ফেসবুক ব্যবহার করেনা এমন মানুষ আজকাল খুঁজে পাওয়াটাই কঠিন। তাছাড়া মানুষ আজকাল ফেসবুককে এমন ভাবে নিজের জীবনের সাথে জড়িয়ে ফেলেছে যার কারণে ব্যক্তিগত জীবনে দেখা দেয় নানা সমস্যা। তাই ফেসবুকে সুখী হতে গেলে নেতিবাচক মানসিকতার বন্ধুদের পোস্ট অনুসরণ করা বন্ধ করতে হবে।
ফেসবুক ব্যবহার নিয়ে আছে নানা অভিযোগ। এর সাথে নাকি অনেক ব্যবহারকারীর বিষণ্ণ, নিঃসঙ্গ, হতাশ হওয়ার সম্পর্ক রয়েছে। অনেকেই ফেসবুক ব্যবহার করাকে শুধু সময়ের অপচয় বলে মনে করেন। কিন্তু এর বিপরীত চিত্রও দেখা যায়। ফেসবুকের যথাযথ ব্যবহার আপনাকে সুখী করে তুলতে পারে। মনোবিদ সুজানা ফ্লোরেসর বলেছেন কিছু জরুরি বিষয় যার মাধ্যমে ফেসবুক ব্যবহার করে মানুষ সুখী হতে পারবে। চলুন তাহলে জেনে নেই ।
নেতিবাচক বন্ধুদের সরিয়ে ফেলুন
নিজের জীবনে ভাল থাকার কৌশল হচ্ছে ইতিবাচক চিন্তা করা। যারা বাস্তব জীবনে ইতিবাচক হন, তারা সামাজিক যোগাযোগের ওয়েবসাইটেও সেই মানসিকতা থেকে পোস্ট দেন। বন্ধুদের ইতিবাচক পোস্ট আপনার মনকে প্রফুল্ল রাখবে। মনোবিজ্ঞানীরা বলেছেন ইতিবাচক মানসিকতার বন্ধুদের ফেসবুকে রাখুন আর নেতিবাচিক বন্ধুদের পোস্টগুলো লুকিয়ে (হাইড করে) রাখুন। ফেসবুকে নিউজ ফিড থেকে যাতে বন্ধুদের নেতিবাচক স্ট্যাটাস দেখতে না হয়, সে জন্য তাদের অনুসরণ করা থেকে বিরত থাকুন। নেতিবাচক মানুষদের একেবারেই বন্ধুর তালিকা থেকে না সরিয়ে ফেলার পরিবর্তে তাদের আপডেটগুলো বরং কম দেখুন।
অন্যকে খুশি করুন
কাউকে শুধু মেসেঞ্জারে শুভেচ্ছা জানানো কিংবা লুকিয়ে কোন প্রশংসা বাক্য বলার চেয়ে প্রকাশ্যে তা করতে পারলে অন্যকে খুশি করা হয়, তেমনি নিজেরও ভাল লাগে। মনোবিদ সুজানা বলেন, প্রকাশ্যে কারও সম্পর্কে ভাল বললে তার মূল্য পাওয়া যায়। কেউ কেউ হয়তো ভাললাগার কথা প্রকাশ্যে বলতে বিরক্ত হয় কিন্তু অধিকাংশের বেলায় এর উল্টোটাই ঘটে। ফেসবুকে যাই শেয়ার করুন না কেন তাতে যেন সুন্দর বার্তা থাকে, সেটি খেয়াল রাখার পরামর্শ দেন ডাঃ সুজানা ফ্লোরেস।
জীবনঘনিষ্ঠ বিষয় পোস্ট করুন
মনোবিদ সুজানা বলেন, ফেসবুকে ব্যক্তিগত বিষয় পোস্ট করতে লজ্জা পাওয়ার কোনো কারণ নেই। ব্যক্তিগত অর্জন ফেসবুকে শেয়ার করলে আপনার ভাল লাগবে এবং তা থেকে বন্ধুদের ইতিবাচক প্রতিক্রিয়াও জানতে পারবেন। আপনার ফেসবুক নেটওয়ার্কে অন্তরঙ্গ বন্ধুদের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখার পাশাপাশি আপনার শুভাকাঙ্ক্ষী অন্য বন্ধুদের সঙ্গেও শেয়ার করুন। তবে খেয়াল রাখবেন আপনার পোস্টে যেন অন্যরা বিরক্ত না হয়। ফেসবুকে কোনো বিষয় নিয়ে পোস্ট করার পর কী ধরনের প্রতিক্রিয়া এসেছে, সেটা দেখার জন্য যদি বারবার ফেসবুকে ঢুকতে হয়, তবে আপনার ফেসবুকে আসক্তি পেয়ে বসতে পারে। আপনি যদি অন্তত ৪৮ ঘণ্টা ফেসবুক ছাড়া কাটাতে পারেন, তবে আপনি ফেসবুক আসক্তদের মধ্যে পড়বেন না।
নিজেকে নিয়ে হাসুন
ফেসবুক নিয়ে একটি বই লিখেছেন মনোবিদ সুজানা ফ্লোরেস। এ বইটির একটি অধ্যায় হচ্ছে “এম আই মাই প্রোফাইল পিক?” এই অধ্যায়ে তিনি বলেছেন ফেসবুক ব্যবহারকারীদের প্রোফাইলে দেয়া ছবিটি সুন্দর হওয়া দরকার। তবে সামাজিক যোগাযোগের সাইট নিয়ে মেতে থাকার দরকার নেই। বাস্তবজীবনে বন্ধুরা আপনাকে যেভাবে দেখে অভ্যস্ত ফেসবুকেও সেভাবেই থাকা উচিত। আপনি যদি হাস্যকর কিছু করে থাকেন, ফেসবুকে তা পোস্ট করতে পারেন। এই মনোবিদের মতে, ফেসবুকে সব ধরনের পোস্ট দেয়ার কোনো দরকার নেই। তার পরিবর্তে সত্যিকার ও মজার পোস্ট দিন।
পছন্দের গ্রুপে যোগ দিন
আপনার ফেসবুকে যেমন নির্বাচিত বন্ধু থাকে, তেমনি এই সাইটটি থেকে পছন্দ অনুযায়ী গ্রুপে যোগ দিয়ে নতুন বন্ধু বানাতে পারেন। আপনার পছন্দসই গ্রুপ না পেলে নিজেই একটি গ্রুপ তৈরি করে নিতে পারেন। মজার এই গ্রুপে মজার পোস্ট দিয়ে বন্ধুরা আলাপ আলোচনা করতে পারেন। নানা ধরনের মজার পোস্টের কারণে মন ভাল হয়ে যেতে পারে।
পুরনো অ্যালবামগুলো দেখুন
ফেসবুক ব্যবহারকারীদের বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ হল- এখানে শুধু সুখী মুহূর্তগুলোর ছবিই পোস্ট করেন সবাই। গবেষকেরা দাবি করেন, আপনার পুরনো অ্যালবামগুলোর ছবি দেখলে মন ভাল হয় এবং মন ভাল করার থেরাপি হিসেবে কাজ করে।
দিনশেষে ফেসবুককে আপনি যেভাবে বানাবেন, ফেসবুক সেভাবেই দাঁড়াবে। আপনি যদি আপনার জীবনকে আরও উন্নত করতে চান, অন্যদের সাহায্য করতে চান, তবে ফেসবুকে পরোক্ষভাবে বিনোদন ও সংযোগ স্থাপনের কাজ করা যাবে। আপনার উদ্দেশ্য সাধনের একটি মাধ্যম হিসেবেই ফেসবুক ব্যবহার করতে পারেন।
যে কারণে আপনার ফেসবুক অ্যাকাউন্ট বন্ধ হতে পারে
One comment
Pingback: যে কারণে আপনার ফেসবুক অ্যাকাউন্ট বন্ধ হতে পারে