এই মহাবিশ্বে ভিনগ্রহের প্রাণীদের খোঁজ করবার পর কি বিজ্ঞানীদের খালি হাতেই ফিরতে হবে? নাকি অন্য কোনো মহাবিশ্বে ঢুঁ মারবার সময় হয়েছে এবার? রয়াল এস্ট্রোনমিকাল সোসাইটির একটি নতুন গবেষণা মতে আমাদের পাশাপাশি অবস্থান করা কোনো একটি মহাবিশ্বে আরও প্রাণের অস্তিত্ব রয়েছে। ডার্ক এনার্জির শক্তির বলে ক্ষয়ে পড়া কোনো কারণে যদি সেটি আস্তে আস্তে নিঃশেষিতও হয়ে থাকে, তবুও সেখানে মহাজাগতিক প্রাণের অস্তিত্ব থাকতে পারে বলে বিজ্ঞানীদের ধারণা।
দ্য মাল্টিভার্স থিওরি অনুযায়ী এই মহাবিশ্ব শুধুমাত্র একটিই নয়, আরও অনেক রয়েছে। সংখ্যাটি হয়ত গুণে শেষ করা যাবে না। বিজ্ঞানীরা এতোদিন মনে করতেন যে অন্যকোনো মহাবিশ্ব যদি থেকেও থাকে, তাহলে সেখানে প্রাণের বিকাশ ঘটতে কিছু নির্দিষ্ট নিয়মাবলী মেনে চলতে হবে। তারকারাজি, বিভিন্নসব গ্যালাক্সী, প্রাণের বিকাশ ঘটাবার জন্য নির্দিষ্ট গ্রহরাজি ইত্যাদি সকলকিছুর জন্য নির্দিষ্ট কিছু নিয়ম মেনে চলতে হবে, ধারণা ছিল বিজ্ঞানীদের। নতুন এই গবেষণায় বিজ্ঞানীরা বেশ বড় ধরনের কম্পিউটার সিমুলেশন প্রক্রিয়া চালিয়েছেন যার মাধ্যমে দেখা গিয়েছে যে তাদের আগের যত চিন্তাধারা ও হিসাব নিকাশ ছিল, তার সবকিছুই আবার নতুন করে শুরু করতে হবে। বিশেষ করে কৃষ্ণগহ্বরের মাঝে থাকা বিশাল বিশাল শক্তিগুলো যখন তাদেরকে এই ধারণাটি আনতে সাহায্য করেছে।
ডার্ক এনার্জি
ডার্ক এনার্জি হচ্ছে একধরনের অদৃশ্য শক্তি যেটি আমাদের চারপাশে বিপুল পরিমাণে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে বলে ধারণা করা হয়ে থাকে। মাধ্যাকর্ষণ বলের চিরশত্রু বলেও কেউ কেউ এটিকে আখ্যায়িত করে থাকেন যার কারণ, গ্র্যাভিটির কারণে যখন সকল বস্তুকেই পৃথিবীর কেন্দ্রাতিগ বলের কারণে নিচে নামতে হয়, তখন ডার্ক এনার্জি এই শক্তিগুলোকে চারদিকে ছড়িয়ে দিতে শুরু করে। মাধ্যাকর্ষণ বলের সাথে ডার্ক এনার্জির এই যুদ্ধে সবসময় ডার্ক এনার্জিই জয়ী হয় বলে এটিকে নিয়ে বিজ্ঞানীদের ভাবনার কোনো অন্ত নেই।
তবে শুধুমাত্র আমাদের মহাবিশ্বই নয়, চারপাশে আরও যত মহাবিশ্ব রয়েছে, তার সবকিছুই সম্প্রসারণশীল হতে শুরু করেছে। এই বৃদ্ধি পাবার হারও দিন দিন বেড়েই চলেছে। মহাবিশ্বে আরও যত খালি স্থান আসুক না কেন, ডার্ক এনার্জি এই স্থানগুলোকে পূর্ণ করে দেবে। তবে ডার্ক এনার্জি ও ডার্ক ম্যাটারকে অনেকেই একই জিনিস বলে ভুল করে থাকেন। এরা কখনোই এক নয়। কার্যকারিতা ও বৈশিষ্ট্যের দিক থেকে এদের মাঝে অনেক পার্থক্য রয়েছে।
ডার্ক এনার্জি আসলে ঠিক কীভাবে কাজ করে, সেটি সম্পর্কে বিজ্ঞানীরা এখনও ভালোভাবে নিশ্চিত হতে পারেননি। অনেকে আবার এর অস্তিত্বেই অবিশ্বাস করেন। বিজ্ঞানীদের ধারণা অনুযায়ী, বর্তমান বিশ্বের ৭০ শতাংশই তৈরি হয়েছে ডার্ক এনার্জির মাধ্যমে। তবে এর মাঝেও কিছু কথা রয়েছে। ডার্ক এনার্জির পরিমাণের ওপর নির্ভর করে অনন্ত এই মহাবিশ্বে তাদের প্রাণ ধারণ করবার ক্ষমতা ও সেটি ছড়িয়ে দেবার শক্তি ঠিক কতখানি। প্রশ্ন হচ্ছে, কতটুকু ডার্ক এনার্জি থাকলে সেখানে প্রাণের অস্তিত্ব অনেক বেশি ঘটবে কিংবা ঘটবেই না বলে ধারণা করা হয়ে থাকে বলে আপনার বিশ্বাস?
জীবন ছড়িয়ে পড়বার একটি উপায় খুঁজে নেয়
ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া ও নেদারল্যান্ডের কিছু বিজ্ঞানীদের গবেষণা থেকে বেরিয়ে এসেছে কিছু চমৎকার বিষয়। এদের মধ্যে একটি প্রোগ্রামের নাম হচ্ছে এভোল্যুশন অ্যান্ড এসেম্বলি অফ গ্যালাক্সিজ। আমাদের চারপাশের বিশ্বে প্রাণ কীভাবে ছড়িয়ে পড়ছে এবং তাদের টিকে থাকার প্রধান রহস্য কী, সেগুলো নিয়ে আলোচনা করেছেন বিজ্ঞানীরা। প্রত্যেকটি সিমুলেশনে বিজ্ঞানীরা দেখিয়েছেন যে একটি নির্দিষ্ট মাত্রায় যদি ডার্ক এনার্জি যদি মহাবিশ্বে থাকে, তাহলে সেখানে প্রাণের বিকাশ বেশ সহজেই ঘটতে পারবে। অনেকে আবার বিস্ময় প্রকাশ করেছেন যে এই প্রাণের বিকাশের সংখ্যাটি আমাদের ধারণার চাইতেও অনেক বেশি হতে পারে। মানুষের চাইতে অধিক বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন প্রাণী আছে কিনা, এই বিতর্কে না গিয়ে বিজ্ঞানীরা বলছেন যে মহাবিশ্বের সম্প্রসারণশীল অংশগুলোতে মাইক্রো অর্গ্যানিজম বা এরকম কোনো ক্ষুদ্রাকার জীবাণু থাকতে পারে।
রিচার্ড বাউয়ার নামক একজন পদার্থবিদ বলেছেন, “আমার মনে হয় পদার্থবিদ্যার নতুন কিছু সূত্র এবার আবিষ্কার করা উচিত। মহাবিশ্বের রহস্য ঠিক তার মতোই দিন দিন বেড়ে চলেছে। আগের যেসব সূত্রগুলো রয়েছে, সেগুলো দিয়ে আর নতুন কিছু ব্যাখ্যা করা সম্ভব হচ্ছেনা।”
হয়ত এই ব্যাখ্যা করবার মাঝেই উঠে আসবে আরও নতুন নতুন সব তত্ত্ব!
(সূত্রঃ লাইভ সাইন্স)