ফাইনালের প্রতিপক্ষ কে হচ্ছে, জানতে নিশ্চয়ই গতকাল টিভির পর্দায় চোখ রেখেছিলেন মাদ্রিদ ভক্তরা। মনে মনে কাকে চেয়েছিলেন তারাই ভালো বলতে পারবেন, তবে ফাইনালটা সমানে সমানে হওয়ার সব বন্দোবস্ত করে ফাইনালে উঠেছে ইয়ুর্গেন ক্লপের লিভারপুলই। সেমিফাইনালের দ্বিতীয় লেগে এএস রোমার কাছে ৪-২ গোলে হারলেও দুই লেগ মিলিয়ে ৭-৬ গোলের ব্যবধানে ১১ বছর পর চ্যাম্পিয়ন্স লীগের ফাইনালে উঠেছে ইংলিশ ক্লাবটি। সর্বশেষ উঠেছিল ২০০৭ সালে।
আর ফাইনাল পর্যন্ত এসেছেও একদম প্রতিপক্ষদের দুমড়ে মুচড়ে দিয়ে। চ্যাম্পিয়ন্স লীগের এক আসরে সবচেয়ে বেশি গোল করার মালিক এখন লিভারপুলই। বাছাইপর্ব ও মূল টুর্নামেন্ট মিলিয়ে এবারের আসরে লিভারপুল মোট গোল করেছে ৪৬ টি, ভেঙে দিয়েছে ১৯৯৯-২০০০ আসরে বার্সেলোনার ১৬ ম্যাচে ৪৫ গোল করার এতদিনের রেকর্ডটি।
৯ মিনিটের মাথায় সাদিও মানের প্রথম গোল দিয়েই বার্সেলোনার রেকর্ড স্পর্শ করে লিভারপুল। বার্সাকে ছাড়িয়ে যেতে প্রয়োজন ছিল আরও এক গোল, জর্জিনিও উইজনালডামের গোলে নিশ্চিত হয়েছে সেটিও।
নতুন রেকর্ড গড়তে বাছাইপর্ব মিলিয়ে লিভারপুলকে খেলতে হয়েছে ১৪ টি ম্যাচ। এর মধ্যে বাছাইপর্বের দুই ম্যাচে গোল করেছে ৬ টি, আর মূল পর্বের ১২ ম্যাচে ৪০ টি। মূল টুর্নামেন্টের গ্রুপ পর্বে মারিবর ও স্পার্তাক মস্কোকে ৭ টি করে গোল দিয়েছে অল রেডরা। রাউন্ড অফ সিক্সটিনের প্রথম লেগে পোর্তোকে দিয়েছে ৫ টি। কোয়ার্টার ফাইনালে আরেক ইংলিশ জায়ান্ট ম্যানচেস্টার সিটিকে দুই লেগ মিলিয়ে দিয়েছে ৫ গোল। আর সেমিফাইনালে রোমাকে দুই লেগ মিলিয়ে ৭ গোল। প্রতিপক্ষকে গোলবন্যায় ভাসিয়ে দেয়ার প্রতিজ্ঞা করেই যেন মাঠে নেমেছিল ক্লপের দল।
তবে শুধু মূল টুর্নামেন্টের গোল সংখ্যা বিবেচনায় নিলে এককভাবে শীর্ষে ওঠার জন্য ফাইনালে আরও দুই গোল করতে হবে লিভারপুলকে। ১৯৯৯-২০০০ মৌসুমের বার্সেলোনার কথা তো বলাই হলো, ২০১৩-১৪ আসরের রিয়াল মাদ্রিদ মাত্র ১৩ ম্যাচেই করেছিল ৪১ গোল। ১৬ ম্যাচে ৩৭ গোল নিয়ে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড আছে চতুর্থ স্থানে, আর গত আসরের শিরোপাজয়ী মাদ্রিদ দল ১৩ ম্যাচে ৩৬ গোল নিয়ে আছে পঞ্চম স্থানে। সেই হিসেবে মূল পর্বে কমপক্ষে ৪০ গোল করা মাত্র তৃতীয় দল লিভারপুল।
দলের পাশাপাশি রেকর্ড হয়েছে লিভারপুলের বিধ্বংসী ত্রয়ী সালাহ-ফিরমিনো-মানেরও। এবারের আসরে লিভারপুলের ৪৬ গোলের ২৯ টিই এসেছে এই তিনজনের পা থেকে, যা চ্যাম্পিয়ন্স লীগের এক আসরে কোন ত্রয়ীর সর্বোচ্চ গোলের রেকর্ড। এতদিন এই রেকর্ডের মালিক ছিল রিয়ালের বিবিসি ত্রয়ী, ২০১৩-১৪ মৌসুমে তিনজনে মিলে করেছিলেন ২৮ গোল।
২৯ গোলের মধ্যে সালাহ ও ফিরমিনো করেছেন সমান ১০ টি করে গোল, আর সেনেগালিজ ফরোয়ার্ড মানের পা থেকে এসেছে ৯ গোল। সাদিও মানের ব্যক্তিগত রেকর্ডও হয়েছে একটি। এবারই প্রথম চ্যাম্পিয়ন্স লীগে খেলছেন তিনি। প্রথমবার খেলতে এসেই ১০ ম্যাচে ৯ গোল করে ফেলেছেন, যেটি একটি রেকর্ড। নিজের প্রথম ১০ চ্যাম্পিয়ন্স লীগ ম্যাচে ৯ গোল করতে পারেন নি আর কোন ফুটবলার। এর আগের রেকর্ডটি যুগ্মভাবে দখলে ছিল হ্যারি কেইন ও সিমোনে ইনজাঘির দখলে। দুজনেই নিজেদের প্রথম ১০ ম্যাচে গোল করেছিলেন ৮ টি করে।
রেকর্ড হয়েছে আরও একটি। লিভারপুল-রোমা ম্যাচের দুই লেগ মিলিয়ে গোল হয়েছে মোট ১৩ টি, চ্যাম্পিয়ন্স লীগের ইতিহাসে আর কোন সেমিফাইনাল এত গোল দেখেনি। ১৩ গোলের মধ্যে লিভারপুল দিয়েছে ৭ টি, আর রোমা ৬ টি।
এদিকে দারুণ উত্তেজনাপূর্ণ ম্যাচ শেষে রেফারীদের দিকে অভিযোগের আঙুল তুলেছে রোমা। নিশ্চিত পেনাল্টি থেকে তাদের বঞ্চিত করা হয়েছে বলে দাবি ক্লাবটির। সাথে চ্যাম্পিয়ন্স লীগে ভিডিও অ্যাসিস্ট্যান্ট রেফারি ব্যবহার চালুর দাবিও জানিয়ে রেখেছেন ক্লাবটির চেয়ারম্যান ও পরিচালক।
সিরি আ’তে এরই মধ্যে ভিডিও অ্যাসিস্ট্যান্ট রেফারীর প্রয়োগ শুরু হয়েছে, তবে চ্যাম্পিয়ন্স লীগ সভাপতি আলেকজান্ডার ক্যাফেরিন এরই মধ্যে জানিয়ে দিয়েছেন, অন্তত আগামী মৌসুমেও প্রযুক্তিগত সহায়তা নিচ্ছেন না তাঁরা।
ম্যাচের দ্বিতীয়ার্ধে হ্যান্ডবল জনিত একটি পেনাল্টি না দেয়ার অভিযোগ রোমার। পেনাল্টিটি পেলে দুই লেগ মিলিয়ে ৭-৭ সমতায় আসতে পারতো ক্লাবটি। ক্লাবের চেয়ারম্যান জেমস পালোত্তার কণ্ঠে ঝরে পড়েছে ক্ষোভ, ‘চ্যাম্পিয়ন্স লীগে যে ভিডিও অ্যাসিস্ট্যান্ট রেফারি দরকার, তা এখন স্পষ্ট প্রমাণিত। আমি জানি রেফারীর জন্য সব সিদ্ধান্ত নেয়া কঠিন, কিন্তু এই পর্যায়ে এসে এভাবে বাদ পড়ে যাওয়াটা সত্যিই দুর্ভাগ্যজনক। শুধু পেনাল্টিই নয়, এটা লাল কার্ডও হওয়া উচিত ছিল। লিভারপুল তাহলে ৬৩ মিনিটেই দশজনের দলে পরিণত হতো। ফাইনাল নিশ্চিত করায় লিভারপুলকে অভিনন্দন, কিন্তু চ্যাম্পিয়ন্স লীগে প্রযুক্তির সহায়তা না নেয়া রীতিমত কৌতুক ছাড়া আর কিছু না।’