রানী মুখার্জি এমন একজন অভিনেত্রী, যিনি অভিনয়ের মাধ্যমে লাখো ভক্তের হৃদয় জয় করেছেন কয়েক দশক ধরে। সাথিয়া চলচ্চিত্রের একজন অল্পবয়েসী ডাক্তারের কথাই ধরুন কিংবা বান্টি অউর বাবলিতে চোরের চরিত্রে, আবার ব্ল্যাক চলচ্চিত্রে নির্বাক এক কিশোরির ভূমিকায় অভিনয় করে জিতে নিয়েছেন মানুষের মন। কিছুদিন আগেই বলিউডে মুক্তি পেয়েছে তার ছবি ‘হিচকি’। ট্যুরেট সিনড্রোমে আক্রান্ত এক শিক্ষিকা কীভাবে প্রতিকূলতার মধ্য দিয়েও জয় করে নেন ছাত্রছাত্রীদের মন কিংবা প্রমাণ করেন সকলের সামনে নিজের যোগ্যতা, সেটিই দেখানো হয়েছে এই ছবির মাধ্যমে। ফিল্মফেয়ারকে দেয়া মিষ্টি হাসির অধিকারী এই অভিনেত্রীর সাক্ষাৎকারের কিছু অংশই তুলে ধরা হলো আজকের আয়োজনে।
বক্স অফিসে ‘হিচকি’র সাফল্যে নিশ্চয়ই আপনি খুব খুশি-
হিচকির আগে মুক্তি পাওয়া মারদানি ছবিটিও বেশ ইতিবাচক সাফল্য পেয়েছিল। তবে হিচকির কথা আলাদা। ব্ল্যাক ছবিতে অভিনয় করার পর দর্শক আমাকে যেভাবে ভূয়সী প্রশংসা করেছিলেন, এই ছবির জন্যও ঠিক তেমনটাই করছেন। আমার মেয়ে আদিরার জন্মের পর সবচেয়ে বেশি খুশি হয়েছিলাম। সে আনন্দের সাথে কোনোকিছুরই তুলনা করা যায়না। তবে হিচকির সাফল্য যতটা না আমাকে খুশি করেছে, তারচেয়ে বেশি করেছে নিশ্চিন্ত। এই ধরনের ছবি দর্শকরা কীভাবে নেবেন, তা নিয়ে খুব চিন্তায় ছিলাম।
নিশ্চিন্ত হয়েছেন বললেন। তারমানে মুক্তির আগে বেশ চাপে ছিলেন?
চাপে ছিলাম, তা বলব না। এমন একটা ছবি আমরা তৈরি করেছি, যেখানে একটি গল্প বলতে চেয়েছি। চেয়েছিলাম সবাই গল্পটিকে গ্রহণ করুক, এর বার্তাটি সবার মাঝে একটি ইতিবাচকতা পৌঁছে দিক। সেটা পেরেছি। ছেলে বুড়ো, শিক্ষার্থী, শিক্ষক সবার মাঝেই ছবিটির বার্তা পৌঁছে দিতে পেরেছি আমরা। এখানেই হিচকি টিমের সাফল্য।
হিচকি দেখবার পর আদিত্য চোপড়ার অনুভূতি কেমন ছিল?
আদি প্রচণ্ড খুশি। সে নিশ্চিত ছিল যে এই ছবিটি সব দর্শকের মন জয় করে নেবে। ছবিটি দেখবার পর ওর মাঝে একটা কনফিডেন্স চলে এসেছিল। এমন কনফিডেন্স ওর মাঝে আশা করা খুব দুর্লভ (হাসি)।
হিচকিতে অভিনয় করার পর কি মনে হয়েছে যে এখানে ব্ল্যাককে আপনি টপকে গিয়েছেন?
না। এমনটি কখনও মনে হয়নি। ব্ল্যাক আমার জীবনের অন্যতম সেরা একটি ছবি। জীবন কী, জীবনবোধ কী, কীভাবে জীবনের প্রতিকূলতাকে মোকাবেলা করতে হয়, তা আমাকে শিখিয়েছে ব্ল্যাক। মূক বধির এই চরিত্রটিতে নিজেকে রুপায়ন করা আমার জীবনের সঅন্যতম একটি চ্যালেঞ্জ ছিল। আমি পেরেছিও সেটা বোধহয়। ব্ল্যাকের অভিজ্ঞতাকে টপকে যেতে পারে, এমন অভিনয় আমি এখনও করিনি। করতে পারব বলেও মনে হয়না।
কেউ যখন বলছে ব্ল্যাকের চাইতে হিচকির রুপায়ন সেরা ছিল, কেমন বোধ করেছিলেন?
কেউ ইতিবাচক কিছু বললেই আমার ভালো লাগে। আমাকে ন্যায়না মাথুর চরিত্রে ভালো লাগছে নাকি মূক বধির একটি চরিত্রে বেশি ভালো লেগেছে, সেটি খুব বেশি গুরুত্বপূর্ণ নয়। আমি যে চরিত্রটিতে অভিনয় করছি, সেটা দর্শক পছন্দ করছেন। করছেন বলেই তারা ভালো ভালো কথা বলছেন। এটিই একজন অভিনেত্রী হিসেবে আমার সবচেয়ে বড় পাওয়া।
বক্স অফিসের সাফল্য ছাড়া কোন জিনিসটি আপনাকে আনন্দ দেয়?
অবশ্যই আমার মেয়ে আদিরার সঙ্গ। একজন মায়ের কাছে এরচেয়ে বড় কিছু হতেই পারেনা। এমনকি বক্স অফিসের সাফল্যও নিয়েও আমি খুব বেশি চিন্তিত নই।
আপনি বলেছেন হিচকি ছবিটি বিশেষ করে শিক্ষকদের জন্য। তারা কেউ ফোন করে অভিনন্দন কিংবা মতামত জানিয়েছিলেন?
হিচকি ছবিটি পুরো বিশ্বের শিক্ষক সম্প্রদায়ের জন্য একটি বার্তা। হ্যা, আমার শিক্ষকরা ফোন করেছিলেন। কাঁদতে কাঁদতে বলছিলেন যে তারা আমায় নিয়ে কতটা গর্বিত। এমনকি অনেকে বলেছেন যে এই ছবিটি থেকে তারা অনেক কিছু শিখতে পেরেছেন, জানতে পেরেছেন। শিক্ষার্থীদের সাথে নিজেদের আচরণ বদলে ফেলবারও প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। ন্যায়না মাথুর শিক্ষকদের জন্য একটি রোল মডেল হয়ে দাঁড়িয়েছে এখন।
মাসালা কিংবা রোমান্টিক ঘরানার ছবিতে কাজ করছেন না ইদানীং। আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন?
না, আগ্রহ হারাইনি। এমন কোনো ছবি আসলে অবশ্যই আমি করব। তবে ইদানীং যেসব ছবির অফার আসে এমন, সেখানে নিজেকে মেলাতে পারিনা। চরিত্রের সাথে নিজেকে মেশাতে পারিনা। তবে এমন কোনো ছবি যদি আসে যেখানে শতভাগ নিজেকে উজাড় করে দিতে পারব, আমি অবশ্যই মাসালা ছবিতে অভিনয় করবার জন্য মুখিয়ে আছি।
হিচকির কোন বিষয়টি নিয়ে সবচেয়ে গর্ববোধ করেন?
হিচকি এমন একটা ছবি যেখানে দর্শক নিজেদের একাত্ম করতে পেরেছে। কাঁদার জায়গায় কেঁদেছে, হাসির জায়গায় হেসেছে, সঠিক বার্তাটি যেখানে নেবার কথা ছিল, তা নিতে পেরেছে। হিচকি সবার মাঝে একটা আলোড়ন এনেছে। ভবিষ্যত প্রজন্মের কথা মাথায় রেখে আগামীর শিক্ষকরা যদি ছাত্রছাত্রীদের প্রতি এতটুকুও শ্রদ্ধাশীল হন এবং নিজেদের দায়িত্বটা পালন করেন, সেখানেই আমার কৃতিত্ব। এটি নিয়েই আমি গর্ববোধ করি।
আগামীতে ছবি প্রযোজনা করবার ইচ্ছা আছে কি?
না, আমি এমনিতেই বেশ ভালো আছি (হাসি)।
(সূত্রঃ ফিল্মফেয়ার)