মাত্রাতিরিক্ত ফাস্টফুড খেতে খেতে একসময় আমাদের মাঝে ক্ষুধামন্দা চলে আসে। ব্যবহৃত লবণ ও অন্যান্য মশলা টেস্ট বাডগুলো আস্তে আস্তে নষ্ট করে দেয় এবং কোনো ধরনের খাবার খেতেই আর মন চায় না। সামাজিক গণমাধ্যমও যেন ঠিক এমন। মাত্রাতিরিক্ত সামাজিক গণমাধ্যম ব্যবহার করবার ফলে আমাদের ব্যক্তিগত, সামাজিক ও পারিবারিক জীবন নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে থাকে। ভার্চুয়াল এই জগতের সাথে পরিচিত জগতকে মেলাতে গিয়ে নানাভাবেই ধাক্কা খেতে হয় প্রতিনিয়ত। আমাদের মনকে নিয়ন্ত্রণ করতে সামাজিক গণমাধ্যম কি করে থাকে, আসুন জেনে নিই।
লাল রঙ বলতে বোঝায় বিপদকে কিংবা হুঁশিয়ারি কোনো কিছুকে। গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে যেসব বাচ্চাদের নোটবুক লাল রঙের কভার দিয়ে বানানো হয়ে থাকে, সেগুলোতে তারা মাত্রাতিরিক্ত পর্যায়ে খারাপ ফলাফল করে থাকে। তবে লাল রঙ মানুষকে আকৃষ্ট করে এসেছে আদিম কাল থেকেই, সেটি সবাই একবাক্যে মানবেন। বিভিন্ন সামাজিক ওয়েবসাইটগুলোতে গেলে দেখা যাবে যে সেখানকার কভার কিংবা বিভিন্ন নোটিফিকেশনের চিহ্ন তৈরি করা হয়েছে লাল রঙের সাহায্যে। এর ফলে ব্যবহারকারীরা একইসাথে বুঁদ হয়ে থাকে এবং নিজেদের মূল্যবান সময়গুলো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যয় করে থাকে।
লাইক, কমেন্ট এবং রিটুইট- এই তিনটি জিনিসের আধিক্য মানুষকে ফের টেনে নিয়ে আসে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কাছে। কে নতুন করে লাইক দিলো, কে একটি কমেন্ট করল, কে রিটুইউট করল এসব দেখবার জন্য মানুষকে আবার লগ ইন করতে হয়। ফলে না চাইতেও কৌতূহলের কাছে পরাজিত হতে হয় মানুষকে। এর ফলে শরীরে ডোপামিনের মাত্রা বেড়ে যায় ও নতুন কিছু দেখবার আশা তাকে উন্মত্ত করে তোলে। এভাবেই সামাজিক গণমাধ্যম লোভের কাছে মানুষকে পরাজিত করে মনকে নিয়ন্ত্রণ করে।
কাজ করে পুরস্কার পাবার লোভ মানুষের চিরন্তন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ইদানীং দেখা যাচ্ছে নানা ধরনের গেম ও সোশ্যাল কনটেস্ট তৈরি করা হচ্ছে। এসব কনটেস্টে একজন দুজন মানুষ নয়, লক্ষ লক্ষ মানুষ যোগদান করে থাকে। মনোলোভা নানা ধরনের পুরস্কার ঘোষণা করা হয়ে থাকে তবে মজার ব্যাপার হচ্ছে, এসব পুরস্কারের কোনোটিই বাস্তবজীবনে দেয়া হয় না। গোল্ড কয়েন, লাইফ জ্যুস ইত্যাদি পাবার নেশায় মানুষ ঝাঁকে ঝাঁকে এসব গেমে নিজেদের বুঁদ করে রাখে এবং নিজের অজান্তেই মনকে নিয়ন্ত্রণ করার ছড়ি তুলে দেয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের হাতে।
আবেগের বহিঃপ্রকাশ মানুষের মাঝে চিরন্তন। আমরা রাগি, ক্ষোভে চিৎকার করি, ব্যথা পেলে কাঁদি আবার হাসি পেলে হাহা করে হাসি। মানুষের মাঝে যদি আবেগের প্রকাশ না ঘটে, তাহলে সেটিকে ঠিকভাবে প্রকাশ করবার উপায় বের করা উচিত। তবে গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারকারীদের মাঝে নেতিবাচক আবেগের প্রকাশ করবার সুযোগটা খুব কম। কারণ, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের চটুলতা ও বিভিন্ন মনোহারী বিজ্ঞাপনের মাঝে মানুষ নিজের আবেগ প্রকাশ করবার খুব বেশি একটা সুযোগ পায় না। আর পেলেও সেটি রি-একশন কিংবা ইমো স্টিকারের মাঝে হারিয়ে যায়। আবেগের প্রকাশ করবার জন্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম খুব ভালো কোনো প্ল্যাটফর্ম নয়। তাই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এভাবেও আমাদের মনকে নিয়ন্ত্রণ করে থাকে।
এছাড়াও যাচাই বাছাই না করেই যে কোনো ব্র্যান্ডকে আমাদের পছন্দসই করে দেয়া, ভার্চুয়াল জগতে ব্যবহারকারীদের এটি মনে করিয়ে দেয়া যে তার চারপাশে অনেক বন্ধু রয়েছে, পরিবার থেকে আলাদা রেখে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেই পরিবারের সাথে একটি অদৃশ্য মেকি বন্ধন গড়ে দেয়া ইত্যাদি নানা ধরনের কার্যকলাপের মাধ্যমে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম আমাদের মনকে নিয়ন্ত্রণ করে থাকে।
(সূত্রঃ লিস্ট ভার্স)