে অতিরিক্ত ক্যালরি প্রয়োজন হয়। এজন্য দৈনিক খাবারের পাশাপাশি কিছু অধিক ক্যালরি সম্পন্ন খাদ্য খাওয়া প্রয়োজন হয়।যেমন-
প্রতিদিন প্রচুর তরল পান করতে হয়।দিনে কমপক্ষে আড়াই লিটার পানি সাথে খনিজ উপাদানসমৃদ্ধ তরল(ডাবের পানি, ওরস্যালাইন, লেবু-লবন শরবত, ফলের রস)পান করতে হবে।
খাবারের তালিকায় পর্যাপ্ত শর্করা (ভাত,জাউভাত,ওটমিল ইত্যাদি)থাকতে হবে।
তেল-মশলাযুক্ত খাবার, ফাস্ট ফুড বাজারের কোমল পানীয় না খাওয়াই ভাল।
প্রোটিন জাতীয় খাবার( দুধ, ডিম, স্যুপ) খাওয়া উচিত।এসব খাবার দূর্বলতা হ্রাস করতে সাহায্য করবে।
প্রতিরোধ-
যেহেতু চিকন গুনিয়া মশা বাহিত রোগ তাই এডিস মশা নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে এ রোগ প্রতিরোধ করা যেতে পারে।
এছাড়াও আক্রান্ত ব্যক্তি সবসময় মশারীর ভেতরে থাকা উচিত তাহলে তার থেকে কোন মশার দেহে ভাইরাস ছড়াতে পারবে না।
অস্থিসন্ধির ব্যথার জন্য ঠাণ্ডা পানির সেক ও হালকা ব্যায়াম উপকারী।
রোগীকে অবশ্যই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে এবং চিকিৎসকের পরামর্শ অনুসারে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। ব্যক্তিগত সচেতনতাই চিকনগুনিয়া ভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধের প্রধান উপায়। আমাদের দেশে বিভিন্ন রোগের প্রার্দূভাব যে ভাবে প্রভাব বিস্তার করছে তাতে এখনই প্রয়োজনীয় ব্যবস্হা নেওয়া প্রয়োজন।
সচেতন হন সুস্থ থাকুন।