লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে আমরা পেয়েছি এই প্রাণের বাংলাদেশকে। শুরুটা একদমই সহজ ছিল না। দীর্ঘ নয় মাস যুদ্ধের পর স্বাধীন হয়েছে এই দেশ। হাঁটি হাঁটি পা পা করে বাংলাদেশ এগিয়ে গিয়েছে অনেক দূর। এই তো কিছুদিন আগেই ক্রিকেট র্যাংকিংয়ে বাংলাদেশ ৬-এ উত্তীর্ণ হলো, বাংলাদেশের তৈরি কৃত্রিম স্যাটেলাইট “অন্বেষা” প্রদক্ষিণ করবে পৃথিবীর সৌরপথ।
প্রাপ্তি আমাদের অনেক, তবে হারানোর কষ্টটাও আমাদের ভুলে গেলে চলবে না। ধর্মীয় উগ্রবাদ, সন্ত্রাসবাদ, সংখ্যালঘুদের ওপর আক্রমণ ইত্যাদি নানা ধরণের সমস্যা আমাদের দেশে মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে, উঠছে। তবে আশার কথা কি জানেন? এতকিছুর পরও আমরা হাল ছেড়ে দিই না। আশা ধরে রাখি, বিশ্বাস করি যে আশাতেই একদিন আমরা বসত করব।
আমাদের দেশ রত্নগর্ভার ভূমি। গর্ব করবার মত রয়েছে আমাদের অনেক অর্জন, রয়েছে নানা গাঁথা। তাদের অনেকের কথাই হয়ত আপনারা জানেন, আবার অনেকের কথাই আপনাদের রয়ে গিয়েছে অন্তরালে। কেউ কেউ ইতোমধ্যেই দেশ বিদেশে সুনাম অর্জন করেছেন নানা ক্ষেত্রে সাফল্যের ছাপ রেখে, আবার কেউ কেউ উদ্যোক্তা হিসেবে দেশের মুখ করছেন উজ্জ্বল। আসুন, আজ জেনে নেয়া যাক তাদের সম্পর্কে কিছু কথাঃ
১) সালমান খানঃ
ইনি বলিউডের সালমান খান নন। বাংলাদেশের সালমান খান, খান একাডেমীর প্রতিষ্ঠাতা সালমান খান। প্রশ্ন করতে পারেন খান একাডেমী আসলে কি? এটি একটি শিক্ষামূলক ভিডিও প্ল্যাটফর্ম, যেখানে একজন চাইলেই তার ইচ্ছেমত বিষয়ভিত্তিক যে কোন বিষয়ের ওপর জেনে নিতে পারবে। সালমান ২০০৬ সালে প্রথম এই প্ল্যাটফর্মটি প্রতিষ্ঠা করেন। খান একাডেমীর মূল কার্যালয় ক্যালিফোর্নিয়াতে। প্রথমে শুধুমাত্র ইংরেজী ভাষাতেই ভিডিওগুলো প্রকাশ করা হতো কিন্তু বর্তমানে স্প্যানিশ, পর্তুগীজ, টার্কিশ, ফ্রেঞ্চ, হিন্দী ও বাংলা ভাষাতেও ভিডিওগুলো তৈরি করা হয়ে থাকে।চাইলে আপনিও ঘুরে আসতে পারেন খান একাডেমি থেকে ।
২) নাফিস বিন জাফরঃ
চলচ্চিত্র দেখছেন। হঠাৎ করেই আপনার মনে হতে থাকে যে পর্দায় যে জলাধার দেখানো হচ্ছে, কিংবা এইমাত্র টুপ করে যে বৃষ্টির ফোঁটাটি পড়ল, তা একেবারে বাস্তব। এই পদ্ধতিকে বলা হয় ফ্লুইড সিমুলেশন সিস্টেম। সিমুলেশন সিস্টেম আসলে কি, তা নিয়ে আমাদের সকলেরই কম বেশি জানা রয়েছে। তবে হঠাৎ করে ফ্লুইড সিমুলেশন নিয়ে এত কথা হচ্ছে কেন?
কারণ, ২০০৭ সালে মুক্তি পাওয়া বিশ্বখ্যাত পাইরেটস অব দ্য ক্যারিবিয়ান সিরিজের এট ওয়ার্ল্ডস এন্ড নামক কিস্তিটিতে এই ফ্লুইড সিমুলেশন সিস্টেমের উন্নয়ন ঘটানোর মাধ্যমে পেয়ে যান একেবারে অস্কার পুরস্কার! প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে নাফিসের এই সাফল্য আমাদের জন্য নিয়ে আসে অসাধারণ এক অর্জন।
৩) শাহাবুদ্দিন আহমেদঃ
কনটেম্পোরারি চিত্রকর্ম নিয়ে যাদের আগ্রহ কিংবা জানাশোনা আছে, তাদের কাছে শাহাবুদ্দিন আহমেদ একটি পরিচিত নাম। পৃথিবীর নানা প্রান্তে রয়েছে তার আঁকা ছবির কদর ও সুনাম। ১৯৯২ সালে তাকে তৎকালীন পৃথিবীর ৫০ জন কনটেম্পোরারি আর্টের গুরুদের মাঝে একজন হিসেবে স্বীকৃতি দান করা হয়। বার্সেলোনায় অনুষ্ঠিত একটি উৎসবে তাকে এই সম্মাননায় ভূষিত করা হয়।
মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি একজন প্লাটুন কমান্ডার ছিলেন এবং হানাদারদের বর্বরতা তিনি খুব কাছ থেকে দেখেছেন। তাই তার আঁকা ছবিতে ফুটে উঠেছে গণহত্যার নৃশংস ও করুণ দৃশ্য। বর্তমানে তিনি প্যারিসে বসবাস করছেন।
৪) তারেক মাসুদঃ
বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের সাথে যাদের পরিচয় আছে, তাদের কাছে তারেক মাসুদ একটি স্মরণীয় নাম। ২০০২ সালে তার ‘মাটির ময়না’ নামক চলচ্চিত্রের জন্য পান ফিপরেচি পুরস্কার এবং একাডেমি অ্যাওয়ার্ড ফর বেস্ট ফরেন ল্যাঙ্গুয়েজ ফিল্ম হিসেবে এটি বাংলাদেশের প্রথম চলচ্চিত্র হিসেবে বিবেচিত হয়। এছাড়াও তার অন্তর্যাত্রা ও রানওয়ে- নামক ছবি দুটি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
২০১১ সালের ১৩ আগস্ট তিনি এক মর্মান্তিক সড়ক দূর্ঘটনায় মৃত্যুবরণ করেন।
৫) জাভেদ করিমঃ
ধরুন, কোন একটি বিষয় সম্পর্কে আপনি জানতে চাচ্ছেন। অবধারিতভাবেই এসে যায় গুগল কিংবা উইকিপিডিয়ার কথা। আবার কেউ কেউ নানা ধরণের গান, ডকুমেন্টারি, আস্ত একটি ছবিই দেখে ফেলেন ইউটিউব নামক বিশাল একটি ভিডিও প্ল্যাটফর্মে। আজকাল “ইউটিউবার” টার্মটি অনেক ব্যবহার করা হয় কারণ, ইউটিউবে ভিডিও পোস্ট করে কিংবা নানা ভিডিও তৈরি করে অনেকেই আয় করছেন অর্থ।
তবে আমাদের আগ্রহ সেদিকে নয়। আপনার জানা আছে কি, ইউটিউবের সহ-প্রতিষ্ঠাতা একজন বাঙালি বংশোদ্ভূত?
ঠিক তাই। জাভেদ করিম নামক ৩৭ বছরের এই তরুণ ইউটিউবের সহপ্রতিষ্ঠাতা। ১৯৭৯ সালে পূর্ব জার্মানীতে জন্ম জাভেদ করিমের বাবা একজন বাঙালি ও মা একজন জার্মান। আজ থেকে প্রায় ১২ বছর আগে ইউটিউবে প্রথম ভিডিওটি আপলোড করেছিলেন জাভেদ করিম। ‘Me at the zoo’ নামক ১৮ সেকেন্ডের এই ভিডিওতে বর্তমান লাইক সংখ্যা প্রায় ৩৬ মিলিয়ন ।
চাইলেই সার্চ করে দেখে আসতে পারেন ইউটিউবের আপলোডকৃত প্রথম ভিডিওটি, যা কিনা একজন বাঙ্গালির !
এমনই আরও হাজারো বাঙালী প্রতিভা , আলো ছড়াচ্ছে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে । এমনই আরও প্রতিভাবান বাঙালীদের নিয়ে আমরা ফিরে আসবো নতুন কোন আয়োজন নিয়ে আপনাদেরই মাঝে। ততদিন প্রিয় লেখার সাথেই থাকুন।