আজ থেকে প্রায় এক কোটি বিশ লক্ষ বছর আগে পৃথিবীর বুকে বিচরণ করত মাইক্রোর্যাপটর নামক একটি তৃণভোজী ডাইনোস। শরীরের চারটি অংশ থেকে ডাইনোসরটির চারটি ডানা বের হয়ে থাকত, পুরো শরীর ছিল কালো পশমে ঢাকা। তবে দেখতে ছিল পুরোদস্তুর একটি কাকের মতো। অর্থাৎ, পক্ষীগোত্রীয় একটি ডাইনোসর ছিল এই মাইক্রোর্যাপটর। তবে মজার ব্যাপার হচ্ছে, আমাদের মাথায় যে আজকে খুশকি পাওয়া যায়, তার জন্য অনেকেই এই ডাইনোসরকে দায়ী বলে মনে করেন।
জার্নাল নেচার কমিউনিকেশন নামক একটি ম্যাগাজিনে সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে যে বিয়াপিয়াওসরাস সিনরনিথোসরাস নামক ডাইনোসর ও পরবর্তীতে মাইক্রোর্যাপটর নাম পাওয়া ডাইনোসরের ফসিলাইজড শরীরের চামড়ার মাঝে কিছু গুঁড়ো পাওয়া গিয়েছে। গুঁড়োগুলো পরীক্ষা করে দেখা গিয়েছে যে কার্বন ডেটে সবগুলোর মাঝেই খুশকির চিহ্ন রয়েছে। লক্ষ লক্ষ বছর আগের জুরাসিক যুগের এই ডাইনোসরগুলোর মাঝ থেকেই বিবর্তনের মাধ্যমে আমাদের মাঝে খুশকির প্রভাব এসেছে।
আয়ারল্যান্ডের ইউনিভার্সিটি কলেজ কর্কের একজন প্যালিওবায়োলজিস্ট এবং এই গবেষণার প্রধান গবেষক মারিয়া ম্যাকনামারা গার্ডিয়ান পত্রিকাকে দেয়া একটি সাক্ষাৎকারে বলেছেন, “ফসিলাইজড কোনো ডাইনোসরের মাঝে খুশকির ছাপ পাওয়া, এটিই প্রথম। ডাইনোসররা কী করে তাদের শরীর থেকে এসব খুশকি ঝাড়ত, তা নিয়ে আমাদের মাঝে আরও ব্যাপক পরীক্ষা নিরীক্ষার কথা হচ্ছে।”
চারটি উপাদানের মাঝে এটিই একমাত্র ফসিল, যেখানে খুশকির ছাপ খুব প্রবলভাবে রয়েছে। আজ থেকে প্রায় সোয়া কোটি বছর আগে পাওয়া এই মাইক্রোর্যাপটরের মাঝে পাওয়া উপাদানই হচ্ছে সবচেয়ে আদিম উপাদান। চারটি ফসিলকে ভালোভাবে পরীক্ষা নিরীক্ষা করবার জন্য ম্যাকনামারা ও বেইজিং থেকে আগত আরও কিছু সহযোগী কাজ করতে শুরু করেন। শরীরের নরম জায়গা থেকে প্রথমে তারা একটি স্যাম্পল খুঁজে বের করেন এবং সেটি ইলেকট্রন মাইক্রোস্কোপের নিচে রেখে পরীক্ষা করেন। আধুনিক পাখিদের সাথে এই ফসিলাইজড ডাইনোসরের শারীরিক কোন জায়গায় তারতম্য রয়েছে, সেটি তারা বেশ ভালোভাবে এই পরীক্ষার মাধ্যমে তুলে আনবার চেষ্টা করেছেন।
মানুষের শরীরে পাওয়া খুশকির মতোই এই ফসিলাইজড চামড়ায় কর্ণিওসাইটস্যান্ড পাওয়া গিয়েছে যেটিকে আবৃত করে রেখেছে কেরাটিন নামক প্রোটিন। বিজ্ঞানীদের মতে আজকের যুগের পাখিদের শরীরে যেমন খুশকি হয়ে থাকে, তার সাথে এই ফসিলাইজড চামড়ার মাঝে পাওয়া খুশকির অনেক মিল রয়েছে এবং মানুষের মাঝেও এর প্রভাব ব্যাপকভাবে পরিলক্ষিত হচ্ছে। সাপ কিংবা উভচরগোত্রীয় প্রাণীদের মাঝেও এর ছাপ লক্ষ্য করা যায় তবে সেটি এতটা প্রবল নয়।
পৃথিবীতে লোম এবং রুক্ষ খসখসে ত্বকের কীভাবে আবির্ভাব ঘটল, সেটি সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিতে পারে এই ডাইনোসরের খুশকি। তবে বিজ্ঞানীরা একটি বিষয়ে একমত হয়েছেন। আর তা হচ্ছে, পক্ষীগোত্রীয় ডাইনোসরদের প্রথমে পালক বিবর্তনের ধারায় বিবর্তিত হয় এবং আস্তে আস্তে সেখানে চামড়ার পরিবর্তন হওয়া শুরু করে।
(সূত্রঃ লাইভ সাইন্স)