মঙ্গোলিয়া নামক দেশটি আজও আছে কিন্তু যাদেরকে আমরা মঙ্গল হিসেবে এতদিন বইয়ের পাতায় চিনে জেনে এসেছি, তারা পৃথিবীর বুকে আজ আর বিচরণ করে না। দুর্ধর্ষ, ঘোড়সওয়ার, হিংস্র মঙ্গলদের কেবল আজ মনে রেখেছে ইতিহাস আর ধূসর হয়ে যাওয়া বইয়ের পাতা। মঙ্গলদের সাথে কেবল অকুতোভয় ভাইকিংদেরই তুলনা করা যায়।
তবে একটি কথা জেনে আপনি অবাক হবেন। দুর্ধর্ষ এই মঙ্গলদের সাথে কেবল হিংস্র কথাটাই নয়, বরং একইসাথে সামাজিক ও সময়ের চেয়ে এগিয়ে থাকা উপমাটিও বেশ ভালোভাবেই যায়। তবে একটি কথা সত্যি। মঙ্গলদের সমাজ ও জীবন ব্যবস্থা সম্পর্কে যতই জানতে যাই না কেন, সেখানে মঙ্গোলীয় নারীদের কথা উপেক্ষিতই থাকে। মঙ্গল নারীদের কথা খুব বেশি একটা ইতিহাসের পাতায় উঠে আসে না। আসুন, আজ মঙ্গলীয় নারীদের সম্পর্কে কিছু জেনে নেয়া যাক।
ইতিহাসবেত্তারা মঙ্গোলিয়ানদের দুর্ধর্ষ ও ভয়ানক কিছু চরিত্র হিসেবেই তুলে ধরেছেন ইতিহাস বর্ণনা করতে গিয়ে কিন্তু নারীদের বিষয়ে তেমনভাবে তুলে আনেননি। বিষয়টি অবাক করার মতো হলেও সত্যি, মঙ্গোলীয় সভ্যতায় নারীদের অবদান অনেক। এমনকি তাদের সভ্যতাকে নারীদেরকেই ‘বিগ শট’ বলে অভিহিত করা হয়ে থাকে। পুরুষেরা যখন যুদ্ধ করতে ঘরের বাইরে ব্যস্ত, নারীরাই তখন ঘর এবং সমাজের নানা বিষয় সামলাতে নিজেদের বিভিন্ন দিকে ন্যস্ত রাখত। অর্থনীতির চাকা কেমনভাবে ঘুরবে, শামনাস্টিক ধর্ম অনুযায়ী তাদের উঁচু একটি পদ কেমন করে ধরে রাখা যায়, তা নিয়ে মঙ্গলীয় নারীরা ছিলেন সর্বদাই তৎপর।
মঙ্গলীয় সমাজে নারীদের মর্যাদা এতটাই উঁচুতে ছিল যে বর্তমানের সমসাময়িক ইউরোপীয়ান নারীরা তা সম্পর্কে কল্পনাই করতে পারবেন না। ঘরকন্না, ধর্ম কিংবা ব্যবসা বাণিজ্য সামলাতেই নারীরা পটু ছিলেন না, তাদের হাতে সমাজের শাসন ব্যবস্থাও ছিল। তবে সেটি খুবই কম। যোগ্য না হলে মঙ্গোলীয় নারীদের হাতে সমাজের শাসনব্যবস্থার চাবি তুলে দেয়া হতো না। ধর্মীয় নানা প্রতিষ্ঠানে নিজেদেরকে পুরোহিত হিসেবেও প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন নারীরা। চেঙ্গিস খানের মৃত্যুর পর তার মেয়ে ও পুত্রবধূরা সাম্রাজ্যের হাল এমনভাবে ধরেছিলেন যাতে মঙ্গলদের চেষ্টার কোনো অব্যহতি না থাকে। এজন্য তাদেরকে কঠোর পরিশ্রম ও সংগ্রামও করতে হয়েছিল। তখনকার ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যাবে যে মঙ্গলদের সমাজে নানা ধরনের অস্থিরতা বিরাজ করছিল। চেঙ্গিসের মৃত্যুর পর অনেক দেশ থেকেই ক্ষমতালিপ্সুরা মঙ্গলদের ওপর আঘাত হানতে শুরু করে। এসব হামলা ঠেকানোর জন্য দরকার ছিল দক্ষ সৈনিকের। সে দায়িত্বটি বেশ নির্দ্বিধায় নারীরা নিজেদের হাতে তুলে নিয়েছিলেন। মঙ্গল রাণীদের মাঝে বেশ ক্ষমতাশালী ছিলেন মান্ধুহাই। তিনি যেমন রণকৌশলে পারঙ্গম ছিলেন, ঠিক তেমনি যুদ্ধের গতি প্রকৃতি কোনদিকে এগোলে তাদের পক্ষে বিজয় আনা নিশ্চিত হবে, সেটিও বেশ ভালোভাবেই বুঝতে পারতেন। চেঙ্গিসের মতোই তিনি মঙ্গলদের বিজয়ের পক্ষে একের পর এক যুদ্ধ করেছিলেন এবং বিজয়মাল্য ছিনিয়ে এনেছিলেন। ত্রিশের কোঠায় বয়স আসবার পর তার মনে হয়েছিল যে বংশের নাম এভাবেই ছড়িয়ে যাওয়া উচিত কিন্তু যুদ্ধ থেকে নিজেকে বিরত রাখতেও পারছিলেন না তিনি। অবশেষে ১৭ বছর বয়সী একজন কিশোর রাজপুত্রকে বিবাহ করেন এবং তার গর্ভে আটজন সন্তানের জন্ম হয়। জীবনের শেষ পর্যন্ত মান্ধুহাই যুদ্ধ করে গিয়েছিলেন। এমনকি তার সন্তান সন্ততিরাও বেশ যুদ্ধবাজ হয়ে উঠেছিলেন।