গত বিশ্বকাপজয়ী জার্মান দলের গোলকিপার ছিলেন তিনি। অধিনায়কের আর্মব্যান্ডও ছিল তাঁর হাতেই। পুরো বিশ্বকাপ জুড়েই গোলবারের নিচে পরম নির্ভরতার প্রতীক হয়ে ছিলেন। শুধু গোলকিপিংই নয়, সুইপার কিপার হিসেবে রোল প্লে করে ভক্তদের মন জয় করেছিলেন ব্রাজিল বিশ্বকাপে। দলকে তো বিশ্বকাপ এনে দিয়েছিলেনই, ব্যক্তিগত পুরষ্কার হিসেবে পেয়েছিলেন বিশ্বকাপের সেরা গোলকিপারের পুরষ্কার গোল্ডেন গ্লাভস অ্যাওয়ার্ড। জার্মানির তো বটেই, বিশ্বেরই সেরা গোলকিপার মানা হয় তাঁকে। সেই ম্যানুয়েল নয়্যারেরই কিনা এবার বিশ্বকাপে খেলা অনিশ্চিত!
না, ফর্মের কারণে নয়। নয়্যারকে নিয়ে শঙ্কা, কারণ এক বছরেরও বেশি সময় ধরে ইনজুরিতে ভুগছেন তিনি। পরপর দুইটি মেটাটারসাল ইনজুরিতে পড়ে দীর্ঘদিনের জন্য মাঠের বাইরে এই জার্মান কিপার। এই মৌসুমে খেলেছেন মোটে চারটি ম্যাচ, যার সর্বশেষটি গত বছরের সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝিতে। আর দেশের হয়ে সর্বশেষ খেলেছেন তো আরও আগে, ২০১৬ সালের নভেম্বরে।
ইনজুরি থেকে সেরা ওঠার প্রক্রিয়াটাও ঠিক মসৃণ যাচ্ছে না নয়্যারের। ইনজুরির ভয়াবহতা সম্পর্কে বলতে গিয়ে গত মার্চে বলেছিলেন, ‘এখন আমার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে আমার পায়ের সর্বোচ্চ খেয়াল রাখা, নতুন করে যেন আর কিছু না হয়। নাহলে আমার ক্যারিয়ারই হুমকির মুখে পড়ে যাবে।’ এপ্রিলে জানিয়েছিলেন আরও দুসংবাদ, ‘আমার ফেরা নিয়ে এখনো অনেক প্রশ্নের জায়গা আছে। নিজের কাছে সৎ থাকতে হবে আমাকে, আমার পারফরম্যান্স নিয়ে খুশি থাকতে হবে। এত লম্বা অনুপস্থিতির পর কি আমি নিজের সেরা ফর্মে ফিরতে পারবো আর?’
৩২ বছর বয়সী জার্মান কিপার এরপর অনুশীলনে ফিরেছেন। প্রথমে শোনা গিয়েছিল বুন্দেসলিগায় বায়ার্নের শেষ ম্যাচের আগেই ম্যাচ ফিট হয়ে উঠবেন তিনি, কিন্তু তা হয়নি।
তাহলে এই অবস্থায় জার্মান জাতীয় দলের প্রথম পছন্দের গোলকিপার কে হবেন? ফিটনেস নিয়ে নিশ্চিত না হওয়ার পরেও বিশ্বকাপের প্রাথমিক দলে নয়্যারকে রেখেছেন কোচ জোয়াকিম লো। তবে প্রাথমিক দল থেকে মূল দলে জায়গা করে নিতে পারবেন কি না, সেটা নিশ্চিত নন, কারণ লো নিজেই বলেছেন, প্রাথমিক দলে চারজন গোলকিপার থাকলেও মূল দলে কেবল ৩ জন গোলকিপারকে নিয়েই রাশিয়ার বিমানে উঠবেন তিনি। তিনজনের একজন কি হবেন নয়্যার?
লো’র কথায় এখনো কিছু স্পষ্ট না হলেও বিশ্বকাপের জন্য যে পুরো ফিট স্কোয়াডই চাইবেন তিনি, সেটা বুঝিয়ে দিয়েছেন, ‘আমাদের উপর যে দায়িত্ব আছে সেটা আমি ও ম্যানুয়েল দুজনেই ভালো করে জানি। চারটা মেজর টুর্নামেন্টে খেলেছে ও, এরকম টুর্নামেন্টে একজন গোলকিপারের কেমন অবস্থায় থাকতে হয় সেটা সে ভালোই জানে। আমরা তাঁকে ফিরে আসার মতো সময় এবং আশা দুটোই দিচ্ছি।’
শেষ পর্যন্ত নয়্যার যদি রাশিয়ায় নাই যেতে পারেন, তাহলে পরিষ্কার প্ল্যান বি ও রেডি আছে জার্মান কোচের। নয়্যারের জায়গায় তখন জার্মানির প্রথম পছন্দের গোলকিপার হবেন বার্সেলোনার মার্ক আন্দ্রে টের স্টেগেন। নয়্যারের বিকল্প হিসেবে তৈরি রাখার জন্য গত বছরের ফিফা কনফেডারেশন্স কাপে টের স্টেগেনকেই খেলিয়েছিলেন লো, দারুণ পারফর্ম করে আস্থার প্রতিদানও দিয়েছেন এই ২৬ বছর বয়সী কিপার। সাথে বার্সেলোনার হয়ে কাটিয়েছেন দুর্দান্ত একটি মৌসুম। এই মুহূর্তে বিশ্বের সেরা গোলকিপারদের ছোট্ট তালিকাতেও আসবে টের স্টেগেনের নাম। নয়্যারের মতই আক্রমণাত্মক মানসিকতার টের স্টেগেনকে নিয়ে তাই নিশ্চিন্তই থাকতে পারেন জার্মান ফ্যানেরা।
বিশ্বকাপের আগে ২ জুন অস্ট্রিয়ার বিপক্ষে আন্তর্জাতিক প্রীতি ম্যাচ আছে জার্মানির। নয়্যারের জন্য বিশ্বকাপের দলে জায়গা পাওয়ার এটাই হতে পারে শেষ সুযোগ। কারণ লো যে পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছেন, ‘বিশ্বকাপের মতো টুর্নামেন্টে পর্যাপ্ত প্লেয়িং টাইম ছাড়া কোন খেলোয়াড় যেতে পারে না। আমরা একে অপরের কাছে সবসময়ই খুব স্পষ্টবাদী। অনুশীলন ক্যাম্প শেষে আমরা কথা বলবো, সে বিশ্বকাপে যাওয়ার মতো অবস্থায় আছে কিনা সে ব্যাপারে খোলাখুলি কথা বলবো। আর ৪ জুন চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেব।’
নয়্যার ভক্তদের জন্য এখন তাই প্রার্থনা ভিন্ন অন্য কোন উপায় নেই!