এই মুহূর্তে বিশ্বের সেরা টি-২০ বোলার মানা হচ্ছে তাঁকে। বিশ্বজুড়ে প্রায় সব ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্টেই খেলেছেন, রহস্যময় বোলার হিসেবে তাঁর কদরও বেশ। তাঁর বলে রান তোলাটা যেন অন্যতম কঠিন কাজে পরিণত হচ্ছে ব্যাটসম্যানদের জন্য। আফগানিস্তানের রশিদ খান সেই ব্যাপারেই কথা বললেন ইএসপিএন ক্রিকইনফোর সাথে।
লেগ স্পিন কোথা থেকে শিখলেন? আর এত বৈচিত্র্যই বা রপ্ত করলেন কীভাবে?
রশিদ: আমার ছয় ভাইয়ের থেকেই আমি লেগ স্পিন শিখেছি। ওরা সবাই ক্রিকেটের পোকা, সবাই লেগ স্পিন করে। ওদের কাছেই প্রথম দেখা, এরপর বাকিটা প্রকৃতিগতভাবেই এসেছে। আমার লেগস্পিনে আলাদা বলতে একটাই জিনিস ছিল, শুরু থেকেই আমি জোরের উপর লেগস্পিন করি। লেগ স্পিন, রং’আন এগুলো আমার মধ্যে প্রকৃতিগতভাবেই এসেছে।
শুরুর দিকে বোলিংয়ে উন্নতি আনার ব্যাপারে কোন কোচ সাহায্য করেছিলেন?
রশিদ: যতজন কোচের সাথে কাজ করেছি, কেউই আমার বোলিং স্টাইল বা অ্যাকশনে পরিবর্তন আনতে চাননি। তারা সবসময় আমাকে আত্মবিশ্বাস যোগাতো। অনূর্ধ্ব ১৯ দলের কোচ দৌলত আহমদজাই আমাকে অনেক সমর্থন দিয়েছেন, বলেছিলেন আমার মধ্যে যোগ্যতা আছে, আমি অনেক দূর যাব। এছাড়া কোন কোচ আমাকে টেকনিকাল বিষয়গুলো, যেমন- কীভাবে বল ধরতে হয়, অ্যাকশন কেমন হওয়া উচিত, বল কীভাবে রিলিজ করতে হয়, এসব কিছু শেখাননি। আমি এগুলো প্রকৃতিগতভাবেই পারতাম।
সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদের বোলিং কোচ মুত্তিয়া মুরালিধরণের কাছ থেকে বিশেষ কিছু শিখেছেন?
রশিদ: আমার অ্যাকশন ও বাকি সবকিছু দেখার পর তিনি বলেছিলেন, ‘তুমি একদম ঠিকঠাক আছো, তোমার কোন কিছু বদলানোর দরকার নেই।’ আমার সাথে স্পট বোলিংয়ের ব্যাপারে কথা হয় উনার। কোন স্পটটা আমি টার্গেট করতে চাই, বলটা ঠিক কোথায় ফেলতে চাই এসব বিষয়ে। দ্বিতীয়ত আমাকে যেটা বলেন, ছক্কা খাওয়ার পরেও আমাকে আগের মতই নির্ভার থাকতে হবে। আবার যদি আমি পাঁচ-ছয় উইকেট পেয়ে যাই, তাহলেও আমাকে ঠিক আগের মতই নির্লিপ্ত থাকতে হবে, নিজের প্ল্যান অনুযায়ী বল করে যেতে হবে। নিজের অনেক অভিজ্ঞতা শেয়ার করেছেন আমার সাথে। বারবার আমাকে বলেন, একবার যদি মানসিকভাবে শক্ত হতে পারো, তাহলে অনেক পরিস্থিতিতেই সেটা তোমাকে সাহায্য করবে।
ক্রিস গেইল ও সুরেশ রায়নার কাছে পরপর দুই ম্যাচে বেধড়ক পিটুনি খাওয়ার পর নিজেকে কী বলেছিলেন? আপনি পরে বলেছিলেন যে ওই দুই ম্যাচে বেশি ফুল লেন্থে বল করে ফেলেছিলেন। এটা কীভাবে বুঝতে পারলেন? আর বুঝতে পারার পর সেটি নিয়ে কী কাজ করলেন?
রশিদ: প্রথমে কোচদের সাথে কথা বলি, এরপর ভিডিও অ্যানালিস্টের কাছে ওই দুই ম্যাচের ভিডিও দেখি। তখন আমি দেখলাম যে আমি বেশি ফুল লেন্থে বল করেছি। কোচেরাও এটা খেয়াল করেছিলেন, কিন্তু বলেছিলেন এটা নিয়ে দুশ্চিন্তার কিছু নেই। একটু বেশি ফুল বল করে ফেলেছিলাম, আর ব্যাটসম্যানেরা ভালো কানেক্ট করতে পেরেছিল। তাই আমি ভাবলাম, একটু ব্যাক অফ লেন্থে বল করে ব্যাটসম্যানেরা আমাকে আক্রমণ করতে অসুবিধায় পড়বে। এরপর অনুশীলনে কিছু স্পট বোলিং করলাম, তারপর মুম্বাইয়ের নেটে এসে গুড লেন্থে বল করার পরিকল্পনা করলাম।
সানরাইজার্সের কোন কোচের সাথে এসব নিয়ে কথা বলেছেন?
রশিদ: তিন কোচের সাথেই। টম মুডি, ভিভিএস ও মুরালি। সবাই আমাকে একই কথা বলেছে, যে ভালো মন্দ দিন সবারই আসে। আর এভাবেই একজন খেলোয়াড় শিখতে পারে। এরকম কিছু আমার সাথে এর আগে হয়নি, ফলে একদিক থেকে আমার জন্য ভালোই হয়েছে যে এর থেকে শিক্ষা নিয়ে ভবিষ্যতে কাজে লাগাতে পারবো। নেটে অধিনায়ক ও কোচেরা আমাকে সমর্থন দিয়েছেন। আমাকে আরেকটু শর্টার লেন্থে বল করার পরামর্শ দিয়েছিলেন, যাতে করে ব্যাটসম্যানদের আমাকে আক্রমণ করতে অসুবিধা হয়।
যারা আপনাকে আক্রমণ করেছেন দুজনই বাঁহাতি ব্যাটসম্যান। নেটে কি শিখর ধাওয়ান বা অন্য কোন বাঁহাতি ব্যাটসম্যানের বিপক্ষে বল করে নিজের স্ট্র্যাটেজি বদলেছেন এরপর?
রশিদ: বাঁহাতিদের বিপক্ষে আমি ভালো বল করিনি, এরকম কিছু আমার মনে হয়নি কখনো। আমার টার্গেট ছিল একটাই, স্পট বোলিং। আমি আত্মবিশ্বাসী ছিলাম, ঠিক জায়গায় বল ফেলতে পারলে কেউ আমার বলে রান তুলতে পারবেনা। এক দুই ম্যাচ কখনোই একজন বোলারকে খারাপ বোলার বানিয়ে দিতে পারেনা। ডানহাতি হোক বা বাঁহাতি, আমি শুধু ঠিক জায়গায় বল ফেলতে চাচ্ছিলাম। মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের বিপক্ষেই কিন্তু আমি ক্রুনাল পান্ডিয়াকে আউট করেছি।
পরিসংখ্যান বলে যে বাঁহাতি ব্যাটসম্যানের তুলনায় ডানহাতিদের বিপক্ষে আপনার রেকর্ড বেশ ভালো। এই ব্যাপারে কিছু ভাবেন?
রশিদ: আমি ডানহাতিদের বিপক্ষে বল করতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি। ডানহাতিদের বিপক্ষে রং’আনটা আরও বেশি ভালো হয়। তবে বাঁহাতিদের রং’আনে পরাস্ত করেও অনেক আনন্দ পাই। ব্যাটসম্যান বাঁহাতি না ডানহাতি ওসব ভেবে আমি আমার বোলিং বদলাই না।
টিভিতে বা ইউটিউবে অন্য কোন লেগস্পিনারের বোলিং দেখতে পছন্দ করেন?
রশিদ: শহীদ আফ্রিদি ও অনিল কুম্বলে, দুজনেরই প্রচুর বোলিং দেখেছি ইউটিউবে। কারণ তাঁরা দুজনেই বাতাসে বেশ জোরে এবং নিখুঁতভাবে বল করেন। আমি এখনো তাঁদের কিছু ভিডিও দেখি।
আইপিএল কিংবা অন্য টি-২০ লীগে খেলার সময় অন্য কোন লেগস্পিনারের সাথে কথা হয়েছে?
রশিদ: এখানে অনেকের সাথেই দেখা হয়, আলোচনা হয়। এইতো সেদিন ইশ সোধির সাথে দেখা। ওর সাথেও কথা হলো।