দিল্লী ডেয়ারডেভিলস এবং চেন্নাই সুপার কিংস, আইপিএলের লীগ পর্বে নিজেদের শেষ ম্যাচটা দুই দলের জন্য ছিল দুই রকম। টুর্নামেন্ট থেকে আগেই বিদায় নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল দিল্লীর, মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের বিপক্ষে শেষ ম্যাচটা তাই স্রেফ সম্মানরক্ষার ম্যাচই ছিল তাদের জন্য। অপরদিকে চেন্নাই সুপার কিংসের প্লে-অফ নিশ্চিত হয়েছে আরও আগেই, কিংস ইলেভেন পাঞ্জাবের বিপক্ষে ম্যাচটি জিতে সেরা দুইয়ে থাকা নিশ্চিত করার মিশন ছিল ধোনির দলের সামনে। দুই দল সম্পূর্ণ দুই মেরুতে থাকলেও পারফরম্যান্সের দিক দিয়ে এক বিন্দুতে মিলেছেন দুই দলের দুই তরুণ ও উদীয়মান বোলার। দিল্লীর নেপালি লেগ স্পিনার সন্দ্বীপ লামিচানে ও চেন্নাইয়ের সাউথ আফ্রিকান পেসার লুঙ্গি এনগিডি, লীগ পর্বের শেষ ম্যাচে বল হাতে আলো ছড়িয়েছেন দুজনেই।
দিল্লীর ফিরোজ শাহ কোটলায় মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের বিপক্ষে নিজের তৃতীয় আইপিএল ম্যাচ খেলতে নেমেছিলেন নেপালি স্পিনার লামিচানে। ইনিংসের প্রথম ওভার করার জন্য তার হাতে বল তুলে দেন অধিনায়ক শ্রেয়াস আইয়ার। লামিচানের প্রথম দুই বল থেকেই ব্যাটসম্যান সূর্যকুমার যাদব তুলে নেন ১০ রান, প্রথম বলে চারের পর দ্বিতীয় বলে ছয়। পরের বলে আরও দুই রান। প্রথম তিন বলেই ১২ রান খেয়ে নার্ভাস হয়ে পড়তেই পারতেন এই তরুণ। কিন্তু চতুর্থ বলে ফিরে এলেন দারুণভাবে, লং অনে বিজয় শঙ্করের ক্যাচ বানালেন যাদবকে। এখানেই থামেননি, মুম্বাইয়ের রান তাড়ায় গুরুত্বপূর্ণ দুই ব্যাটসম্যান কাইরন পোলার্ড আর ক্রুনাল পান্ডিয়াকেও ফিরিয়েছেন লামিচানে। ৪ ওভার বল করে ৩৬ রান দিলেও তুলে নিয়েছেন গুরুত্বপূর্ণ ৩ টি উইকেট। তার দল দিল্লীও মুম্বাইকে হারিয়েছে ১১ রানে।
রাতে লামিচানের পারফরম্যান্সকেও ছাড়িয়ে গেছেন লুঙ্গি এনগিডি। কাগিসো রাবাদার পর সাউথ আফ্রিকার সবচেয়ে প্রতিভাবান পেসার মানা হচ্ছে এনগিডিকে। কারণটা আরও একবার বুঝিয়ে দিলেন তিনি। কিংস ইলেভেন পাঞ্জাবের বিপক্ষে ৪ ওভার বল করে ১ মেডেন ওভার সহ মাত্র ১০ রানে ৪ উইকেট নিয়েছেন! মাত্র দুই বলের মাথায় ক্রিস গেইলকে উইকেটের পেছনে ধোনির ক্যাচ বানিয়েছেন, এরপর ফিরিয়েছেন টুর্নামেন্টে ভয়ংকর রূপে থাকা লোকেশ রাহুলকেও। আর পরের স্পেলে এসে নিয়েছেন অধিনায়ক অশ্বিন ও অ্যান্ড্রু টাইয়ের উইকেট।
আইপিএলের নিলামে অনেকটা অপ্রত্যাশিতভাবেই দিল্লী ডেয়ারডেভিলস তাকে কিনে নেয়ার পর উচ্ছ্বাস শুরু হয়ে গিয়েছিল সন্দ্বীপ লামিচানেকে নিয়ে। প্রথম ১১ টি ম্যাচে একাদশে সুযোগ পাননি, ১২ তম ম্যাচে এসে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর বিপক্ষে খেলার সুযোগ পেয়েছেন। আর তাতেই করে ফেলেছেন ইতিহাস। নেপালের প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে এত বড় মাপের কোন টি-২০ ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্টে খেলা প্রথম খেলোয়াড় হয়ে গেছেন ১৭ বছর বয়সী এই স্পিনার। লামিচানে অবশ্য আন্তর্জাতিক ক্রিকেটাঙ্গনে একেবারেই অপরিচিত নন। এ বছরই আইসিসি ক্রিকেট বিশ্বকাপের বাছাইপর্বে মাত্র ৬ ম্যাচেই ১৩ উইকেট নিয়ে আলোচিত হয়েছিলেন বেশ।
দিল্লীর হেড কোচ রিকি পন্টিং তো লামিচানেকে নিয়ে বেশ উচ্ছ্বসিত, ‘শেষ তিন ম্যাচে ও দুর্দান্ত বল করেছে।’ কিন্তু কেন তাকে আরও আগে থেকেই খেলানো হয়নি? এ ব্যাপারে পন্টিংয়ের ভাষ্য, ‘আপনি যদি টুর্নামেন্ট শুরুর আগে আমাদের স্কোয়াড দেখেন, রাবাদা, মরিস ও ম্যাক্সওয়েলকে রাখার পর সন্দ্বীপের জন্য জায়গা বের করা আসলেই কঠিন হয়ে যেত। ফিরে যাওয়ার আগে মরিস চার-পাঁচটা ম্যাচ খেলেছে। এরপর বোল্ট, প্লাঙ্কেট, ক্রিশ্চিয়ান অনেককেই পরীক্ষা করে দেখেছি আমরা। সঠিক একটা কম্বিনেশনের খোঁজে ছিলাম আমরা। কিন্তু সন্দ্বীপের যে স্কিল আছে সেটা আমরা সবসময়ই জানতাম।’
‘গত আট নয় সপ্তাহ ধরে ওকে বল করতে দেখছি আমরা। ও খেলাটাকে ভালোবাসে, সারাদিন মুখে হাসি ধরে রেখে বল করে যেতে পারে। ওর মতো প্রতিভাবান তরুণদের উঠে আসা খেলাটার জন্যই ভালো। এই টুর্নামেন্টে আমরা বেশ কয়েকজন তরুণ প্রতিভাবান খেলোয়াড় পেয়েছি, সন্দ্বীপ অবশ্যই তাদের মধ্যে একজন। ওর দীর্ঘ, সফল আইপিএল ক্যারিয়ারের অপেক্ষায় আছি আমরা।’
এত রথী-মহারথীদের সান্নিধ্যে আসতে পেরে সন্দ্বীপের অনুভূতি কী? শুনুন তার নিজের মুখেই, ‘আমার জন্য দারুণ শিক্ষণীয় সময় ছিল। এমন অনেক কিছু শিখেছি যা বলে বোঝানো সম্ভব নয়। ব্যক্তিগতভাবে আমি সবাইকেই ধন্যবাদ জানাতে চাই। এখান থেকে অর্জিত অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে নেপালের ক্রিকেটকে আমি আরও উঁচু স্থানে তুলে নিয়ে যেতে চাই।’
সন্দ্বীপের টুর্নামেন্ট শেষ হয়ে গেলেও এনগিডি আরও অন্তত দুইটি ম্যাচ পাচ্ছেন। এখনো পর্যন্ত ৫ ম্যাচে ৯ উইকেট পাওয়া এনগিডির সামনে সুযোগ থাকছে উইকেট সংখ্যাটা আরও বাড়িয়ে নেয়ার। নিজের পারফরম্যান্সে এখনো পর্যন্ত সন্তুষ্ট এনগিডি, ‘আজকের পারফরম্যান্সে খুব খুশি। উইকেটে কিছুটা পেস আর বাউন্স ছিলো, ওটাই কাজে লাগিয়ে ব্যাটসম্যানদের অস্বস্তিতে ফেলতে চেয়েছি। পরিকল্পনা বেশ ভালোই কাজে লেগেছে।’