প্রথমবার যখন শীর্ষ পর্যায়ের ক্রিকেটের স্বাদ পেলেন, প্রসিধ কৃষ্ণার বয়স তখন ১৯ বছর। ২০১৫ সালে বাংলাদেশ ‘এ’ দলের বিপক্ষে কর্ণাটক দলের হয়ে বোলিং ওপেন করেছিলেন, পাঁচ উইকেটও পেয়েছিলেন। সিনিয়র পর্যায়ে রাজ্য দলের হয়ে লাল বলে এটাই ছিল তাঁর শেষ বোলিংও।
তবে ক্যারিয়ারের একদম শুরুর দিকেই হতাশার সাথে পরিচয় হয়ে গিয়েছিল প্রসিধের। ইএসপিএন ক্রিকইনফোকে দেয়া সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘আমি অনূর্ধ্ব ১৬ দলে ডাক পাব বলে ভেবেছিলাম। কিন্তু যখন আমি সুযোগ পেলাম না, খুব ভেঙে পড়েছিলাম, কারণ তখনো ব্যর্থতা কি জিনিস তার সাথে আমার পরিচয় ঘটেনি। অনূর্ধ্ব ১৪ তে দুই বছর খেলেছি, অনূর্ধ্ব ১৬ তে তাই নিশ্চিতভাবেই ডাক পাব, এমনটাই ধারণা ছিল আমার। কিন্তু যখন ডাক পেলাম না, তখন আমার ধারণা হলো, আমাকে আরও কঠিন পরিশ্রম করতে হবে। সবকিছুকে আরও সিরিয়াসলি নিতে হবে। বন্ধু-বান্ধব ও আমার পরিবার অনেক সাহায্য করেছে সেই সময়।’
‘একটা অনূর্ধ্ব ১৯ টুর্নামেন্টের প্রথম তিন ম্যাচে আমাকে খেলানো হয়নি। তারপর সেমিফাইনালে খেললাম, দুই ইনিংসেই চার উইকেট করে পেলাম। সেই প্রথম লোকে আমাকে প্রসিধ কৃষ্ণা হিসেবে চিনতে শুরু করলো। ওটাই ছিল আমার প্রথম ব্রেকথ্রু, এরপর এলো কর্ণাটক প্রিমিয়ার লীগ। কেপিএলের পরে এলো বাংলাদেশের বিপক্ষে ম্যাচ। বিনয় কুমার অসুস্থ ছিল, অভিমন্যু মিথুন অন্য জায়গায় ব্যস্ত ছিল, তাই আমি সুযোগটা পাই। ওই পাঁচ উইকেট পাওয়াটা অনেক বড় কিছু ছিল।’
এরপর প্রসিধ দুইটি বিজয় হাজারে ট্রফিতে খেলেছেন। এই বছরের শুরুতে হয়ে যাওয়া আসরে যুগ্মভাবে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি হয়েছিলেন। এই পারফরম্যান্স শুধু কর্ণাটককে শিরোপাই জেতায়নি, তাঁকে সুযোগ করে দিয়েছে ভারতীয় ‘এ’ দলেও।
আর এবার তো সুযোগ পেয়ে গেলেন আইপিএলেও। শুধু সুযোগ পেয়েছেন বললে ভুল হবে, প্রসিধ এখন কলকাতা নাইট রাইডার্সের প্রথম পছন্দের পেসার। শুরুতে নিলামে বিক্রি না হওয়া এক আনকোরা তরুণের জন্য এটি বড় অর্জনই বলতে হবে।
তবে আইপিএলের সাথে সখ্যতা একেবারে নতুন নয় প্রসিধের জন্য। কর্ণাটকের বোলার হওয়ায় মাত্র ১৭ বছর বয়সেই রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর নেট বোলার হিসেবে সুযোগ পেয়েছিলেন।
নিজের আইপিএলে সুযোগ পাওয়ার অভিজ্ঞতা শোনাচ্ছিলেন প্রসিধ নিজেই, ‘বিজয় হাজারে ও দেওধর ট্রফি শেষ হওয়ার পর যখন বাড়ি ফিরি, তখন মার্চের প্রথম সপ্তাহে আমি কিংস ইলেভেন পাঞ্জাবের থেকে ফোন পাই। তারা আমাকে একবার পরখ করে দেখতে চাইছিল। তাই ওখানে গিয়ে কিছুদিন কাটিয়ে এলাম। এরপর আবার বেঙ্গালুরুতে ফিরতে হলো, কারণ বিজয় হাজারে ট্রফির উদযাপন পর্ব বাকি ছিল। ফেরার পথে কেকেআর থেকে আমাকে ফোন করে তাদের নেটে বল করার আমন্ত্রণ জানানো হয়, সাথে কয়েকটি অনুশীলন ম্যাচেও খেলতে বলা হয়।’
‘কয়েকটি অনুশীলন ম্যাচ খেলে আমি ফিরে আসি। তারা আমাকে বলেছিল, কেউ যদি কোন কারণে খেলতে না পারে, তাহলে আমার ব্যাপারে তারা বিবেচনা করে দেখবে। তার মানে আমি আমার কাজটুকু ঠিকঠাকভাবে করতে পেরেছিলাম।’
শেষ পর্যন্ত প্রসিধের কপাল খুলে যায়। ভারতীয় অনূর্ধ্ব ১৯ দলের গতিশীল পেসার কমলেশ নাগরকোটি ইনজুরিতে পড়লে ডাক পরে প্রসিধের। ১৪ এপ্রিল নাগরকোটি আনুষ্ঠানিকভাবে ইনজুরির জন্য বাদ পড়েন, তার স্থলাভিষিক্ত করা হয় প্রসিধকে।
হঠাৎ পাওয়া এই সুযোগের জন্য প্রস্তুত ছিলেন বলেও জানান প্রসিধ, ‘আমি প্রস্তুতই ছিলাম। ভালো একটা বিজয় হাজারে ট্রফি কাটিয়েছি, দেওধর ট্রফিটাও ভালো কেটেছে। আমি জানতাম কারোর কোন কিছু হলে আমার ডাক পড়তে পারে। যদিও এটা অবাক করা ব্যাপার ছিল, তবে আমি মানসিকভাবে প্রস্তুত ছিলাম।’
তবে প্রথম দুই ম্যাচের চাপটা খুব একটা সামলাতে পারেননি তিনি। ওয়াংখেড়েতে মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের বিপক্ষে আইপিএল অভিষেক হওয়া প্রসিধের প্রথম দুই ম্যাচের ফিগার ছিল যথাক্রমে ৪-০-৩৯-০ ও ৪-০-৪১-১।
‘একজন বোলারের জন্য মুম্বাই বেশ কঠিন জায়গা। নিজের প্রথম ম্যাচটা কঠিন সার্ফেসে খেলতে পেরে আমি তাই বেশ খুশি ছিলাম। দল থেকে আমার উপর কোন প্রকার চাপ দেয়া হয়নি। নির্দেশ দেয়ার বদলে আমাকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল আমি কি করতে যাচ্ছি।’
তবে প্রথমে খরুচে বোলিং করলেও ধীরে ধীরে কলকাতার মূল ভরসা হয়ে উঠেছেন প্রসিধ। এতটাই যে, মিচেল জনসন, বিনয় কুমার, টম কারান ও শিভাম মাভিদের বাইরে বসিয়ে রেখে তাঁকেই প্রথম পছন্দের পেসার হিসেবে খেলাচ্ছে কেকেআর ম্যানেজমেন্ট। প্রসিধও আস্থার প্রতিদান দিচ্ছেন বেশ ভালোভাবেই।